ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

৫০ লাখ টাকা না দেয়ায় গ্রিন লাইনের ম্যানেজারকে তলব

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১৯
৫০ লাখ টাকা না দেয়ায় গ্রিন লাইনের ম্যানেজারকে তলব আদালত চত্বরে পা হারানো রাসেল সরকার। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের ওপর গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসচাপায় পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে নির্ধারিত সময়ে ৫০ লাখ টাকা না দেয়ায় কোম্পানির ম্যানেজারকে বৃহস্পতিবার (০৪ এপ্রিল) দুইটার মধ্যে হাইকোর্টে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আদালতের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করায় বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজা।

গ্রিন লাইন পরিবহনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আইনজীবী অজি উল্লাহ।  

গত ৩১ মার্চ রাসেল সরকারকে টাকা দেয়ার আদেশ বহাল রেখেছিলেন আপিল বিভাগ। ওইদিন হাইকোর্ট বুধবারের (০৩ এপ্রিল) মধ্যে টাকা দিয়ে বৃহস্পতিবার আদালতকে জানাতে নির্দেশ দেন।

কিন্তু বৃহস্পতিবার খন্দকার শামসুল হক রেজা আদালতে বলেন, গ্রিন লাইন পরিবহন আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। তখন গ্রিন লাইনের আইনজীবী অজি উল্লাহ আদালতে জানান যে, গ্রিন লাইনের প্রোপ্রাইটার চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে রয়েছেন।

এ সময় আদালত বলেন, কোথায় গেছেন? কবে ফিরবেন, কবে গেছেন? তাহলে তার ম্যানেজারকে ডাকুন। অন্যথায় তাকে অ্যারেস্ট করার ব্যবস্থা করবো? নাকি তার সমস্ত গাড়ি সিজ (জব্দ) করার ব্যবস্থা করবো?

জবাবে গ্রিন লাইনের আইনজীবী বলেন, আমি ম্যানেজারকে জানাবো। এ সময় আদালত বলেন, তাকে আসতে বলেন দুইটার মধ্যে।

অজি উল্লাহ বলেন, আমি দুইটার মধ্যেই কোম্পানির ম্যানেজার কে আদালতে আসতে বলছি। এরপর আদালত বিষয়টি দুপুর দুইটা পর্যন্ত মুলতবি রাখেন।

গত ১২ মার্চ বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দিয়েছিলেন।

৫০ লাখ টাকা দেয়ার আদেশের পাশাপাশি রাসেলের অন্য পায়ে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে এবং কাটাপড়া বাম পায়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিম পা লাগানোর খরচও গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে দিতে বলা হয়েছিলো। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গিয়ে বিফল হয় গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষ।

এর আগে ২০১৮ সালের ১৪ মে রাসেলকে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। রাসেলের পক্ষ থেকে আদালতে জানানো হয়, এখন পর্যন্ত বাস কর্তৃপক্ষ তার কোনো খোঁজ খবর নেয়নি।

রিট আবেদনটি দায়ের করেন সংরক্ষিত আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতি।

গত বছরের ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রিনলাইন পরিবহনের বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাইভেটকার চালকের ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেন। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের (২৩) বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শঙ্কায় পড়ে তার জীবন।  

পা হারানো রাসেল সরকারের বাবার নাম শফিকুল ইসলাম। গাইবান্ধার পলাশবাড়ী এলাকার বাসিন্দা রাসেল রাজধানীর আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিংয়ে বসবাস করেন এবং স্থানীয় একটি ‘রেন্ট-এ-কার’ প্রতিষ্ঠানের প্রাইভেটকার চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
 
পুলিশ জানায়, ঘটনার দিন সকালে রাসেল যাত্রীসহ কেরানীগঞ্জে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে যাত্রাবাড়ীর ধোলাইপাড় এলাকায় হানিফ ফ্লাইওভারের ঢালে পৌঁছালে পেছন থেকে গ্রিন লাইন পরিবহনের একটি বাস ধাক্কা দেয়। তখন প্রাইভেটকার চালক রাসেল গাড়ি থামিয়ে বাস চালকের সঙ্গে জানালা দিয়ে ধাক্কা দেয়ার কারণ জানতে চান।  

কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে গ্রিন লাইন বাসের চালক ক্ষিপ্ত হয়ে রাসেলের ওপর দিয়ে বাস চালিয়ে দেন। এতে ঘটনাস্থলেই রাসেলের বাম পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
 
এদিকে প্রাইভেটকার চালককে চাপা দিয়ে পালিয়ে আসা গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসটিকে চালকসহ আটক করে শাহবাগ থানা পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৯
ইএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।