ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

লংগদুর ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিটি চেয়ে নোটিশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৫ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৭
লংগদুর ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিটি চেয়ে নোটিশ

ঢাকা: রাঙামাটির লংগদুতে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক ও যুবলীগ নেতা নয়ন হত্যার পর আদিবাসীদের ঘর-বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা তদন্তে হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠন চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

আগুন দেওয়ার ঘটনায় কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, আদিবাসীদের রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতা আছে কি-না এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি-না- তা জানতে চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নিখিলেশ চাকমা নিকোলাস রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এ নোটিশ পাঠিয়েছেন।
 
নোটিশ পাওয়ার তিনদিনের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেবেন বলেও জানিয়েছেন এ আইনজীবী।

সোমবার (১২ জুন) দুপুরে নিখিলেশ চাকমা বাংলানিউজকে জানান, নোটিশে বিবাদী করা হয়েছে স্বরাষ্ট্রসচিব, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার প্রশাসক, লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), পুলিশের মহাপরিদর্শক, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক, রাঙামাটি পার্বত্য জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) ও লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি)।  

নোটিশে নিখিলেশ চাকমা বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমের মারফতে জানতে পেরেছি, দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হন মোটরসাইকেল চালক ও যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম নয়ন। গত ০১ জুন খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের চার মাইল (কৃষি গবেষণা এলাকা সংলগ্ন) এলাকায় তার মরদেহ পাওয়া যায়। পোস্টমর্টেমের পর মরদেহ লংগদুতে নিয়ে আসা হয়। পরে ০২ জুন লংগদু সদরে থানার ওসিসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের উপস্থিতিতে তারা নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়’।

‘ওই সময়ে যেকোনো ধরনের পরিস্থিতিতে এড়াতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে পুলিশকে অবহিত করেন আদিবাসী নেতারা। কিন্তু পুলিশসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা কোনো ধরনের উদ্বিগ্ন না হতে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু ২/৩ ঘণ্টার মধ্যে ৩০০ বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আগুন দেওয়ার আগে লুটপাটও চালানো হয় এবং ৭০ বছরের বৃদ্ধাও আগুনে নিহত হন।   এটি ফেসবুকে প্রচারিত করা হয়’।

তিনি বলেন, ‘সর্বস্ব হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা এখন এক কাপড়ে স্কুল, মন্দির ও গভীর জঙ্গলে নিরাপত্তাহীনতায় বসবাস করছেন। এখন তাদের কাছে ঘর-বাড়ি বানানোর মতো কোনো টাকা পয়সা নেই। আমার মতে, স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতায় এ ঘটনা ঘটেছে। তারা পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলে এটি ঘটতো না’।  

‘আগুন দেওয়ার ঘটনায় কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, আদিবাসীদের রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনের ব্যর্থতা আছে কি-না এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি-না- তা নিরুপণ করতে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠন করা প্রয়োজন’।  
 
এ নোটিশ পাওয়ার তিনদিনের মধ্যে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করেন আইনজীবী নিখিলেশ চাকমা নিকোলাস।
 
এদিকে লংগদু থানায় বাড়ি-ঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় আটদিন পর পাহাড়িদের পক্ষ থেকে শনিবার (১০ জুন) রাতে একটি মামলা করেন কিশোর কুমার চাকমা।

এর আগে গত ০২ জুন অগ্নিসংযোগের ঘটনার রাতেই পুলিশ বাদী হয়ে লংগদু থানায় অন্য একটি মামলা করে।

গত ০১ জুন খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের চার মাইল (কৃষি গবেষণা এলাকা সংলগ্ন) এলাকায় যুবলীগের লংগদু সদর ইউনিয়ন শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়নের মরদেহ পাওয়া যায়।

গত ০২ জুন সকালে ময়না তদন্তের পর নয়নের মরদেহ লংগদু উপজেলা সদরে নেওয়ার পর ঘটনার মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন এলাকাবাসী। এক পর্যায়ে তিনটিলা পাড়া, বাত্যাপাড়া,  উত্তর ও দক্ষিণ মানিকজুড় এবং বড়াদম এলাকায় পাহাড়িদের ঘর-বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

গত শনিবার হত্যার ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মাইনি নদী থেকে নয়নের মোটরসাইকেলটিও উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- লংগদুর রাঙ্গিপাড়ার জুনেল চাকমা (১৭) ও খাগড়াছড়ির বাবুছড়ার রুনেল চাকমা (৩২)।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০৩ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০১৭
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।