ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

আইন প্রণয়নে সামাজিক প্রেক্ষাপট

মানবাধিকার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৪
আইন প্রণয়নে সামাজিক প্রেক্ষাপট

একটি উন্নত গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাষ্ট্রের মৌলিক ভিত্তি হলো স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা। সেই সাথে রাষ্ট্রের সব নাগরিকের জন্য মৌলিক মানবাধিকার ও মানবিক মর্যাদার নিশ্চয়তা থাকতে হবে।

গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার পরস্পর নির্ভরশীল।

সাংবিধানিকভাবে আমরা একটি প্রগতিশীল রাষ্ট্র। কারণ, আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতির মধ্যে আছে গণতন্ত্র, সুনির্দিষ্ট অর্থে সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি। তাছাড়া আমরা মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছি একটি শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মানের লক্ষ্যে যেখানে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। শোষণ-বঞ্চনাহীন গণতান্ত্রিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা রচনাই ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার মূল প্রেরণা। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রাম একই লক্ষ্য অর্জনের রাজনৈতিক দর্শন।   

ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-নারী-পুরুষ ভেদে বৈষম্যহীণ সমাজব্যবস্থাই আমাদের লক্ষ্য। স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে শুরু করে বর্তমান সংবিধান পর্যন্ত সবগুলো দলিলেই তার ধারাবাহিতকা আছে। কিন্তু মূল প্রশ্নটি হলো বাস্তবায়নের।

আমাদের প্রথম সংবিধানেও স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রতিশ্রুতি ছিল। ছিল গণতন্ত্র। কিন্তু সামরিক শাসনের ফলে মানুষ স্বাধীন বিচার বিভাগের সুফল ভোগ করতে পারেনি। বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগ থেকে পৃথক করার বিষয়টি প্রতিশ্রুতি থাকলেও তার বাস্তবায়ন করতে আমাদের অনেক দিন লেগেছে। কারণ, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা আমাদের ছিলনা।  

স্বাধীন বিচার বিভাগের মূল উদ্যেশ্যই হলো মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা। ন্যায়বিচার ভিত্তিক একটি সমাজ নির্মান করা। তাই বিচার ব্যবস্থায় মানবাধিকারের ধারনাটিই মূখ্য।

সামাজিক ন্যায়বিচার তথা শোষণমু্ক্ত সমাজ গড়তে হলে রাষ্ট্রের সব স্তরেই বৈষম্যহীন সুযোগ সুবিধার নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। নারী-পুরষ নির্বিশেষে সবাইকে রাষ্ট্রের মূল ধারার সাথে মিশে সমাজ বিনির্মানে ভূমিকা রাখতে হবে।

কারণ, নারীই সমাজের ভীত গড়ার মূল শক্তি। শিক্ষা ও কর্মস্থলে নারীকে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু নারীরা শিক্ষায় এগিয়ে আসলেও সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রে তারা এখনো পিছিয়ে আছে। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি নারীদেরকে আরো অগ্রগামী করতে পারে।  

যুগোপযুগি আইন ও বিচার ব্যবস্থা আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রধান নিয়ামক । ব্রিটিশের আইন দিয়ে আধুনিক রাষ্ট্রপরিচালনা সম্ভব না। তাই বাস্তবসম্মত ও প্রাসঙ্গিক আইন প্রণয়ন করতে হবে। তা না হলে চুরান্তবিচারে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে না।

সেই সাথে গণতান্ত্রিক চেতনা সম্পন্ন প্রশাসনিক ব্যবস্থাও জরুরি। কারণ, আইন নয়, আইনের প্রয়োগটিই বেশি জরুরি। আমাদের আইন কার্যত ইংল্যান্ডের আইনের মামলাসমূহ ও বিধান থেকে উদ্ভুত। কিন্তু ইংল্যান্ডের প্রেক্ষাপট ও আমাদের বাস্তবতা এক নয়। আইন ও আইনের প্রয়োগ ও সেই সাথে সুশাসন নির্ভর করে সামাজিক প্রেক্ষাপট ও আইনের প্রতি মানুষের মনোভাবের ওপর যা আমাদের দেশ ও ইংলান্ডে সম্পূর্ণ ভিন্ন। শুধু ইংল্যান্ড কেন, সব দেশের প্রেক্ষাপটই ভিন্ন। তাই আইন প্রণয়ন করতে হয় সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।