ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

আবরার হত্যার দুই বছর: নভেম্বরেই রায়ের প্রত্যাশা

খাদেমুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০২১
আবরার হত্যার দুই বছর: নভেম্বরেই রায়ের প্রত্যাশা আবরার ফাহাদ

ঢাকা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দুই বছর পূর্ণ হচ্ছে বুধবার (৬ অক্টোবর)।  

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর দিনগত রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেন।

 

ওই ঘটনায় হওয়া মামলায় দ্রুততার সঙ্গে চার্জশিট দাখিলের পর বিচার শুরু হয়। করোনা পরিস্থিতিতে আদালতে দীর্ঘ ছুটির কারণে বিচার কার্যক্রম কিছুটা ধীর গতিতে আগায়।  

২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এই মামলায় অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। এরপর এক বছরের বেশি সময় পেরিয়েছে।  

দ্রুততার সঙ্গে এগোলেও করোনায় ছুটিতে আদালত বন্ধ থাকায় শেষ হয়নি বিচারকাজ। তবে সাক্ষ্য শেষে মামলায় এখন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নভেম্বরের মধ্যেই যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের প্রত্যাশা করছেন।  

এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আব্দুল্লাহ ভূঞা মঙ্গলবার বাংলানিউজকে বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবে আদালতের দীর্ঘ ছুটি সত্ত্বেও এই মামলার বিচারে খুব একটা প্রভাব পড়েনি। বিচার এখন শেষ পর্যায়ে।  

তিনি বলেন, গত ২০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে ট্রাইব্যুনালের বিচারক করোনা আক্রান্ত হওয়ায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন এক মাস পিছিয়ে যায়। আগামী ২০ অক্টোবর বিচারকাজ শুরু হলে নভেম্বরের মধ্যেই এই মামলার রায় হবে বলে আমরা আশা করছি।  

বিচারকাজে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমরা আদালতে সাক্ষী হাজির করেছি। যেভাবে বিচারকাজ এগোচ্ছে, তাতে এই মামলা ন্যায়বিচারের জন্য একটি মাইলফলক হবে আমরা প্রত্যাশা করি।  

দ্রুততার সঙ্গে বিচারকাজ সম্পন্ন করতে আসামিপক্ষও আদালতকে সহায়তা করেছেন বলে দাবি আইনজীবী ফারুক আহাম্মদের। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনার আকস্মিকতায় আবরার হত্যাকাণ্ড ঘটে। এখানে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল না। তথাপি এই মামলায় ন্যায়বিচারের স্বার্থে আমরা আদালতকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছি। মামলায় অনেক আসামি থাকার পরও প্রতিদিন দুই-তিনজন করে সাক্ষীকে আমরা জেরা করেছি, তাই বিচারে গতি পেয়েছে। আমরাও প্রত্যাশা করছি ন্যায়বিচার হবে।  

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরের দিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ। ওই বছরের ১৩ নভেম্বর ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক ওয়াহেদুজ্জামান।  

এই মামলার তদন্ত চলাকালে অভিযুক্ত ২৫ আসামির মধ্যে ২১ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা হলেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিওন, উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, উপআইন সম্পাদক অমিত সাহা, শাখা ছাত্রলীগ সদস্য মুনতাসির আল জেমি, মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির ও ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত এবং এস এম মাহমুদ সেতু। পরে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্তদের সংগঠন থেকে তাদের বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ।

গ্রেফতার ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু ছাড়া বাকি সবাই এজাহারভুক্ত আসামি।

মামলার আট আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তারা হলেন ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মনিরুজ্জামান মনির ও এএসএম নাজমুস সাদাত।

মোর্শেদ অমত্য ইসলাম নামের পলাতক এক আসামি পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান।

তাই এখন পলাতক রয়েছেন আর তিনজন আসামি। তারা হলেন মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এর মধ্যে মোস্তবা রাফিদের নাম এজাহারে ছিল না।

চার্জশিট দাখিলের পর ২০২০ সালের ১৫ ম‌ার্চ মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব‌্যুনাল-১-এ স্থানান্তরের আদেশ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে আইন মন্ত্রণালয়। এরপর ১৮ মার্চ ওই আদালতে মামলাটি বদলির আদেশ দেন মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ।  

করোনায় প্রথম দফা ছুটি শেষে ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ২৫ আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। এরপর মামলাটিতে ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।  

গত ১৪ মার্চ এ মামলায় কারাগারে থাকা ২২ আসামি আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। অপর তিন আসামি পলাতক থাকায় আত্মপক্ষ শুনানি করতে পারেনি। এরপর কয়েকজন আসামি নিজেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্যও দেন।  

গত ৭ সেপ্টেম্বর মামলার চার্জে কিছু ত্রুটি থাকায় রাষ্ট্রপক্ষ মামলাটি পুনরায় চার্জগঠনের আবেদন করেন। পরদিন আদালত ২৫ আসামির বিরুদ্ধে পুনরায় চার্জগঠন করে ১৪ সেপ্টেম্বর আত্মপক্ষ শুনানির তারিখ ধার্য করেন। ওই দিন আত্মপক্ষ সমর্থন শেষে দুই কার্যদিবস রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। এরপর বিচারকের অসুস্থতার কারণে শুনানি এক মাস পিছিয়ে যায়।  

বালাদেশ সময়: ০২৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৬, ২০২১
কেআই/জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।