ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

বিজিএমইএ’র আবেদনের শুনানি ৫ অক্টোবর পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৭
বিজিএমইএ’র আবেদনের শুনানি ৫ অক্টোবর পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে

ঢাকা: রাজধানীর হাতিরঝিলের মাঝে থাকা বহুতল ভবন ভাঙতে আরও এক বছর সময় চেয়ে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) করা আবেদনটি সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছেন চেম্বার বিচারপতির আদালত। একইসঙ্গে আগামী ০৫ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করেছেন।

অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালত সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) এ আদেশ দেন।

আদালতে বিজিএমইএ’র পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী।

সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

পরে আইনজীবী ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম বলেন, ভবন থেকে সরতে আরও এক বছর সময় চেয়েছে বিজিএমইএ। কারণ, রাজউক জমি দিয়েছে, এখন সব কিছু প্রক্রিয়াধীন আছে।
 
গত শনিবার (০৯ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে নিজস্ব ভবন করতে সবেমাত্র রাজউকের কাছ থেকে অর্ধেক মূল্যে ৫ বিঘা জমি পেয়েছি। বৃহস্পতিবার (০৭ সেপ্টেম্বর) জমির দলিল হয়েছে, ভবনের কাজও শুরু হয়েছে। নির্মাণ শেষে নতুন ভবনে কার্যালয় সরিয়ে নিতে আমাদের আরো এক বছর সময় দরকার। আশা করছি, সে সময় পাবো’।

সর্বশেষ বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে গত ১২ মার্চ ছয়মাসের সময় দেন আপিল বিভাগ। বিজিএমইএ’র তিন বছরের সময়ের আবেদনের শুনানি নিয়ে ওইদিন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ সময় দেন।

ওই সময় শেষ হওয়ায় সম্প্রতি আপিল বিভাগে আরও এক বছরের সময়ের আবেদন জানায় বিজিএমইএ।

১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ভবন নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ০৮ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন উদ্বোধন করেন সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এরপর থেকে ভবনটি বিজিএমইএ’র প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

কিন্তু রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই কারওয়ানবাজার সংলগ্ন বেগুনবাড়ি খালে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে ২০১০ সালের ০২ অক্টোবর একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই দিনই প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ডি এইচ এম মনির উদ্দিন।

পরদিন ০৩ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন কেন ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে (সুয়োমোটো) রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এ রুলের শুনানিতে আদালতকে আইনি সহায়তা দিতে ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের সাতজন আইনজীবীকে ‘আদালতের বন্ধু’ (আমিকাস কিউরি) নিয়োগ দেওয়া হয়।

ওই সাত আইনজীবী হলেন- বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ফিদা এম কামাল, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আখতার ইমাম, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, মনজিল মোরসেদ ও পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

২০১১ সালের ০৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে হাইকোর্ট বেঞ্চ তার রায়ে বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ভবনটি নির্মাণের আগে ওই স্থানের ভূমি যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেও নির্দেশ দেন বিজিএমইএকে।

একই বছরের ০৫ এপ্রিল বিজিএমইএ’র আবেদনে হাইকোর্টের রায় ছয়মাসের জন্য স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। পরবর্তী সময়ে স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও বাড়ান সর্বোচ্চ আদালত।

এর দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্টের ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে ভবনটি ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলে ওই জমি জনকল্যাণে ব্যবহারের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, ‘হাতিরঝিল প্রকল্প একটি জনকল্যাণমূলক প্রকল্প’।

আদালত বিজিএমইএ যাদের কাছে ওই ভবনের ফ্ল্যাট বা অংশ বিক্রি করেছে- তাদের টাকা দাবি পাওয়ার এক বছরের মধ্যে ফেরত দেওয়ারও নির্দেশ দেন।

হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর লিভ টু আপিল করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। গত বছরের ০২ জুন তা খারিজ হয়ে যায়।

গত বছরের ০৮ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৩৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত রায় প্রকাশিত হওয়ার পর রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন জানায় বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ।

গত ০৫ মার্চ প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রায় রিভিউ আবেদন খারিজ করে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার রায় বহাল রাখেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।