ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

ভারত টাকা ফেরাতে পারলে আমরা পারবো না কেন: হাইকোর্ট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২২
ভারত টাকা ফেরাতে পারলে আমরা পারবো না কেন: হাইকোর্ট

ঢাকা: ভারত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে বিদেশ থেকে টাকা ফেরত এনেছে। ভারত পারলে আমরা পারবো না কেন?

বুধবার (৩১ আগস্ট) বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মাসুদ বিশ্বাস আদালতে হাজির হলে তার উদ্দেশে এমন কথা বলেছেন হাইকোর্ট।

একই সঙ্গে কার্যকর অর্থপাচার প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বিএফআইইউকে একটি ‘গবেষণা সেল’ গঠন করতে বলেছেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

এছাড়া বিএফআইইউ কোন কোন দেশের কাছে অর্থপাচার ও পাচারকারীদের তথ্য চেয়েছে, কী তথ্য পেয়েছে, তথ্য পেয়ে থাকলে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে এবং পাচার করা অর্থ উদ্ধারে কী পদক্ষেপ নিয়েছে— এসব বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে আগামী ২৬ অক্টোবর পর্ববর্তী আদেশের জন্য দিন রেখেছেন আদালত।

আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

গত ১০ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়ার্ড বলেন, সুইস ব্যাংকে জমা রাখা অর্থের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির জন্য তথ্য চায়নি। সুইস ব্যাংকের ত্রুটি সংশোধনে সুইজারল্যান্ড কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে আমি আপনাদের জানাতে চাই, সুইজারল্যান্ড কালো টাকা রাখার কোনো নিরাপদ ক্ষেত্র নয়।

সুইস রাষ্ট্রদূত বলেন, গত বছর সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশ থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা জমা হয়েছে। তবে উভয় দেশের সম্মতিতে ব্যাংকিং তথ্য লেনদেন হতে পারে এবং সেটা সম্ভবও। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।

এরপর ১১ আগস্ট বিষয়টি নজরে নিয়ে সুইস ব্যাংকে অর্থ জমাকারীদের তথ্য কেন জানতে চাওয়া হয়নি, তা রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) জানাতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বলেন হাইকোর্ট।

এরপর আদালতে দুদক এবং বিএফআইউর পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ হলফনামা আকারে তথ্য দাখিল করা হয়। ওই হলফনামায় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় বিএফআইউ প্রধানকে তলব করা হয়। সেই তলবে বুধবার হাজির হন মাসুদ বিশ্বাস।

হাজির হয়ে মাসুদ বিশ্বাস আদালতের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অসাবধানতাবশত এমনটি হয়েছে। আদালতে খসড়া প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে। আজ যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রতিবেদন দাখিল করেছি। এমন ভুলের যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সে জন্য অঙ্গীকার করছি।

এ সময় আদালত বলেন, আদালতে আদেশ বাস্তবায়ন প্রতিবেদন পাঠানোর ক্ষেত্রে আরও সতর্কতার সাথে পাঠানো উচিত। এর থেকে আমাদের সবারই বেরিয়ে আসা উচিত।

এ সময় বিএফআইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস ক্ষমা চাইলে আদালত এ কর্মকর্তাকে সতর্ক করে বলেন, ঠিক আছে ক্ষমা করলাম। ভবিষ্যতে এমন হলে কঠোর পদক্ষেপ নেবো।

বিএফআইইউ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশের এফআইইউ ও এগমন্ট গ্রুপের কাছে ৬৭ জনের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। আদালত এ প্রতিবেদন দেখে বিএফআইইউ প্রধানের কাছে জানতে চান, ৬৭ জনের নাম কীভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। জবাবে মাসুদ বিশ্বাস বলেন, মিডিয়া এবং অন্যান্য এজেন্সি থেকে আমরা তথ্য সংগ্রহ করেছি।

তখন আদালত বলেন, আপনার কাছে তো নির্ভুল তথ্য নাই। অনুমানের ভিত্তিতে আদালতে তথ্য দেওয়া যাবে না। আমাদের মনে হয়েছে ৬৭ জনের নাম অনুমানের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে। এর কমও হতে পারে বেশিও হতে পারে।

মাসুদ বিশ্বাস ফের বলেন, বিভিন্ন ডেটা বিশ্লেষণ করে এই নামগুলো আমরা পেয়েছি।

অর্থ পাচারকারীদের নাম এবং টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য বিএফআইইউ কোনো দেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বা যোগাযোগ করেছে কিনা, আদালতের এ প্রশ্নে কোনো জবাব দেননি মাসুদ বিশ্বাস।

অর্থ পাচার প্রতিরোধ সংক্রান্ত ভারতের ‘রামজিৎ মালানি বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া’ মামলার রায় পড়ার পরামর্শ দিয়ে বিএফআইইউ প্রধানের উদ্দেশে আদালত বলেন, কেবল চিঠি চালাচলিই (বিভিন্ন দেশের এফআইইউকে) যথেষ্ট নয়। আইনের মধ্যে যথাযথ প্রক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ না করলে ৫০ বছরেও পারবেন (অর্থ পাচার ও পাচারকারীদের তথ্য) না।  

তখন মাসুদ বিশ্বাস বিএফআইইউ’র কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, ২০১৭ থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দুদক, এনবিআর এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এ পর্যন্ত ৯৮৩টি ইন্টিলিজেন্স প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।

মাসুদ বিশ্বাস বলেন, বিদেশে ৬৪৪টি অনুরোধ পেয়েছি। ১২৮টি রিসিভ করেছি। ৭৯ বার এফআইইউ টু এফআইইউ যোগাযোগ হয়েছে।

তখন আদালত এফআইইউ টু এফআইইউ চুক্তি হওয়া উচিত বলে অভিমত দিয়ে বলেন, ভারত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে ৭৮৪ জনের টাকা ফেরত এনেছে। ভারত পারলে আমরা কেন পারবো না? কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন আমাদের জানান। গবেষণা সেল তৈরি করেন। সেল তৈরি করে আমাদের জানান। দেশের স্বার্থে আপনাকে ডেকেছি। আমরা যা করি দেশ-জনগণের কল্যাণে করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২২
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।