ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

মিন্নির গ্রেফতার-জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে জানতে চান হাইকোর্ট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৯
মিন্নির গ্রেফতার-জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে জানতে চান হাইকোর্ট পুলিশি হেফজতে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি/ ফাইল ছবি

ঢাকা: বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে কখন গ্রেফতার করা হয়েছে, আদালতে নেওয়া হয়েছে ও কোথায় কখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং পুলিশ সুপার (এসপি) কবে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তা সুস্পষ্টভাবে জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

সোমবার (১৯ আগস্ট) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দিয়ে মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) দুপুর ২টা পর্যন্ত মিন্নির জামিন শুনানি মুলতবি করেছেন।

আদালত বরগুনার এসপি কবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, এই সংবাদ সম্মেলন মিন্নির ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দির আগে না পরে করা হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

একইসঙ্গে মিন্নিকে কবে পুলিশ লাইন্সে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, সেটি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার আগে না পরে, তার তথ্য সুনির্দিষ্ট করে জানাতে বলা হয়েছে। এসব তথ্য সংযোজন করে মিন্নির আইনজীবী অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্নাকে মঙ্গলবার সম্পূরক আবেদন করতে বলেছেন হাইকোর্ট।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসাইন বাপ্পী।

শুনানিতে মিন্নির আইনজীবী বলেন, মিন্নি একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী। সে মামলার এক নম্বর সাক্ষী। অথচ তাকে গত ১৬ জুলাই পুলিশ লাইন্সে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করে। এর পরদিন ১৭ জুলাই তাকে আদালতে নিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতে ওইদিন তারপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলো না। এসব তথ্য সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।

আদালত আইনজীবীর কাছে জানতে চান, জামিনের জন্য আপনার কি যুক্তি? জবাবে আইনজীবী বলেন, ১৯ বছরের একটি মেয়ে। কলেজ ছাত্রী। একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী। যার সঙ্গে মিলে রিফাতকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে বলে পুলিশ দাবি করছে, সে মামলার প্রধান আসামি ছিল। সে ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে। এই ১৯ বছরের একটা মেয়ে বাইরে এলে মামলার কোনো ক্ষতি হবে না।

এসময় আদালত জানতে চান, তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আগে না পরে পুলিশ লাইন্সে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে?

জবাবে আইনজীবী বলেন, পুলিশ লাইন্সে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর গ্রেফতার করা হয়। তারপর আদালতে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

এসময় আদালত সুস্পষ্ঠভাবে জানতে চান, পুলিশ সুপার (এসপি) কবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন? এসপি সাহেব কবে বলেছেন যে, মিন্নি দোষ স্বীকার করেছে? সেটা মিন্নির ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দির আগে না পরে?

এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তারিখ জানিয়ে আদালতে সম্পূরক আবেদন দিতে বলেন।

গত ৮ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে ঘণ্টাব্যাপী শুনানি শেষে জামিন প্রশ্নে রুল জারি করতে গেলে আইনজীবীরা আবেদন ফেরত নেন।

এরপর ১৮ আগস্ট (রোববার) উক্ত বেঞ্চে জামিন আবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।

তার আগে গত ৫ আগস্ট (সোমবার) মিন্নির জামিন আবেদনের কথা জানিয়েছিলেন জেড আই খান পান্না।

২৬ জুন প্রকাশ্য দিবালোকে বরগুনা সরকারি কলেজ রোডে স্ত্রী মিন্নির সামনে কুপিয়ে জখম করা হয় রিফাত শরীফকে। পরে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড ২ জুলাই ভোরে জেলা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটা ফেরিঘাট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। এর মধ্যে আরও কয়েকজন আসামিকেও গ্রেফতার করা হয়।

১৬ জুলাই সকালে বরগুনার মাইঠা এলাকায় বাবার বাসা থেকে মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বরগুনার পুলিশ লাইনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রিফাত হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ায় ওই দিন রাত ৯টার দিকে মিন্নিকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।

পরদিন ১৭ জুলাই বিকেলে মিন্নিকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে শুনানি শেষে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সিরাজুল ইসলাম গাজী পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ওইদিন মিন্নির পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।

রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন ১৯ জুলাই বিকেল ৫টার দিকে বরগুনা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালতে মিন্নি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

২২ জুলাই বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রথমবার মিন্নির জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল বারী আসলাম। ওই দিনই শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।

এরপর ২৩ জুলাই মিস কেস দাখিল করে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামানের আদালতে ফের জামিনের আবেদন করেন মিন্নির আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল বারী আসলাম। পরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নথি তলব করে ৩০ জুলাই এ জামিন শুনানির দিন ধার্য করেন আদালত। শুনানির পর জামিন আবেদন নাকচ করেন আদালত।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৯/আপডেট: ১৮২৬ ঘণ্টা
ইএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।