ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

রায়হান হত্যা: ৫ দিনের রিমান্ডে কনস্টেবল হারুন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২০
রায়হান হত্যা: ৫ দিনের রিমান্ডে কনস্টেবল হারুন আদালত চত্বরে কনস্টেবল হারুনুর রশিদ

সিলেট: রায়হান উদ্দিন (৩০) হত্যা মামলায় গ্রেফতার পুলিশ কনস্টেবল (বরখাস্তকৃত) হারুনুর রশিদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
 
শনিবার (২৪ অক্টোবর) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে সিলেট মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় আদালতের বিচারক শারমিন খানম নীলা এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।


 
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই’র পরিদর্শক মহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বরখাস্তকৃত কনস্টেবল হারুনুর রশিদকে রায়হান হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে অত্র আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করি। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
 
এর আগে গত শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) রাতে বরখাস্তকৃত কনস্টেবল হারুনুর রশিদকে পুলিশ লাইন থেকে নিয়ে গ্রেফতার দেখানো হয়। গত ২০ অক্টোবর এ মামলায় বরখাস্ত হওয়া কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকেও গ্রেফতার দেখিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
 
এদিন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সিলেটের পুলিশ সুপার খালেদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, এ নিয়ে মামলায় দু’জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তথ্য উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে পর্যায়ক্রম জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করা হবে।
 
গত ১১ অক্টোবর ভোর রাতে রায়হানকে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করা হয়। পরে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সকাল ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে তার মৃত্যু হয়।
 
রায়হান ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে মারা গেছেন পুলিশের তরফ থেকে দাবি করা হলেও নিহতের পরিবার ও স্বজনদের অভিযোগ ছিল পুলিশ ধরে নিয়ে ফাঁড়িতে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করেছে।
 
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরিবারের অভিযোগ ও মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের তদন্ত দল ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যুর সত্যতা পেয়ে জড়িত থাকায় ইনচার্জ আকবরসহ চার পুলিশকে বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করেন। বরখাস্তকৃতরা হলেন- বন্দরবাজার ফাঁড়ির কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটু চন্দ্র দাস। প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন- সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেন। তবে ঘটনার পর অন্য ছয়জন পুলিশ হেফাজতে থাকলেও আকবর পলাতক রয়েছেন।
 
পরবর্তীতে মামলাটি পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে তদন্ত করছে পিবিআই। গত ১৪ অক্টোবর তদন্তভার পাওয়ার পর পিবিআইর টিম ঘটনাস্থল বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি, নগরের কাস্টঘর, নিহতের বাড়ি পরিদর্শন করে। গত ১৫ অক্টোবর মরদেহ কবর থেকে তোলে পুনঃময়নাতদন্ত করে পিবিআই।
 
নির্যাতনে নিহত রায়হান উদ্দিনের ১১১ আঘাতের চিহ্ন উঠে এসেছে ফরেনসিক রিপোর্টে। লাঠি দ্বারা করা এসব আঘাতের ৯৭টি লীলাফোলা আঘাত ও ১৪টি ছিল জখমের চিহ্ন। আর অতিরিক্ত আঘাতের কারণে শরীরের ভেতর রগ ফেটে গিয়ে রক্তক্ষরণে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে।  

এ ঘটনায় গত সোমবার (১৯ অক্টোবর) আদালতে ১৬৪ ধারায় সাক্ষ্য দেন তিন পুলিশ সদস্য সাইফুল, দেলোয়ার ও শামীম। পরবর্তীতে গত ২০ অক্টোবর পুলিশ লাইনে বরখাস্ত থাকা কনস্টেবল টিটুকে গ্রেফতার দেখিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই।
 
তবে ঘটনার মূলহোতা সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির বরখাস্তকৃত ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়া এখনও পলাতক রয়েছেন। আকবরকে পালাতে সহায়তা ও তথ্য গোপন করা এবং সিসি ক্যামেরার ফুটেজ গায়েবের অপরাধে ফাঁড়ির টুআইসি এসআই হাসান উদ্দিনকে বরখাস্ত করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়।
 
এছাড়া গত ২১ অক্টোবর পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এআইজি- ক্রাইম অ্যানালাইসিস বিভাগ) মুহাম্মদ আয়ুবের নেতৃত্বে পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত দল সিলেট ঘুরে যায়। তাদের পর্যবেক্ষণে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ গায়েবে এসআই আকবরের আরেক সহযোগী এসআই হাসান ও সংবাদকর্মী আব্দুল্লাহ আল মামুন জড়িত থাকার প্রমাণ মিলে। এরপর থেকে মামুনও পলাতক রয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২০
এনইউ/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।