ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

১০ বছরে পারিবারিক সহিংসতা আইনে কোনো মামলা হয়নি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০২০
১০ বছরে পারিবারিক সহিংসতা আইনে কোনো মামলা হয়নি

ঢাকা: ২০১০ সালে পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন প্রণীত হলেও ভোলা ও শেরপুরসহ দেশের অনেক জেলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ১০ বছরেও এই আইনের অধীনে কোনো মামলা দায়ের হয়নি।

বুধবার (২ ডিসেম্বর) একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত ‘১৬ দিনব্যাপী নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ২০২০’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত ‘পারিবারিক সহিংসতা: ন্যায় বিচার ও আইনি প্রতিকারের প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক অনলাইন গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকরা এসব কথা বলেন।

 

গোলটেবিলে একশনএইড বাংলাদেশ কর্তৃক গত অক্টোবর মাসে পরিচালিত একটি সমীক্ষায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয় বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায় একশন এইড।

এ বছর একশনএইড বাংলাদেশ “নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করুন, এখনই!” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ‘১৬ দিনব্যাপী নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ২০২০’ পালন করছে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের লক্ষ্যকে চ্যালেঞ্জ করে প্রতি বছর ২৫ নভেম্বর, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা দূরীকরণের দিবস থেকে শুরু করে ১০ ডিসেম্বর, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পর্যস্ত ‘১৬ দিনব্যাপী নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ’ ক্যাম্পেইনটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উদযাপন করা হয়।

প্রধান আলোচক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও এই সমীক্ষায় নেতৃত্বেদানকারী তাসলিমা ইয়াসমিন বলেন, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইনটির দুর্বল প্রয়োগের পেছনে সংশ্লিষ্ট আইন সম্পর্কে প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে। এই আইনে পারিবারিক সম্পর্কের সংজ্ঞায় ভুক্তভোগী নারীর বিয়ে-বিচ্ছেদ হয়ে গেলে তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না এবং এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিপীড়ক স্বামীরা সহজেই আইনের ফাঁক গলে বের হয়ে যায় বলে জানান তাসলিমা ইয়াসমিন।  

এছাড়াও, পারিবারিক সহিংসতার শিকার ভুক্তভোগীদের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র বা সামাজিক সহায়তার সুযোগ সহজলভ্য না থাকাসহ বেশ কিছু বিষয় তার বক্তব্যে উঠে আসে।

নারীরা যদি সচেতন না হয়, শুধুই আপোষ করে চলে তাহলে নারী নির্যাতন কখনোই কমবে না বলে মন্তব্য করেন গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম। পারিবারিক সম্মানের বিষয় চিন্তা করে অনেকেই মামলা করতে চান না বলে জানান নাছিমা বেগম।

প্রত্যেক জেলায় মানবাধিকার কমিশনের শাখা থাকা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন সংসদ সদস্য আরমা দত্ত। প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়ের স্ট্যান্ডিং কমিটি আছে, সেখানে সিভিল সোসাইটিসহ উন্নয়ন সংস্থাকে যুক্ত করে কাজ করলে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন আরমা দত্ত।   

পারিবারিক সহিংসতা আইনের সংশোধনীর পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা জরুরি। এই আইন সম্পর্কে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিকে প্রাথমিক তথ্য দিতে মাঠকর্মী ও বিভিন্ন সংস্থাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি নির্যাতীত ব্যক্তিকে মনোঃসামাজিক কাউন্সেলিং প্রদান করা উচিত বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারা হোসেন।

১০ বছর আগে পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন প্রণীত হলেও এই আইনের কার্যকারীতা দেখার জন্যই এই সমীক্ষা বলে জানান একশন এইড বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির। তিনি এই আইনকে আরোও বেশি কার্যকর করতে আইন বিশেষজ্ঞদের সুপারিশও কামনা করেন। পারিবারিক সহিংসতা আইন সম্পর্কে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের জায়গায় ব্যপক কাজ করতে হবে বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। যে কোনো দেশের অর্ধেকের বেশি জনগোষ্ঠীকে পেছনে রেখে উন্নয়ন সম্ভব নয় বলেও মনে করেন ফারাহ্ কবির।  

এছাড়াও গোলটেবিল বৈঠকে আরোও বক্তব্য রাখেন, রিসার্চ ইনিসিয়েটিভস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক মেঘনা গুহঠাকুর, স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতির ম্যানেজার কোহিনূর বেগম, সাংবাদিক শাহনাজ মুন্নী, ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের স্পেশাল পুলিশ সুপার রুমানা আক্তার।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০২০
এসই/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।