ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

ভোক্তা অধিকার আইন ও বাস্তবতা

মানবাধিকার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৪
ভোক্তা অধিকার আইন ও বাস্তবতা

ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ ও তাদের অধিকার রক্ষায় একটি কার্যকর আইন প্রণয়নের দাবি অনেক দিনের। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ সালে প্রণয়ন করা হয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯।

আইনটি প্রণয়নের ফলে ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও ভোক্তা তথা জনগণ এর সুফল পেতে শুরু করেছে।  

‘ভোক্তা অধিকার’ নতুন কোনো বিষয় নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন আছে। তারা বহুদিন থেকেই এধরনের আইন বাস্তবায়নের সুফল পেয়ে আসছে। একটি কার্যকর ভোক্তা আইনের ফলে সেসব দেশে জনস্বার্থ তথা ভোক্তা অধিকার আজ একটি প্রতিষ্ঠত বিষয়। ব্যবসা-বাণিজ্য তথা ভোক্তা অধিকারের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ন্যায্যতা ও ন্যায়বিচার। দাম দিয়ে ভেজাল পণ্য ও সেবা ক্রয়ের কথা অনেক দেশে আজ কল্পনাও করা যায়না। লাইসেন্স বাতিলতো আছেই, সেই সাথে আছে ফৌজদারি দণ্ড। তাই আইনের বাস্তবায়নটাই বড় কথা।

ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণের প্রথম পদক্ষেপ হলো জনসচেতনা বৃদ্ধি। কিন্তু আমাদের মাঝে অর্থাৎ ভোক্তাদের মাঝেই সে সচেতনা সৃষ্টি হয়নি। ফলে, ভোক্তারা পদে পদেই বঞ্চিত হচ্ছে তাদের অধিকার থেকে। মিথ্যাচার, ভেজাল, ফর্মালিন আজ ভোগ্যপণের সাথে মিশে গেছে। এমনকি ওষুধ দিয়ে গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে।

আইন প্রণয়নের পর বিভাগ, জেলা ও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকায় বাজার মনিটরিং ও অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে এ আইন বাস্তবায়ন কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। অর্থাৎ তৃণমূলে আংশিকভাবে এ আইন বাস্তবায়নের প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু জনগণের দোড়গোড়ায় এ আইনকে পৌছে দিতে হবে। সচেতন করতে হবে সবাইকে।

যদিও অতি ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও জনগণ এর সুফল র্কিছুটা পেতে শুরু করেছে। সরকার আইন প্রণয়ন করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নামে একটি অধিদপ্তর সৃষ্টি করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের অধীনে কাজ করছে এ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশের ৭টি বিভাগীয় কার্যালয় ও ৯টি জেলায় কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু পর্যায়ক্রমে সবকটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

তবে, পুরোপুরি এর বাস্তবায়ন না হওয়াতে তৃণমূল ভোক্তাদের স্বার্থ এখনো পরাভূত। আইন বাস্তবায়ন না হওয়াতে ভোগান্তিতে আছে দেশের জনগণ। ভোক্তা অধিকার বলতে যে একটি বিষয় আছে সেটিই আমাদের মাঝে নেই। প্রতারণা যেনো আমাদের নিত্যসঙ্গী।  

খাদ্য ও ভোগ্যপণ্যে ভেজাল থাকবে এটি আমাদের দেশে একটি প্রতিষ্ঠিত বিষয়। সেই সাথে ওজন ও মানের তো কোনো বালাই নেই। পয়সা গুনেও আসল ও ভেজাল পণ্য পাওয়া যাবে না। কিন্তু শাস্তিতো অনেক পরের কথা এনিয়ে কথা বলাও অনেক ক্ষেত্রে বিপজ্জনক।

জনগণের দীর্ঘ দাবীর প্রেক্ষিতে সরকার আইন ও বিধি প্রণয়ন করলেও এর বাস্তবায়ন নাই। মূলত জনগণের পক্ষথেকেই এর বাস্তবায়নের জন্য তেমন ইতিবাচক সারা নেই। আইন-শৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে কিছু ধরপাকর ও  জরিমানা এই যা কার্যক্রম। এর বাইরে ব্যাপকহারে জনগণের মাঝে তেমন কোনো সারা নেই। ফলে এর সুফল পেতে হলে জনগণকেই এগিয়ে আসতে হবে।

কিন্তু জনগণের এ দূর্বলতা কাজে লাগিয়ে অনৈতিক লাভ করে যাচ্ছে অতিমুনাফাখোর একটি চক্র। এ চক্র ভেদ করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা প্রায় দুরুহ। তাই দেখেও না দেখার ভান। সবকিছুই গা সহা হয়ে গেছে।

আইনে আছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ নামে একটি সংস্থা থাকবে। আইনানুযায়ী তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী পদাধিকার বলে এর চেয়ারম্যান ও বাণিজ্য সচিব, এনএসআইয়ের মহাপরিচালক, শিল্প মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম-সচিব, বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিবসহ ২০ জন সদস্য নিয়ে এ পরিষদ গঠিত।
 
২০০৯ সালের আইনটি হওয়ার আগে কমবেশি ৪০ টি আইন ও ধারা বিচ্ছিন্নভাবে ভোক্তা অধিকারের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিল। ২০০৯ সালের আইনের মাধ্যমে সবগুলো প্রাসঙ্গিক বিষয় একসাথে করা হয়।

ভোক্তা অধিকার নিয়ে আরো যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য আইন আছে তার মধ্যে অন্যতম হলো বিএসটিআই অধ্যাদেশ ১৯৮৫, অত্যাবশ্যক পণ্যসামগ্রী আইন ১৯৫৬, নিরাপদ খাদ্য আইন ১৯৫৯, পণ্য বিক্রয় আইন ১৯৩০, ওজন ও পরিমাপ আইন ১৯৮২ ও এক্রেডিটেশন বোর্ড আইন ২০০৬। সবগুলো আইনেই ভোক্তা অধিকারের কথা বলা আছে।

তবে ২০০৯ সালের আইনের একটি বড় সমস্যা হলো এখানে ভোক্তাদের অধিকারগুলো কি কি তা বর্ণনা করা হয়নি। তবে অধিকার লংঘন হলে ভোক্তা বা কর্তৃপক্ষের করণীয় বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়েছে। আইনটি ভোক্তা অধিকার কাউন্সিল ও অধিদপ্তরকেউ গুরুত্ব দিয়েছে। অধিকারভিত্তিক ও সে অধিকার রক্ষামূলক মনোভাব আইনে অনেকটাই অনুপস্থিত।  

ভারতে আইনানুযায়ী কর্তৃপক্ষ ভোক্তা অধিকার লংঘনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে। এটি উপ-আইনগত ব্যবস্থা-quasi-judicial step। ১৯৯৬ সালের আইনানুযায়ী সে অধিকার দেওয়া হয়েছে। সেখানে জাতীয়, রাজ্য ও জেলা পর্যায়ে তিনস্তর বিশিষ্ট আইনী পদ্ক্ষেপ নেওয়ারই বিধান আছে।  
 
আমাদের আইনের ১০ (১) ধারা অনুযায়ী যে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কমিটি গঠন করা হয়েছে তা কতটা কার্যকর এ নিয়ে প্রশ্ন আছে। তবে, অনেক ক্ষেত্রে লোকবলের অভাবে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছেনা।

এভাবে আইনের অনেক ধারাই কার্যকর করা যায়নি। আইনটির যথাযথ প্রয়োগ হলে ভোক্তা অধিকার অনেকাংশেই সংরক্ষিত হবে। এজন্য কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।