ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

‘আইনমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে ঝড় তোলার চেষ্টা’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৮
‘আইনমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে ঝড় তোলার চেষ্টা’ বার কাউন্সিলের সংবাদ সম্মেলন

ঢাকা: আইনমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে তারা (বিএনপির আইনজীবীরা) একটা ঝড় তুলতে চেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ন।

মঙ্গলবার (১১ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির অডিটোরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলন করে বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।

এ সংবাদ সম্মেলনের কিছুক্ষণ আগে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি একই স্থানে সংবাদ সম্মেলন করে।

এতে সমিতির সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের কাছে বিএনপির আইনজীবীদের নিয়ে আইনমন্ত্রীর করা উক্তি ‘অত্যন্ত দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক’বলে মন্তব্য করেন।

এর কিছুক্ষণ পরেই বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে একই স্থানে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ হোসেন হুমায়ন বলেন, “কিছুদিন আগেও এই অডিটোরিয়ামে একটা অনুষ্ঠান হয়েছিল। সেখানে একটি দলের শীর্ষ নেতারা এসেছিলেন। সে সময়েও সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলাম, এটা সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির একটা পবিত্র অঙ্গন। কোন দলের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহৃত হয়নি। আমাদের সময় কোনদিন এটি হয়নি। করতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে আবারও কিছুদিন পরে এ ধরনের সম্মেলন হচ্ছে। আজকেও হয়েছে। সেখানে অনেকগুলো পয়েন্টে কথা হয়েছে। আমি শুধু একটি বিষয়ে বলবো। ”

“আমাদের আইনমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে তারা একটা ঝড় তুলতে চেষ্টা করছেন। লিখিত বক্তব্যে তারা আইনমন্ত্রীর একটি উক্তি তুলে ধরেছেন। কিন্তু এটা কি প্রেক্ষপটে বলেছেন সেটা আমাদের জানতে হবে। সেটা আপনারাও জানেন। খালেদা জিয়ার বিচার চলছে পুরনো কারাগারে। এটা তার নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিগত কারণে করা হয়েছে। এটা আইনের মধ্যে আছে, যে কথাটা আইনমন্ত্রী বলেছেন। ”

ইউসুফ হোসেন হুমায়ন আরো বলেন, “ফৌজদারি কার‌্য বিধির ৯ (২) ধারায় বলা হয়েছে, সরকার সরকারি গেজেটে সাধারণ অথবা বিশেষ আদেশ জারি করে নির্দেশ দিতে পারেন যে, যে কোন স্থানে বা স্থানসমূহে দায়রা আদালত বসিবে। এই রূপ আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত দায়রা আদালত পূর্বের ন্যায় বসিবে। কাজেই কোন অবস্থাতেই বলা যাবে না যে, এটা আইনের মধ্যে নাই। যে কারণে আমাদের আইনমন্ত্রীর যে কথা তারা কোট করেছেন সেটা হলো- খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আইন জানেন না। এটা কিন্তু তিনি মিন করেছেন বলে আমরা বিশ্বাস করি না। তিনি যেটা বলছেন, সেকশন ৯ ধারা থাকা সত্ত্বেও এ ধরনের বক্তব্য অপ্রত্যাশিত। সে জন্য বাই দি বাই বলেছেন। সুতরাং একটা বিভ্রান্তি করার চেষ্টা চলছে বিচারটা প্রলম্বিত করতে। এটার থেকে বিরত থাকা উচিত। ”

সংবাদ সম্মেলনে বার কাউন্সিলের সদস্য ও আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদাক শ ম রেজাউল করিম বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যানারকে ব্যবহার করে বেশ কিছুদিন যাবত একটি রাজনৈতিক দলের বিশেষ কিছু ফৌজদারি মামলার আসামিদের পক্ষে নানারূপ অনাকাঙ্ক্ষিত প্রচারণা চলছে। সেই প্রচারণা করতে গিয়ে বিচার ব্যবস্থা আইনের শ‍াসন এবং আইনের অপব্যাখ্যাও দেওয়া হচ্ছে। এরূপ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নীরব ভূমিকা পালন করতে পারে না। ”

ইউসুফ হোসেন হুমায়ন বলেন, “কিছুক্ষণ পূর্বে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি এক সংবাদ সম্মেলন করে সরকারের আইনমন্ত্রীর একটি বক্তব্যে এবং অন্যায্য কিছু বিষয়ের অবতারণা করেছে। তারা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য রেখেছেন, সে বিষয়ে প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরতেই এই সংবাদ সম্মেলন। ’  

এক প্রশ্নের জবাবে শ ম রেজাউল করিম বলেন, “বাস্তবিক হলো এটা কারাগার নয়। এটা পুরনো কারাগার। এখানে কেউ থাকেন না। এটি পরিত্যক্ত কারাগার। যার একটি অংশে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে। তিনি দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত। কারণটা হলো তার নিরাপত্তার বিষয়টা বিবেচনা করে রাখা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার অবস্থা বিবেচনা করে বিশাল কারাগারের একটি অংশে তাকে রাখা হয়েছে। ফলে এ কথা বলা যাবে না যে, কারাগারের ভিতরেই নতুন করে আদালত স্থাপন করা হয়েছে। দ্বিতীয় হচ্ছে, তাদের সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য যদি উদ্বেগের কারণ হয় তাহলে বিএনপির আইনাজীবী হিসেবে তারা তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারতেন। বিএনপির আইনজীবীরা ক্ষুব্ধ হলে কিন্তু সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যানার ব্যবহার করা নিন্তান্তই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির বিভিন্ন সভা করেছে, বিষয়টাকে তারা বিএনপির কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছেন। ”

সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক সহ-সম্পাদক একেএম রবিউল হাসান সুমন ও  ব্যারিস্টার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

গত রোববার (০৯ সেপ্টেম্বর) দুপরের দিকে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন খালেদা জিয়ার কয়েকজন আইনজীবী। সাক্ষাতের পর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, দেশের সংবিধানের গার্ডিয়ান হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট। আর সুপ্রিম কোর্টের অভিভাবক প্রধান বিচারপতি। এটা সুপ্রিম কোর্টের ‘পাওয়ার’। এটা সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে কনসাল্ট না করে এ ধরনের কোনো কোর্ট প্রজ্ঞাপন (খালেদা জিয়ার বিচারে আদালত স্থানান্তর) জারি করতে পারে না। এটা আমরা বলেছি।

ওই দিন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ শেষে বের হওয়ার পর খালেদার আইনজীবীদের মন্তব্যের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “আমি মনে করি ওনারা (খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা) যদি এরকম কথা বলে থাকেন, তাহলে আমি বলবো, ওনারা আইন জানেন না। ” 

আইনমন্ত্রীর এ বক্তব্যের বিষয়ে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।

লিখিত বক্তব্যে জয়নুল আবেদীন বলেন, “তিনি একজন আইনজীবী, আইনমন্ত্রী এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তি। কাজেই তার কাছ থেকে দেশের মানুষ তথা আইনজীবীরা এ রকম বক্তব্য আশা করে না। আমরা মনে করি, তার এই বক্তব্য বাংলাদেশের আইনজীবীদের জন্য অপমানজনক। আশা করি, তিনি এ ধরনের বক্তব্য প্রত্যাহার করে আইন এবং আইনজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন। ”

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৮
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।