ঢাকা, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

আসামির অভিযোগে আইনজীবীকে গ্রেফতারে ক্ষোভ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২২
আসামির অভিযোগে আইনজীবীকে গ্রেফতারে ক্ষোভ

ঢাকা: একজন বিচারপ্রার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে আইনজীবীর নামে মামলা দিয়ে পুলিশে তুলে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত বুধবার (১২ অক্টোবর) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শফি উদ্দিনের আদালতে এ ঘটনা ঘটে।

 

ওই আইনজীবীর নাম মো. জুয়েল মুন্সি সুমন। মো. আবিরুল ইসলাম চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি এ আইনজীবীর নামে অভিযোগ করেন। অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণের জন্য কোতোয়ালি থানা কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেন আদালত। আর এজলাস কক্ষ থেকে আইনজীবীকে আটক করে পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হয়।  

বিচারপ্রার্থীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এজলাস থেকে আইনজীবীকে আটকের ঘটনাকে অস্বাভাবিক ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে বলে অভিহিত করেছেন অনেক আইনজীবী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তারা।  

অভিযোগ থেকে জানা যায়, আবিরুল ইসলাম চৌধুরীর নামে এক ব্যক্তির নামে তার স্ত্রী নওরীন ইমান ইরা ঢাকার সিএমএম আদালতে যৌতুকের মামলা দায়ের করেন। মামলার পরে গত ২৮ অক্টোবর আইনজীবী পরিচয় দিয়ে জুয়েল মুন্সি সুমন তাকে ফোন দিয়ে বলেন, আমি (আসামি) সহ পরিবারের আরও তিনজনের বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা দায়ের করা হয়েছে। সে মামলায় তিনজনকে বাদ দেওয়া যাবে, এজন্য জন প্রতি ৫০ হাজার টাকা করে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে। সে কথা অনুযায়ী আসামি বানানীর আরগিলা হোটেলে বসে নগদ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন এবং মামলা থেকে বাদ দেওয়া ম্যাজিস্ট্রেটের কাগজ সরবরাহ করেন এ আইনজীবী।  

এরপর দুজন বিচারককে ম্যানেজ করে মামলা থেকে খালাস করে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময়ে তিনি আরও টাকা নেন। সব মিলিয়ে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে তিনি চার লাখ ৬৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ করেন আবিরুল।

অভিযোগটি নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ডের জন্য চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে কোতোয়ালি থানায় পাঠানো হয়। এরপর সেই মামলায় আইনজীবী জুয়েল মুন্সি সুমনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।  

জানতে চাইলে ডিএমপির কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মামলাটি আদালত থেকে রুজু করার আদেশসহ আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। আমরা আদালতের নির্দেশ মোতাবেক মামলা রেকর্ড করে আসামিকে আবার আদালতে পাঠিয়েছি। আমরা আলাদা কিছু করিনি, শুধু আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করেছি।

আইনজীবীকে আটকের পর মুক্ত করতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল বলে জানান ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজুর রহমান মন্টু। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা একটু দেরিতে খবর পাই। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে আদালতে যাই। বারের পক্ষ থেকে আমরা আইনজীবীকে মুক্ত করতে চেষ্টা করেছি। সেখানে ঢাকার আদালতের সিনিয়র জজরা উপস্থিত ছিলেন। তারা বলেছেন, অভিযোগের সত্যতা হিসেবে একটি মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড ও টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের অনুরোধ সত্ত্বেও উনারা বলেছেন, যেহেতু অভিযোগ সুনির্দিষ্ট তাই তাকে ছেড়ে দেওয়া সম্ভব না। বারের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে এখন আগামী রোববার (১৬ অক্টোবর) আমরা জামিনের আবেদন করব।  

এদিকে ঘটনাটি জানাজানির পর আইনজীবীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, আইনজীবীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আইনগত কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। অভিযোগটি বার কাউন্সিল বা বার অ্যাসোসিয়েশনে পাঠানো উচিত ছিল।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক কোষাধ্যক্ষ ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী বলেন, এ আইনজীবীর বিরুদ্ধে যদি বিচারপ্রার্থীর অভিযোগ থাকে তাহলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সংশ্লিস্ট ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হোক। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার শাস্তি হবে। বিজ্ঞ আইনজীবীকে জামিনে মুক্তির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। আর ফি ছাড়া বিচারপ্রার্থী যদি কোনো অর্থ লেনদেন করে থাকেন, সেই বিচারপ্রার্থীকেও আইনের আওতায় আনা উচিত।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুন নূর দুলাল বলেন, বারের কোনো সদস্যের দ্বারা যদি বিচার বিভাগের সম্মানহানি হয়, তাহলে আইন নিজস্ব গতিতে চলবে। কিন্তু বক্রগতিতে চলবে না। এসব ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বার এবং বার কাউন্সিলকে শুনেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে আমি মনে করি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোখলেসুর রহমান বাদল বাংলানিউজকে বলেন, বার কাউন্সিলে কেউ সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ করেননি। বার কাউন্সিল তো সুয়োমুটো (স্বপ্রণোদিত ভাবে) কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না। ঘটনাটি আমাদের নজরে এসছে। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। এরপর আলোচনা করে করণীয় ঠিক করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২২
কেআই/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।