ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

সোনাগাজীর সেই ওসির জামিন নামঞ্জুর 

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৭ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৯
সোনাগাজীর সেই ওসির জামিন নামঞ্জুর  আদালতে সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ছবি: ডিএইচ বাদল/বাংলানিউজ

ঢাকা: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। 

 

 

বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস সামছ জগলুল হোসেন সোমবার (১৭ জুন) দুপুরে মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিন আবেদন নাকচ করে এ আদেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে আগামী ৩০ জুন মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য দিন র্ধায করা হয়েছে।

 

আসামি মোয়াজ্জেম হোসেনের জামিনের আবেদনে তার আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, তিনি আইনের আশ্রয় নেওয়ার জন্য হাইকোর্টে গিয়েছিলেন তাকে সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া তার ফেসবুক আইডি থেকে কোনো কিছু প্রচার হয়নি। টেলিভিশন রিপোর্টার মো. আতিয়ার হাওলাদার সজলের ভিডিও ফেসবুক থেকে প্রচার করা হয়েছে। অথচ তাকে এ মামলায় আসামি করা হয়নি।

মামলার বাদী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও রাস্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম শামীম আসামির জামিনের আপত্তিতে বলেন, আমামি একজন আইনের লোক হয়ে তিনি ২০ দিন পলাতক ছিলেন। যেখানে তার নিজেরই গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করার কথা কিন্তু তা না করে তিনি পালিয়েছিলেন। পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে।

‘মোয়াজ্জেমের আচরণে পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে জামিনের আবেদন নাকচ করেন আদালত। তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ’

এর আগে রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে রোববার (১৬ জুন) তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরবর্তীতে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ওসি মোয়াজ্জেমকে ফেনীর সোনাগাজী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে শাহবাগ থানা পুলিশ।

পরে ফেনী সোনগাজী থানার এসআই আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম দুপুর সাড়ে ১২টায় আসামি মোয়াজ্জেম হোসেনকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানায় তাকে রাখা হয়।  

দুপুর ২টা ২০মিনিট আসামি মোয়াজ্জেমকে  কড়া পুলিশ পাহারায় সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এ সময় সাংবাদিকদের ছবি তুলতে বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় হুড়োহুড়িতে কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন।  

এদিকে আসামি মোয়াজ্জেম হোসেনকে হাতকড়া ছাড়া আদালতে হাজির করা হয়। এ নিয়ে আদালত অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।  

থানায় মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে ‘অসম্মানজনক’ কথা বলায় ও তার জবানবন্দির ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় গত ১৫ এপ্রিল সাইবার ট্রাইব্যুনালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বাদী হয়ে এ মামলা করেন।  

বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় করা অভিযোগটি পিটিশন মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল।  

সেই সঙ্গে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই এর ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে তদন্ত করে ৩০ এপ্রিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।  

গত ২৭ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানার পক্ষে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় পিবিআই।

একই দিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে একই ট্রাইব্যুনালের বিচারক সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। একই সঙ্গে ১৭ জুন গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি সংক্রন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেন।

পিবিআই-এর প্রতিবেদনে বাদীসহ ১৫ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এর মধ্যে সোনাগাজী থানার চারজন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন।

প্রতিবেদনে পিবিআই বলে, নুসরাত জাহান রাফির বয়স কম এবং তিনি একজন মাদ্রাসাছাত্রী। তাকে কয়েকজন পুরুষের সামনে শ্লীলতাহানির বক্তব্য শোনা এবং তা ভিডিও ধারণ করা ন্যায়সঙ্গত নয়।  

নারী ও শিশুরা যেহেতু শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় থানায় আসেন, সেহেতু নারী ও শিশুদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় পুলিশ সদস্যদের অনেক বেশি সহনশীল হওয়া প্রয়োজন।  

‘ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন রাষ্ট্রের একটি ‍গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকেও নিয়ম বর্হিভূতভাবে ভিকটিম নুসরাত জাহান রাফির বক্তব্যের ভিডিও ধারণ ও প্রচার করে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় অপরাধ করেছেন। ’

এর আগে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ-উদ দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন ভুক্তভোগী নুসরাতের মা। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়।  

যৌন হয়রানির অভিযোগ করতে যাওয়ার পর সোনাগাজী থানার ওসির কক্ষে ফের হয়রানির শিকার হতে হয় নুসরাতকে। নিয়ম না মেনে জেরা করতে করতেই নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন ওসি। মৌখিক অভিযোগ নেওয়ার সময় দুজন পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না।  

গত ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষার আগ মুহূর্তে মিথ্যা কথা বলে নুসরাতকে মাদ্রাসার ছাদে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয় দুর্বৃত্তরা। মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানালে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় তারা।  

ওইদিন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতাল এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গত ১০ এপ্রিল চিকিৎসাধীন নুসরাতের মৃত্যু হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, জুন ১৭,২০১৯/আপডেট: ১৬৫৮
এমএআর/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।