ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

জামায়াত নেতাদের রিমান্ড শুনানিতে যা বললেন আইনজীবীরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২১
জামায়াত নেতাদের রিমান্ড শুনানিতে যা বললেন আইনজীবীরা

ঢাকা: জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরোয়ারসহ ৯ জনের রিমান্ড শুনানিতে বিপুলসংখ্যক আইনজীবী আসামিপক্ষে উপস্থিত হন। শুনানির সময় তারা আদালতে হট্টগোলও করেন।

মঙ্গলবার (০৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা আক্তারের আদালতে রিমান্ড শুনানি হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন। এ সময় তিনি জামায়াতকে স্বাধীনতাবিরোধী বলায় আসামিপক্ষের একাধিক আইনজীবী ‘শেইম শেইম’ বলে চিৎকার করতে থাকেন।

শুনানিতে আব্দুল্লাহ আবু বলেন, আসামিরা জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিকে সুসংগঠিত করার নামে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার পাশাপাশি নাশকতার ঘটনা ঘটানোর চেষ্টায় লিপ্ত। আরো তথ্য উপাত্ত উদ্ধার ও মামলার তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।

আসামিপক্ষে আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক, শিশির মনির, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহ-সভাপতি এমডি গোলাম রহমান ভুইয়া, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম কামাল উদ্দিন তাদের রিমান্ড আবেদন বাতিলসহ জামিনের আবেদন করেন।

আসামিপক্ষে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি এস এম কামাল উদ্দিন আদালতে জামায়াতের গঠনতন্ত্র পড়ে শুনান।

শুনানিতে তিনি বলেন, মামলার জব্দ তালিকায় যা লেখা আছে তাতে রিমান্ড হয় না। ল্যাপটপ এবং মোবাইল ফোন কোনো নিষিদ্ধ ঘোষিত জিনিস নয়। শুধু জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা ও দায়িত্ব পালন করার ফলে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হয়রানি করতে তাদের এই মামলায় আসামি করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নাই। তাই তাদের রিমান্ড বাতিলপূর্বক জামিনের প্রার্থনা করছি।

তিনি আরও বলেন, মিয়া গোলাম পরোয়ার ও হামিদুর রহমান আজাদ সাবেক সংসদ সদস্য। রফিকুল ইসলাম খানসহ কয়েকজনের বয়স ৮০ বছর। সার্বিক বিবেচনায় তাদের রিমান্ড বাতিল করে প্রয়োজনে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।

এস এম কামাল উদ্দিন বলেন, রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে নামঠিকানা যাচাই করার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। অথচ মামলার আবেদন ও রিমান্ডের আবেদনে সকলের বিস্তারিত নাম ঠিকানা দেওয়া আছে। আসামিদের কাছে কোনো নিষিদ্ধ জিনিস পাওয়া যায় নাই। ল্যাপটপ,  মোবাইল তো কোনো নিষিদ্ধ জিনিস নয়।

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পরীমনি ইস্যু শেষ, এখন তো নতুন ইস্যু দরকার। জামায়াতে ইসলামী সকলের সঙ্গে মাঠে আন্দোলন করেছে। যখন যার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে তখন তারা ক্ষমতায় থেকে জামায়াতকে স্বাধীনতাবিরোধী নিষিদ্ধ বলার চেষ্টা করেছে।

এরপর আইনজীবী শিশির মনির তার শুনানিতে বলেন, মামলার এজাহারে এবং রিমান্ডের ফরোয়ার্ডিংয়ে বলা হয়েছে আসামিরা সরকার উৎখাতে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিলেন। জামায়াতে ইসলামী কোনো নিষিদ্ধ সংগঠন নয়। জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হিযবুত তাহরিরসহন যে পাঁচটি সংগঠন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে তাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর নাম নেই। তাদের কোনো কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ নয়। তারা একসময় এই এ দেশের সরকারের অংশ ছিল। এখানে একাধিকবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য আছেন। তাদের বিষয়টি বিবেচনায় আনা উচিদ। তাদের মতো লোক মিটিং বা সভা করতে পারেন তাতে কোনো বাধা নাই।

তিনি আরও বলেন, রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে আসামিদের সঠিক নাম ঠিকানা যাচাই করা প্রয়োজন। আবার প্রত্যেক আসামির বর্তমান স্থায়ী ঠিকানা বিস্তারিতভাবে লেখা হয়েছে একই কাগজে। এসময় তিনি ওই রিমান্ড আবেদনের কপি আদালতে উপস্থাপন করেন। শুধু জামায়াতে ইসলামী করায় আসামিদের সবাইকে ১০ রিমান্ডে নিতে আবেদন করা হয়েছে।  

তিনি বলেন, আমরা যারা এখানে আছি তারা সবাই জামায়াতে ইসলাম করি। তারা সবাই এই সংগঠনকে টাকা দেই, কন্ট্রিবিউট করি, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই কন্ট্রিবিউট করে যাব। আমাদের সবাইকে রিমান্ডে নেওয়া হোক। তাদের যদি অন্যায়ভাবে রিমান্ডে নেওয়া হয় তাহলে আমরা সবাই রিমান্ডে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।

এ সময় উপস্থিত অনেক আইনজীবী তার বক্তব্য সমর্থন করেন।

শুনানি শেষে বিচারক তাদের চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। পরে হট্টগোলের জন্য আইনজীবীদের পক্ষে আব্দুর রাজ্জাক আদালতের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

রিমান্ডে যাওয়া অপর আসামিরা হলেন—জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আবদুর রব, অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ ও মোবারক হোসাইন এবং ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত।

সোমবার (০৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার দিকে রাজধানীর একটি বাসা থেকে তাদের আটক করা হয়।

পরে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা বিঘ্নিত ও শেখ হাসিনার সরকারকে অবৈধভাবে উৎখাতের জন্য গোপন বৈঠক করছিলেন। এ সময় তাদের গ্রেফতার করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০২১
কেআই/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।