ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১০ বছরে ৪১ রায়, ৬ ফাঁসি কার্যকর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২০
অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১০ বছরে ৪১ রায়, ৬ ফাঁসি কার্যকর

ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১০ বছরের ৪১ টি মামলার রায় দিয়েছেন।  বর্তমানে প্রাক-বিচার, বিচার পর্যায়ে রয়েছে ৩৪ টি এবং রায়ের জন্য অপেক্ষমান আছে একটি মামলা।

২০১০ সালের ২৫ মার্চ এ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল। এরপর ২০১২ সালের ২২ মার্চ আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।

১১টি মামলার রায় দেওয়ার পর ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দুই ট্রাইব্যুনাল একীভূত করা হয়। এখন একটি ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
 
 ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারিতে প্রথম রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন আবুল কালাম আজাদ ওরফে ‘বাচ্চু রাজাকার’কে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর একে একে শীর্ষ মানবতাবিরোধীর অপরাধীর রায় হয় ট্রাইব্যুনালে।
 
আপিলের পর যাদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর হয়েছে তারা হলেন, জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর।
তবে আপিলে মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই পেয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডভোগ করছেন জামায়াতের দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী।
 
এছাড়া ৯০ বছরের কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি নেতা আবদুল আলীম মারা এবং মৃত্যুদণ্ডদেশ পাওয়া জামায়াত নেতা আবদুস সুবহান মারা যাওয়ায় তাদের করা পৃথক আপিল অকার্যকর ঘোষিত হয়েছে।  

এদিকে আপিল বিভাগে জামায়াতের নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম ও জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃত্যুদণ্ড বহালের রায় ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আজহারুল ইসলামের রায় প্রকাশিত হয়।  

ওই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কারাগারে মৃত্যু পরোয়ানাও পাঠিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তবে রায় পুর্নবিবেচনা চেয়ে আপিল করার কথা জানিয়েছেন আজহারের আইনজীবীরা।  তবে কায়সারের রায় এখনো প্রকাশিত হয়নি।  
 
২৩ মার্চ এক প্রবন্ধে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ও তৎকালীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অন্যান্য আদালত/অ্যাডহক/হাইব্রিড ট্রাইব্যুনালসমূহের তুলনায় আমাদের উভয় ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক ১০বছরে ৪১টি মামলা নিষ্পত্তি আপাতদৃষ্টিতে বিস্ময়কর মনে হলেও এটাই চরম সত্য ও বাস্তবতা। জাতীয়-আন্তর্জাতিক নানামুখী ও বহুরূপী চাপ ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার এই অর্জন অবশেষে সম্ভব হয়েছে। বিবর্তিত আন্তর্জাতিক আইন বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত হয়ে সকল পক্ষই এগিয়ে গেছে দক্ষতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে। ট্রাইব্যুনালসমূহ এবং আপিল বিভাগ মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার করতে গিয়ে আসামিপক্ষে উত্থাপিত গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু আইনিপ্রশ্নের নিষ্পত্তি ও যৌক্তিক ব্যাখ্যা করেছে।  

ওইসব আইনি প্রশ্নেরনিষ্পত্তি ও ব্যাখ্যা দেশীয় আইনে আন্তর্জাতিক অপরাধসমূহ বিচারের ক্ষেত্রে দেশে-বিদেশে উদাহরণ ও নজির সৃষ্টি করেছে, সমৃদ্ধ করেছে আন্তর্জাতিক আইন বিজ্ঞানকে।  
 
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল বলেন, একাত্তরের অপরাধীদের বিচারে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ‘দি ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্টস, ১৯৭৩ পাস হয়। আর ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেন। এ টাইব্যুনালে ৪১ টি মামলার রায় হয়েছে। অনেক অপরাধীর দণ্ডও কার্যকর হয়েছে। এতে আপামর জনসাধরণের মতো আমরা প্রসিকিউশন টিমও সন্তুষ্ট।  

‘জাতীয় ও আন্তর্জতিক পরিমণ্ডলে এ বিচার সমাদৃত হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের ১০ বছর ও আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি ছিলো। কিন্তু বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণে সব কিছু স্থগিত করা হয়েছে। আমরা আশা করবো জনগণ সচেতন থেকে এ ভাইরাস থেকে রক্ষা পাবে। ’
 
জামায়াতের বিচার সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রাথমিক প্রস্তুতি রয়েছে। তবে রাষ্ট্রীয় প্রক্রিয়া (আইন সংশোধনী) সম্পন্ন হওয়ায় বিষয় রয়েছে। সেটি হলে আমরা শুরু করতে পারবো।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০২০
ইএস/এমএ   

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।