ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

দশ পদের পদমর্যাদা রদবদল করতে বলেছেন সুপ্রিম কোর্ট

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৬
দশ পদের পদমর্যাদা রদবদল করতে বলেছেন সুপ্রিম কোর্ট

রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমে (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) ১০টি পদে রদবদল করতে বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

ঢাকা: রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমে (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) ১০টি পদে রদবদল করতে বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স বিষয়ে ৬২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) আপিল বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়।

রায়ে জেলা জজদের ষোল ক্রমে সচিবদের সমমর্যাদা এবং সতের ক্রমে অতিরিক্ত জেলা জজদের রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। বাকি আটটি পদে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ অনুসারে সরকার পদক্রম পরিবর্তন করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন আপিল বিভাগ।

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল নিষ্পত্তি করে গত বছরের ১৫ জানুয়ারি সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ ওই রায় দেন। অন্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ( বর্তমান প্রধান বিচারপতি), বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী (আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি)।

বাকি যে আটটি পদে রদবদল করতে বলা হয়েছে সেগুলো হলো- প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল, সংসদ সদস্য, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল, ন্যায়পাল এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান।  

প্রধান বিচারপতিকে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমমর্যাদায় নিতে বলা হয়েছে। কারণ হিসেবে আদালত রায়ে বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে এ দু’টি পদ একসঙ্গে চার নম্বর তালিকায় ছিল। সে সময় দুই নম্বরে উপ রাষ্ট্রপতি এবং তিন নম্বরে ছিলো প্রধানমন্ত্রীর পদ । কিন্তু উপ রাষ্ট্রপতির পদ উঠে যাওয়ায় দুই নম্বরে প্রধানমন্ত্রীকে ও তিন নম্বরে স্পিকারকে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রধান বিচারপতিকে চার নম্বরে রাখা হয়। তাই এখন স্পিকারের সঙ্গে তিন নম্বরে প্রধান বিচারপতিকে সঙ্গে রাখতে হবে।


বর্তমানে আট নম্বরে থাকা আপিল বিভাগের বিচারপতিদেরকে মর্যাদাক্রমের সাত নম্বরে রাখতে বলা হয়েছে।

নয় নম্বরে থাকা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদেরকে আট নম্বরে আনতে হবে।
পনের নম্বরে থাকা অ্যাটর্নি জেনারেলকে আট নম্বরে রাখতে বলা হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের পদমর্যাদাক্রমের তালিকায় অ্যাটর্নি জেনারেলকে তিন বাহিনী প্রধানের (জেনারেল র্যাংকধারী) ওপরে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে রাখা হয়েছে। আর শ্রীলংকায় এ পদ রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের ওপরে।
তেরতে থাকা সংসদ সদস্য ও পনেরতে থাকা কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল এবং ন্যায়পালকে বার নম্বরে আনতে বলা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যানকে ষোল থেকে পনের নম্বরে রাখতে বলা হয়েছে।  

রায়ের অভিমতে আদালত এভাবে রেখে সরকার আইন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সবশেষে হাইকোর্টের রায়ের আট দফা নির্দেশনার সংশোধন করে আদালত বলেন, সংবিধান যেহেতু রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন, সেহেতু রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমের শুরুতেই সাংবিধানিক পদাধিকারীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।

জেলা জজ ও সমমর্যাদার বিচার বিভাগীয় সদস্যরা রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমের চব্বিশ নম্বর থেকে ষোল নম্বরে সরকারের সচিবদের সমমর্যাদায় রাখতে হবে।

অতিরিক্ত জেলা জজ ও সমমর্যাদার বিচার বিভাগীয় সদস্যদেরকে সতের নম্বর ক্রমেই অর্থাৎ জেলা জজদের ঠিক পরেই রাখতে হবে।

১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে একটি রিট আবেদন দায়ের করেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর জেলা জজদের পদমর্যাদা সচিবদের নিচে দেখানো কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি দেওয়া রায়ে ৮টি নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ নির্দেশনা অনুসারে ৬০ দিনের মধ্যে নতুন তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে পরে আপিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আব্দুর রব চৌধুরী। হাইকোর্টে আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুল মতিন খসরু, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও মো. আসাদুজ্জামান।


বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৬
ইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।