ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

হলি আর্টিজান

‘তিন আংকেল বলে যান- জান্নাতে দেখা হবে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১২ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৯
‘তিন আংকেল বলে যান- জান্নাতে দেখা হবে’ হামলার পর হলি আর্টিজান বেকারি। ফাইল ফটো

ঢাকা: রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় আদালতে সংশ্লিষ্টদের জেরা করার সুযোগ না দেওয়ার অভিযোগে তুলে মামলা ছাড়লেন তিন আসামির আইনজীবী। 

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) তারা আদালতে তাদের ওকালতনামা প্রত্যাহার করেন। একই দিন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন জেএমবির অন্যতম সমন্বয়ক তানভীর কাদেরীর ছেলেসহ তিনজন।

রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে তানভীর কাদেরী নিহত হয়।

ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালতে তাদের জবানবন্দি নেওয়া হয়। আদালত পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২৩ জুলাই দিন ধার্য করেন।
  
মঙ্গলবার হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা মামলায় বাবার জঙ্গি কার্যক্রম সম্পর্কে আদালতে সাক্ষ্য দেয় তানভীর কাদেরীর দশম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে। আজিমপুরের জঙ্গি আস্তানার মামলায় মায়ের সঙ্গে সেও আসামি।

জবানবন্দিতে ওই কিশোর বলে, আমাদের পরিবারে মোট সদস্য সংখ্যা ছিলো চারজন। বাবা (বাবা তানভীর কাদেরী-মা আবেদাতুল ফাতেমা ওরফে খাদিজা) আর আমরা দুইভাই। ২০১৪ সালের দিকে আমার পরিবারসহ চারজন এক সঙ্গে বসবাস করতাম।

‘প্রতিদিনের মতো স্কুলের মসজিদে বাবাসহ আমি নামাজ পড়তাম। একদিন আব্বু বাসায় এসে আম্মুকে বললেন, আমরা সপরিবারে হিজরত করবো। কিন্তু এখানে সেরকম কোনো পরিবেশ নেই, ভালো স্কুল নেই, হিজরতে ইসলামের পথে গেলে আর কোনো প্রকার কষ্ট থাকবে না। ’

তানভীর কাদেরী বলে, আব্বুর এর মাঝে জাহিদ নামে এক আংকেলের সঙ্গে পরিচয় হয়। এ বিষয়ে আংকেলের সঙ্গে আব্বু আলোচনা করেন। আমাদের পরিবারে সবাইকে ইসলামের বায়াত গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে আব্বু জিজ্ঞাসা করলে আম্মু হ্যাঁ, মত প্রকাশ করেন। এরপর আব্বুর কথামতো আমরা ব্যাগ গোছাতে থাকি।  

‘বাসা থেকে বের হওয়ার সময় সবাইকে মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি (বাবা) জানান, আমরা সপরিবারে মালয়েশিয়ায় ঘুরতে যাচ্ছি। ওখানে গিয়ে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করবো। এরপর পল্লবীর দিকে বাবা আমাদের বাসা ভাড়া নেন। সেখানে জাহিদ আংকেলের সঙ্গে আরও তিনজন আমাদের বাসায় আসেন। তাদের মধ্যে এক আংকেল আমাকে চকলেট খেতে  দেয়। তারা আমাদের পেনড্রাইভে একটি ইসলামিক ফোল্ডার দিয়ে যান। ওই সময় মুসা নামের আরেক আংকেল আমাকে আর আমার ভাইকে ইংরেজি-বাংলা পড়াতে আসতেন। পরে আবারও বাসা পরিবর্তন করি। কিছুদিন যাওয়ার পর ওই তিনজন আরও দুইজনকে নিয়ে বাসায় আসেন। তাদের একটি সংগঠন ছিল। সংগঠনের অনেক লোক তাদের রুমে  থাকতো। সেখানে আমাদের ঢোকা নিষেধ ছিলো। মাঝে মধ্যে আমি আর আব্বু ওই আংকেলদের রুমে খাবার দিয়ে আসতাম। ’

সে বলে, হঠাৎ করে দেখি এক আংকেল শিরিষ কাগজ দিয়ে চাপাতি শান দিতে দেখি। আম্মু জিজ্ঞাসা করলে এক আংকেল বলেন, ‘এগুলো অপেরেশনের জন্য লাগবে। পরবর্তী তারা চলে যান। আর যাওয়ার সময় বলে যান- জান্নাতে দেখা হবে। ’ … পরে শুনেছি ওইদিন বাসা থেকে যারা বের হয়ে গিয়েছিলেন-তারা সবাই মারা গেছেন।

‘এরপর আমাকে আর আম্মুকে রূপনগর থেকে আজিমপুরে পাঠিয়ে দেন আব্বু। আব্বু আর ভাইয়া অন্য জায়গায় চলে যান। পরে জানতে পারি পুলিশের অভিযানে বাবা ও ভাইয়ের মৃত্যু হয়। আমাদের আজিমপুরের বাসায় পুলিশ অভিযান চালায়। সেখানে আমাকে পুলিশ গ্রেফতার করে। আর আম্মু হালকা আঘাত পান। ’

এরপর ওই কিশোরকে বিচারক জিজ্ঞাসা করেন, কাঠগড়ায় দাঁড়ানো আসামিদের মধ্যে কাউকে চেনে কি-না? উত্তরে সে দুইজনকে চেনে বলে জানায়।  

অভিযানে নিহত তানভীর কাদেরের ছেলের সাক্ষী শেষে মামলার আসামি আসলাম, রিগ্যান ও খালেদের পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহমেদ তাকে জেরা করতে চান। কিন্তু তা অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন বিচারক।  

তখন বিচারক ও এই আইনজীবীর মধ্যে তর্ক হয়। এক পর্যায়ে আইনজীবী ফারুক ওকালতনামা লিখিতভাবে প্রত্যাহার করেন।

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশের ওপর গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গিরা।  

এতে মহানগর ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন নিহত হন।

এরপর ৪ জুলাই গুলশান থানার এসআই রিপন কুমার দাস বাদী হয়ে মামলা করেন। ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।  

একই বছরের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। এরপর ৪ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ।
এ মামলার আসামিরা হলেন- হামলার মূল সমন্বয়ক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা, ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ ওরফে রিপন।

এর মধ্যে পলাতক মামুনুর রশিদ ওরফে রিপনকে গত ১৯ জানুয়ারি গাজীপুর এবং শরিফুল ইসলাম ওরফে আব্দুস সবুর খানকে ২৫ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়। সব আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৯
এমএআর/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad