ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

ফেনীর নুসরাত: সেই এডিএম এনামুলের ‘অবহেলা নেই’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৯
ফেনীর নুসরাত: সেই এডিএম এনামুলের ‘অবহেলা নেই’ নুসরাত জাহান রাফি

ঢাকা: ফেনীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগের ঘটনায় তৎকালীন গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান এবং ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি কে এনামুল করিমের ‘নিষ্ক্রিয়তা বা অবহেলার কথা বর্ণনা করে কিছু কিছু মিডিয়ায় যে সংবাদ প্রচার হয়েছে তার সত্যতা পাওয়া যায়নি’। আদালতের নির্দেশে জনপ্রশাসন সচিবের করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সোমবার (২৬ আগস্ট) বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের বেঞ্চে এ প্রতিবেদনের ওপর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে ১৫ জুলাই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগের ঘটনায় তৎকালীন গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান এবং ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি কে এনামুল করিমের ভূমিকা ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

সে অনুযায়ী এ প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

পি কে এনামুল করিমের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে তদন্ত করেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) হাবিবুর রহমান।

প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা হয়, নুসরাতের মায়ের করা মামলায় একমাত্র আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাহ জেল হাজতে থাকায় মামলার বিষয়ে তার সরাসরি কিছু করার নেই মর্মে এডিএম পিকে এনামুল করিম যে বক্তব্য দিয়েছেন তা আইন সংগত। তবে উভয়পক্ষের বক্তব্যের মধ্যে কিছু বৈপরিত্য রয়েছে। পরবর্তী ঘটনার আকস্মিকতা ও পারস্পরিকতায় ফেনীর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামানের দেওয়া লিখিত বক্তব্যে উল্লেখিত ‘এডিএম পিকে এনামুল করিম এর নিষ্ক্রিয়তা বা অবহেলার কথা বর্ণনা করে কিছু কিছু মিডিয়ায় যে সংবাদ প্রচার হয়েছে তার সত্যতা পাওয়া যায়নি’ মর্মে দেওয়া বক্তব্যটি প্রণিধানযোগ্য ও যৌক্তিক মর্মে প্রতীয়মান হয়।

দৈনিক সমকালে ২১ জুন ‘এডিএম এনামুলের ভূমিকা, পুলিশের তদন্তের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন মন্ত্রণালয়ের’ শীর্ষক প্রতিবেদন যুক্ত করে এ রিট করা হয়।

সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি কে এনামুল করিমের ভূমিকা নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্তের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে এ ব্যাপারে পুলিশের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়- পুলিশ সদর দপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটি, তার কার্যপরিধি এবং তদন্ত কমিটি এডিএমের ব্যাপারে তদন্ত করেছে কি-না, করে থাকলে কোন এখতিয়ার বলে করেছে, তা স্পষ্ট করতে হবে।

চিঠিতে সই করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব মল্লিকা খাতুন। চিঠির বিষয়বস্তু হিসেবে লেখা হয়, ‘সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি কে এনামুল করিমের দায়িত্বে অবহেলার ব্যাপারে বিশেষ প্রতিবেদন। ’

পুলিশের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, নুসরাতের ঘটনায় কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে তদন্ত করা হয়নি। এ ঘটনায় প্রশাসনিকভাবে যারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি, তা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। নুসরাতের পরিবারের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রশাসনিকভাবে যারা এ ঘটনায় গাফিলতি করেছিল, তাদের ব্যাপারে তথ্য উঠে আসে।

এদিকে নুসরাতের ঘটনায় সদর দপ্তরেরই এক ডিআইজিকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ফেনীর এসপি, সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি, দুই এসআইর দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির বিষয় উঠে আসে। তদন্ত কমিটি চারজনের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশও করেছে। এ ছাড়া ফেনীর তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ও সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি পি কে এনামুল কবিরের দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। পুলিশ সদর দপ্তরের এ প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, শুরু থেকেই এসপি-এডিএম এবং ওসিসহ স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নেওয়ার অপচেষ্টা চালান।  

৪ এপ্রিল নুসরাত ও তার মা অধ্যক্ষ সিরাজের বিচার চাইতে যান মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি এনামুল করিমের অফিসে। বিচার তো দূরের কথা, তিনি ঘটনাটি চেপে যেতে বলেন নুসরাতকে। এনামুল তাদের বলেছিলেন, ‘এখন কেন এসেছেন। আপনারা তো মামলা করে ফেলেছেন। মামলা করার আগে এলে দেখতাম, কী করা যায়। ’ 

নুসরাতকে তিনি আরও বলেছিলেন, ‘প্রিন্সিপাল খারাপ, সবাই জানে। তুমি তার কাছে গেছো কেন। যখন গেছো, তখন হজম করতে পারলে না কেন? তোমার বাবাকে মাদ্রাসায় বসানোর জন্য এ রকম নাটক সাজিয়েছ। ’ 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদ্রাসার গভর্নিং বডির প্রধান হিসেবে এনামুল করিম শুরুতেই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে নুসরাতের এ পরিণতি হতো না। উল্টো তিনি নুসরাতের পরিবারের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। আবার নুসরাতের ঘটনার পর এনামুলকে প্রধান করেই তদন্ত করে জেলা প্রশাসন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৯
ইএস/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।