ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

তিন মামলায় সাহেদ করিম কারাগারে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২১
তিন মামলায় সাহেদ করিম কারাগারে সাহেদ করিম

সিলেট: করোনা চিকিৎসায় প্রতারণার দায়ে গ্রেফতার আলোচিত সাহেদ করিমকে এবার চেক ডিজঅনারের তিন মামলায় সিলেটের আদালতে হাজির করে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আরেকটি প্রতারণার মামলায় তদন্ত করে পুলিশকে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে চেক ডিজঅনারের তিন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠান।

বাদী পক্ষের আইনজীবী সিলেট অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, সাহেদের বিরুদ্ধে সিলেটের আদালতে চেক ডিজঅনারের তিনটি মামলা দায়ের করেছিলেন পাথর ব্যবসায়ী শামসুল মাওলা।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, সাহেদ করিমের কাছে ব্যবসায়ী শামসুল মাওলা ৩০ লাখ ৫০ হাজার টাকা পাওনা ছিলেন। সেই পাওনা টাকার বদলে সাহেদ করিম ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকার তিনটি চেক দিলেও সেগুলো ব্যাংক থেকে ডিজঅনার হয়ে ফেরত আসে।

আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট মো. আবদুস সাত্তার এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এ নিয়ে সাহেদের বিরুদ্ধে সিলেটের আদালতে চারটি মামলা দায়ের করা হলো। এর আগেও তিনটি মামলা দায়ের করেছিলেন ব্যবসায়ী শামসুল মাওলা। ১০ লাখ টাকার একটি ভুয়া চেক দিয়ে (চেক নম্বর- ৯০২৬৪৬৩০) শামসুল মাওলার কাছ থেকে পাথর কিনে নেন সাহেদ। পরবর্তী সময়ে ওই চেকটি অন্য একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রতীয়মান হয়।  

এ কারণে আরেকটি প্রতারণা, জালিয়াতি ও আত্মসাৎ মামলা দায়ের করেন এ ব্যবসায়ী। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে তদন্তপূর্বক দ্রুত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। গত বছরের ৪ মার্চ সাহেদের বিরুদ্ধে সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকার চেকের বিপরীতে তিনটি প্রতারণা মামলা দায়ের করেন এ ব্যবসায়ী।  

গত ৮ নভেম্বর সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতের ওই মামলার শুনানিতে বিবাদী পক্ষের আইনজীবী সাহেদের জামিনের আবেদন করলে বিচারক হারুনুর রশিদ সাহেদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

এ বিষয়ে ব্যবসায়ী শামসুল মাওলা বলেন, ঢাকায় গিয়ে সাহেদের সঙ্গে দেখা করলে পদ্মাসেতু প্রকল্পের জন্য পাথর সরবরাহের বড় একটি কাজ পাইয়ে দেবেন বলে তাকে আশ্বাস দেন। ওই সময় সাহেদ নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর পিএস বলেও পরিচয় দেন। এক পর্যায়ে তার কথায় বিশ্বাস করে ৩০ লাখ টাকার পাথর সরবরাহের চুক্তি করেন সাহেদ।  

পরে ঢাকায় বিল আনতে গেলে তাকে ১০ লাখ টাকা করে ৩০ লাখ টাকার তিনটি চেক ধরিয়ে দেন সাহেদ। পরদিন ব্যাংকে চেক ডিজঅনার হলে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে শামসুল মাওলার। চেকগুলো তার নিজের অ্যাকাউন্টেরই নয়, ব্যাংকে গিয়ে প্রমাণ পান। সুর পাল্টে দেন সাহেদও। উল্টো তাকে গালিগালাজ করেন। এরপর অসংখ্যবার টাকার জন্য ঢাকায় গিয়ে সাহেদের অফিসে গিয়েও খালি হাতে ফিরে আসেন।  

অবশেষে রিজেন্ট হাসপাতাল করোনার ভুয়া সনদ দিয়ে লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা সাহেদ গ্রেফতারের পর আদালতের শরণাপন্ন হন শামসুল মাওলা। এরপর গত বছরের ৪ মার্চ সিলেটের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে সাহেদের বিরুদ্ধে প্রতারণার দায়ে ২৫ লাখ টাকার আলাদা তিনটি মামলা দায়ের করেন।  

গত বছরের ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে বেরিয়ে আসে করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট, অর্থ আত্মসাৎসহ প্রতারণার বিষয়টি। পরে রোগীদের সরিয়ে রিজেন্টের উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে দেওয়া হয়। অভিযানের খবরে পালিয়ে যান সাহেদ। গত বছরের ১৫ জুলাই সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত এলাকা থেকে রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদ র‌্যাবের জালে ধরা পড়েন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২১
এনইউ/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।