ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

পারিবারিক অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে কেন?

মানবাধিকার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৪
পারিবারিক অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে কেন?

চারদিকে দৃষ্টি ফেরালে একটি প্রশ্ন বারবার সামনে এসে দাঁড়ায়। সমাজ কি দিন দিন অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে? সমাজ মানে মানুষ-মানে আমরা।

গণমাধ্যমে চোখ রাখলেই সামনে এসে পড়ে খুন, ডাকাতি, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক ঘটনা।

খুনের পর লাশ গুম, মেরে খাটের নিচে মাটি চাপা দিয়ে রাখা, লাশ লুকিয়ে রাখা-এই সব লোম হর্ষক ঘটনা এখন গণমাধ্যমের প্রতিদিনের খবর। গা শিউরে ওঠার মতো একেকটি ঘটনা।
 
দিনের পর দিন এসব ঘটনা হিংস্র থেকে হিংস্রতর রূপ ধারণ করছে। অপরাধ প্রবণতা এখন সমাজ থেকে ঘরে প্রবেশ করেছে। পারিবারিক অপরাধ বেড়েছে বহুগুণ। এবং তার ভয়াবহতা ও হিংস্রতা ততোধিক।

এটি একটি অপরাধ প্রবণ সমাজেরই চিত্র। একথা সত্য, কোনো সমাজ বা রাষ্ট্রই পুরোপুরি অপরাধ মুক্ত নয়। পার্থক্য কেবল তার পরিমান ও মাত্রা নিয়ে। এর ওপরই নির্ভর করে একটি সমাজ কতটা অপরাধপ্রবণ বা নিরাপদ।

আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন ক্রমেই ক্ষয়িষ্ঞু হয়ে যাচ্ছে। অসহিষ্ঞুতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ব্যক্তি, পরিবার, দল, গোষ্ঠী, সমাজ এমনকি রাষ্ট্র-সব প্রতিষ্ঠানেই মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে। শিথিল হয়ে যাচ্ছে সব বন্ধন।

যেকোনো সমাজই পরিবর্তনশীল। পরিবর্তনশীল সমাজই টিকে থাকে। পরিবর্তনশীল সমাজের সবগুলো বৈশিষ্ট্যই কোনো না কোনোভাবে প্রতিফলিত হয় পরিবারসহ অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠান বা কাঠামোতে। পরিবর্তনের এ বিষয়গুলো একটি সমাজের জন্য কতটা ইতিবাচক বা নেতিবাচক তার ওপরই নিভর্র করে পরিবর্তনশীল সমাজের ভবিষ্যৎ।

কারণ, পরিবর্তনই শেষ কথা নয়। টেকসই ও ইতিবাচক সামাজিক পরিবর্তনই মূল কথা। আমাদের সমাজের মূল্যবোধগুলোর খুব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। তার স্থলাভিষিক্ত হচ্চে নতুন সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি। কিন্তু নতুন এ উপকরণগুলো আবহমান সমাজের জন্য কতটা উপযোগী তা আমরা বিবেচনা করছি না। একটি সমাজ ও সমাজের মানুষ কোনো নতুন সংস্কৃতি বা আচরণকে আলিঙ্গন করার জন্য আদৌ প্রস্তুত বা উপযোগী কিনা সেটি অত্যন্ত মৌলিক প্রশ্ন।

পাশ্চাত্য সভ্যতা, সংস্কৃতি, এমনটি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের সংস্কৃতি দ্বারা আমারা যেভাবে তাড়িত হচ্ছি তার প্রতিক্রিয়া কখনো শুভ হতে পারে না।

কারণ, প্রত্যেকটি সমাজ বিকশিত হতে চায় তার আপন ইতিহাস, সংস্কিৃতি ও ভাবধারায় এবং তার নিজস্ব পরিমন্ডলে। কিন্তু অপরের আদব-লেহাজ সংস্কৃতি নিজের সমাজে অনুপ্রবেশ ঘটালে সেই সমাজের মৌলিক কাঠামো ভেঙ্গে পরে ও ভবিষ্যৎ অগ্রগতি-উন্নয়নের পথও হয় বিপদগ্রস্ত।

আমরা এখন সেই ক্রান্তিকালই অতিক্রম করছি।  

যে সামাজিক, রাজনৈতিক  অস্থিরতার মধ্য দিয়ে আমরা দিন যাপন করছি তার ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্চে পরিবারেও।

পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র- সব স্তরেই যে না পাওয়ার বেদন, হতাশা, ক্রোধ, হিংসা তার বহি:প্রকাশ ঘটে কোনো একটি ঘটনায়-এটিই মানসিক প্রবৃত্তি। চলমান অপরাধ ও নৃশংসতার এটি একটি বড় কারণ। এটি একটি অস্থির ও হতাশাগ্রস্ত সমাজেরই প্রতিচিত্র।  

আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করাই এ অবক্ষয় রোধের প্রধান উপায়। এখান বলে রাখা প্রয়োজন, আইনের শাসন মানে আদালতে ন্যায় বিচার প্রতষ্ঠা করা নয়।

সমাজের সর্বস্তরে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা। ন্যায় বিচার মানে সমাজের সব স্তরে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। ন্যায়ভিত্তিক একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। এমন একটি সমাজেই সামাজিক মূল্যবোগুলো জাগ্রত থাকে।

সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের পাশাপশি পারিবারিক সম্পর্কগুলোও মধ্যেও একধরনের পরিবর্তন আসছে। এ পরিবর্তন আমাদের সমাজের জন্য ইতিবাচক নয়। এটি ক্ষয়িষ্ঞু সমাজের লক্ষণ। কিন্তু আমরা তা চাই না। আবহমানকাল থেকে প্রচলিত পারিবারিক সম্পর্কগুলোর এ পরিবর্তন আমাদের আগামী দিনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, আগামী দিনের পারিাবারিক ও সামাজিক কাঠামো বা মূল্যবোধের রুপরেখা কেমন হতে হচ্ছে যা হতে পারে তা আমাদের কাছে স্পস্ট নয়। কিন্ত তার আগেই আমরা পরিবর্তনের জোয়োরে নিমজ্জমান।

আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সামাজিক অনুশাসন থেকে মূল্যবোধ বিষয়টি দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা পাঠ্যক্রমেতো নেই-ই। সেই সাথে সমাজের যে প্রচলিত পাঠ্যক্রম সেখানেও মূল্যবোধের পরিচর্যা নেই। প্রজন্মের মানসিক ব্যবধানও এক্ষেত্রে একটি বড় কারণ। এখানে প্রাচীনরা যেমন নতুনের প্রতি ইতিবাচক নয়, আর অর্বাচীনরাও  পূর্বসূরীদের প্রতি নয় শ্রদ্ধাশীল। নতুনের হাত ধরে পুরোনো অভিজ্ঞতার আলোকে সমাজ বিনির্মানের কথা আমরা ভুলে গেছি।

পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেই একটি আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।