ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

‘মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ দরকার’

স্পেশাল করেসপরেন্ডন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০২১
‘মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণ দরকার’

ঢাকা: মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রশিক্ষণের দরকার আছে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে কথা বলতে বলেছেন।

নেত্রকোনায় দুই শিশুকে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে দণ্ড দেওয়ার ঘটনায় করা আবেদনের শুনানিতে বৃহস্পতিবার (০৫ আগস্ট) এমন মন্তব্য করেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের একক ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চ।

বুধবার একটি জাতীয় দৈনিকে ‘বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনে দুই শিশুকে দণ্ড’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে দণ্ডিত দুই শিশুকে তাৎক্ষণিক মুক্তি দিতে এ আবেদন করেন আইনজীবী শিশির মনির।

পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনে দুই শিশুকে এক মাসের দণ্ডাদেশ দিয়েছেন নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুলতানা রাজিয়া।

গত রোববার রাতে আটপাড়ায় সুলতানা রাজিয়া তার নিজ কার্যালয়ে ওই দণ্ডাদেশ দেন। একই সঙ্গে শিশু দুটিকে গাজীপুরে অবস্থিত শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক–বালিকা) পাঠানোর নির্দেশ দেন। শিশু দুটির বাড়ি আটপাড়া উপজেলার দুওজ ইউনিয়নে। তাদের মধ্যে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েটির বয়স ১৫ বছর (জেএসসির নিবন্ধন কার্ড অনুযায়ী)। ছেলেটিও সমবয়সী।

এদিকে বুধবার সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানান, নেত্রকোনায় শিশুদের সাজা দেওয়ার বিষয়টি নজরে আনার পর সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম দুই শিশুকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে নির্দেশ দিয়ে নেত্রকোনার ডিসিকে অবহিত করার জন্য নির্দেশ দেন। আমি নেত্রকোনা ডিসিকে টেলিফোনে আদালতের আদেশের বিষয়টি অবগত করি। তিনি জানান ওই দুই শিশুকে ইতোমধ্যে আপিল শুনানি করে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিষয়টি আদালতের কার্যতালিকায় আসে। এ সময় যুক্ত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির। ব্ল্যাস্টের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম রেজাউল করি।

শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘উনি (রাজিয়া) খবর পেয়েছেন বাল্যবিবাহ হচ্ছে। এটি প্রতিরোধ করার জন্য উনি ব্যবস্থা নিয়েছেন। এটি নিতেই পারেন। কিন্তু দেখা গেল, বর-কনেকে সাজা দিয়ে দিয়েছেন। ’

এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার বলেন, ‘বাল্যবিবাহ আইনের ৭ ধারায় আছে, যারা বিবাহ করবে, তাদের শাস্তি দেওয়া যাবে। আর ৮ ধারায় আছে, যারা বাল্যবিবাহ করাবেন, তাদের বিষয়ে বলা আছে। ’

আদালত বলেন, ‘বাল্যবিবাহ করলে আদালত উপযুক্ত সাজা দেবেন। যেহেতু রায় আছে। শিশু আইনেও এটি করতে পারবে না। ’

তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘বাল্যবিবাহ আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথা রয়েছে। ’

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আইনটি করা হয়েছে বাল্যবিবাহ রোধে, যাতে শিশুরা বাল্যবিবাহ না করে। এটি তো বিশেষ আইন। ’

আদালত বলেন, ‘বাল্যবিবাহ ঠিক আছে, শিশুদের সাজা দেওয়া যাবে, আইনে বলে দেওয়া হলো। বাল্যবিবাহ আইন না শিশু আইন প্রাধান্য পাবে?’

আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে করে বলেন, ‘আপনি আছেন ভালোই হয়েছে। আমি যতটুকু নিউজে পড়েছি, তাতে দেখা যায় যে ম্যাজিস্ট্রেট সুলতানা রাজিয়া তার চেম্বারে বসে আদেশ দিয়েছেন, এটা কি মোবাইল কোর্ট দিতে পারেন?’

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘প্রক্রিয়াগত বিষয় নিয়ে বলছি না। ’

তখন আদালত বলেন, ‘প্রক্রিয়া নয়, সবটাই আপনাকে দেখতে হবে। আপনি অ্যাটর্নি জেনারেল, আইন কোথায় ও কীভাবে প্রয়োগ হচ্ছে, তা দেখতে হবে। ’

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমি তো এটা জানি না। কেউ এটা আমার কাছে  পাঠায়নি। এটি স্পটে করতে হবে, চেম্বারে করতে পারবেন না। ’

তখন আদালত বলেন, ‘মোবাইল কোর্ট হচ্ছে অন দ্য স্পট। স্পটে করতে হবে অন অ্যাডমিশন। এটি চেম্বারে বসে করার সুযোগ নেই, থানায় বসে করার সুযোগ নেই। কিন্তু এটি শুধু এই ঘটনার (দুই শিশু) ক্ষেত্রে নয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে। আমরা পত্রপত্রিকায় দেখি হয়তো ঘটনা ঘটেছে, হয়তো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু দেখা যায় যে, ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব ঘটনার দুই-তিন দিন পর গিয়ে মোবাইল কোর্টে সাজা দিচ্ছেন। ’

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এটি তো পারবেন না। ’

পরে অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটছে। সুতরাং এগুলো আপনার সরকারি পর্যায়ে বলেন। যখন ম্যাজিস্ট্রটদের ফাউন্ডেশন ট্রেনিং হয়, ভ্রাম্যমাণ আদালত কীভাবে পরিচালিত হবে, যত দিন তাদের কাছে ক্ষমতা, সুতরাং কীভাবে চর্চা করবে, এটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ’

এক পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘কথা বলব। ’ আদালত বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে বলেন। ’

তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সচিবের সঙ্গে কথা বলব। ’ আদালত বলেন, ‘এটা ট্রেনিংয়েরও দরকার আছে। এমন অনেক ঘটনা গত কয়েক মাসে কিন্তু দেখেছি পত্রিকায়। এ জন্য নজরে আনলাম। ’

পরে ২৬ আগস্টের মধ্যে আটপাড়ার ওই ম্যাজিস্ট্রেটের ব্যাখ্যা আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেন আদালত।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০২১
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।