ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

মানবতাবিরোধী অপরাধ

নোয়াখালীর ৪ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২০
নোয়াখালীর ৪ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত ...

ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলার চার জনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

বুধবার (১২ আগস্ট) রাজধানীর ধানমন্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ৭৮তম এ প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন সংস্থাটির প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান।

আটক অপহরণ ও নির্যাতনের পর ১১ জনকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে ওই চার জনের বিরুদ্ধে। তবে তারা পলাতক থাকায় তাদের নাম ও ছবি প্রকাশ করেনি তদন্ত সংস্থা। ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বের তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। এ চার জনের বিরুদ্ধে তদন্ত করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. শাহজাহান কবীর।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ৪ আসামির মধ্যে একজন ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নোয়াখালী জেলা ছাত্র সংঘের নেতৃত্বে ছিলেন। অপর ৩ আসামি থানা ছাত্র সংঘের নেতা হিসেবে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে ৩ জন আসামি জামায়েত ইসলামের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। আর একজন আসামি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো হলো—

এক.
১৯৭১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর আনুমানিক দুপুর ১টার দিকে সালেহ আহম্মেদ মজুমদার, আমান উল্যাহ্ ফারুক, আব্দুর রব বাবু, আক্তারুজ্জামান লাতু, ইসমাঈল হোসেন, মোস্তফা কামাল ভুলু সহ ১৫/২০ জন মুক্তিযোদ্ধা কোম্পানীগঞ্জ থানাধীন পাকিস্তান বাজারে (বর্তমানে বাংলা বাজার) অপারেশন শেষ করে বাঞ্ছারাম নামক স্থানে ১৫ নং স্লুইস গেট সংলগ্ন এলাকায় এসে সহযোদ্ধাদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।

এ সময় বসুরহাট ও চাপরাশির হাট রাজাকার ক্যাম্প থেকে আসামিদের নেতৃত্বে ১০০/১২০ জন সশস্ত্র রাজাকার ও পাকিস্তানি আর্মি তাদের ওপর অতর্কিত হামলায় চালায়। রাজাকারদের অতর্কিত হামলায় তারা গুরুতর আহত হয়ে স্লুইস গেট সংলগ্ন টংঘর ও ধানক্ষেতে আশ্রয় নেন। রাজাকারেরা টংঘর ও ধানক্ষেতে লুকিয়ে থাকা নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে বের করে গুলি করলে সালেহ্ আহম্মেদ মজুমদার, মোস্তাফা কামাল ভুলু, আমান উল্যাহ্ ফারুক, ইসমাঈল হোসেন, আক্তারুজ্জামান লাতু, আব্দুর রব বাবু ও পথচারী গোলাম মাওলাসহ অজ্ঞাত আরো দুইজন মৃত্যুবরণ করেন। তাদের সবার লাশ পাওয়া যায়।

দুই.
১৯৭১ সালের ৬ অক্টোবর সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে আসামিরা সহ ২০/২৫ জন সশস্ত্র রাজাকার কোম্পানীগঞ্জ থানাধীন চরফকিরা গ্রামের ইউসুফ মিয়াকে তার বাড়ি থেকে অপহরণ করে চাপরাশির হাট রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। ওই দিন আনুমানিক দুপুর ২টার দিকে একই আসামিরা চাপরাশির হাট দক্ষিণ বাজার থেকে হাবিবুর রহমানকেও অপহরণ করে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। আসামিরা তাদের ক্যাম্পে আটক রেখে অমানুষিক নির্যাতন করে।

পরের দিন ভোর রাতে আসামিরা ইউসুফ মিয়া ও হাবিবুর রহমানকে ১৯ নং স্লুইস গেটে নিয়ে গুলি করে। গুলির আঘাতে ইউসুফ মিয়া ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করলেও হাবিবুর রহমান গুলিবিদ্ধ অবস্থায় খালের পানিতে ঝাপিয়ে পড়ে জীবন রক্ষা করেন। অলৌকিকভাবে বেঁচে গিয়ে তিনি দুই দিন পর বাড়ি ফিরে আসেন। শহীদ ইউসুফ মিয়ার লাশ পাওয়া যায়নি।
 
তিন.
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর অনুমানিক দুপুর ২টার দিকে আসামিদের নেতৃত্বে ১৫/২০ সশস্ত্র রাজাকার স্বনামধন্য চিকিৎসক রমেশচন্দ্র ভৌমিককে নোয়াখালী জেলার তৎকালীন সুধারাম (বর্তমানে কবিরহাট থানা) থানাধীন রামেশ্বরপুর গ্রামের নিজ বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে অপহরণ করে চাপরাশির হাট রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। রাজাকারেরা ডাক্তার রমেশচন্দ্র ভৌমিককে ক্যাম্পে আটক রেখে অমানুষিক নির্যাতন করে। আসামিরা পরের দিন ভোর রাতে রমেশচন্দ্র ভৌমিককে কবিরহাট থানাধীন ১৯ নং স্লুইস গেটে নিয়ে গুলি করে হত্যার পর লাশ খালের পানিতে ফেলে রাখে। শহীদ রমেশচন্দ্র ভৌমিকের লাশ পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২০
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।