ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

কিশোর অপরাধ ও আমাদের আইন

মানবাধিকার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৪
কিশোর অপরাধ ও আমাদের আইন ছবি: প্রতীকী

পৃথিবীর অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও শিশু অপরাধীদের বিচার  ও সংশোধনের জন্য পৃথক আদালত ও সংশোধনাগার আছে। শিশুদের বয়স বিবেচনায় নিয়ে শিশু ও কিশোর অপরাধের বিচার ও সংশোধন করার জন্য এ ব্যবস্থা।



অধিকাংশ দেশেই কিশোর অপরাধের বিচার করার জন্য ভিন্ন আদালত ও বিচার ব্যবস্থা আছে। আমাদের বিদ্যমান আইনেও প্রাপ্তবয়স্ক আসামিদের সাথে একই আদালতে বা কার্যক্রমের মতো শিশুদের বিচার না করার বিধান আছে।

আইনে শিশু অপরাধীদের বিচারের চেয়ে তাদের সংশোধনের বিষয়টিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণেই তাদের বিচারের প্রক্রিয়াটিও হতে হবে সংশোধনমূলক যেনো কিশোর হৃদয়ে তা কোনোভাবেই বিরুপ প্রভাব বা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে না পারে। সে আলোকেই তাদেরকে পৃথক আদালতে বিচারের কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, কিশোর সংশোধনাগার প্রতিষ্ঠার কথা।

কিন্তু আইন থাকার পরও আমরা অনেক সময়ই বিচারের ক্ষেত্রে শিশুদের মানবাধিকার লংঘনের সংবাদ দেখি। মাঝেমধ্যেই শিুশু ও বয়স্কদের একইভাবে একই আদালতে প্রকাশ্যেই বিচার করা হয়। যা শুধু আইন নয়, মানবিকতা ও মানবাধিকারেরও পরিপন্থি। একথা সত্যি যে, প্রয়োজনের তুলনায় এক্ষেত্রে সক্ষমতা বা সুযোগ অত্যন্ত সীমিত।  

আইনে জেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকা শিশু আদালত প্রতিষ্ঠার কথা বলা আছে। কিন্তু দেশের ৬৪টি জেলা শহরের জন্য আছে মোট তিনটি কিশোর আদালত।

এ আদালতগুলো আছে যথাক্রমে যশোর, টঙ্গি ও কোনাবাড়িতে। ৬৪টি জেলার জন্য তিনটি আদালত কতটা অপ্রতুল তা বলাই বাহুল্য। তাছাড়া, জনসংখ্যা ও কিশোর অপরাধীদের সংখ্যার তুলনায় তা খুবই কম। দূরত্বের হিসেবেও কিশোর আদালতের সংখ্যা আরো বাড়ানো প্রয়োজন।   

কিশোর আদালত ও কিশোর সংশোধনাগার অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কিন্তু সেক্ষেত্রেও বিরাজ করছে অপ্রতুলতা। মোট তিনটি কিশোর সংশোধনী কেন্দ্রের মধ্যে দুইট ছেলেদের আর একটি মেয়েদের।

১৯৭৪ সালের আইনের অধীনেই দেশের প্রথম কিশোর আদালত প্রতিষ্ঠিত হয় টঙ্গি কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে। ১৯৭৮ সালে এই আদালতটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পর থেকে বিচার কাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে এ আদালত ভূমিকা রেখে আসছে। প্রয়োজন ও বাস্তবতার কথা মাথায় রেখেই এ আদালত ও সংশোধনাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। সর্বশেষ আদালতটি প্রতিষ্ঠত হয় ২০০৩ সালে।
 
আমাদের দেশে শিশুদের জন্য পৃথক বিচার ব্যবস্থার সূচনা ১৯৭৪ সাল থেকে। ১৯৭৪ সালের শিশু আইন ও ১৯৭৬ সালের শিশু নীতিই আমাদের প্রথম আইন ও বিধি। এর পর থেকে বিভিন্ন আইনে শিশুদের কথা বলা আছে। কিন্তু শিশুদের জন্য পূর্ণাঙ্গ আইন ১৯৭৪ সালের আইনটিই। এটি ২০১৩ সালে সংশোধিত হয়ে আরো পূর্ণাঙ্গরূপ ধারণ করে।

বাংলাদেশ মূলত ১৯৮৯ সালের শিশু অধিকার সনদে সাক্ষর করার মাধ্যমে শিশু বা কিশোর অপরাধ ও বিচার ব্যবস্থার ওপর জোড় দেয়।

আগেই বলা হয়েছে, দেশের সর্বত্র প্রয়োজন মাফিক আদালত প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। মাত্র তিনটি আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী টঙ্গি আদালতের অধিনে আছে ঢাকা, চট্রগ্রাম ও সিলেট বিভাগ ও যশোরের মধ্যে আছে খুলনা রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগ। অন্যদিকে কোনাবাড়িতে কেবল মেয়ে শিশুদের আদালত ও সংশোধনাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
 
আইনে কিশোরদের বিচারের প্রক্রিয়ায়ও আছে ভিন্নতা। তাদেরকে হাতকড়া পড়ানো বা কোমড়ে বেড়ি বা রশি ইত্যাদি পড়ানো নিষেধ। এছাড়া আরো অনেক বিধান আছে যা শিশু ও কিশোরদের জন্য মঙ্গলজনক ও তাদের বিচারিক অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।  

যেমন বলা আছে, একটি শিশু কোনো অপরাধে গ্রেপ্তার হলে বিষয়টি পুলিশ প্রবেশন কর্মকর্তার কাছে জানাবেন। এর মাধ্যমে প্রথমে শিশুকে একজন প্রবেশন কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তরের মাধ্যমে তাকে মূলত সংশোধনমূলক প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর করা হয়। প্রবশন কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই আদালত পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে।

কিন্তু আমাদের দেশে প্রয়োজনের তুলনায় প্রবেশন কর্মকর্তা আছেন খুবই কম। সেকারণে, অনেক সময়ই বিচার ও আদালতের কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে। বিচারের প্রক্রিয়াটি শিশুবান্ধব হয় না।

২০১৩ সালে শিশু আইনটি সংশোধন হলেও এর পুরোপুরি বাস্তবায়ন এখনো হচ্ছে না।

কিশোর আদালতের এখতিয়ারের একটি সীমাবদ্ধতা আছে তা হলো এ আদালত শিশু বা কিশোরের কোনো গুরুতর অপরাধ আমলে নিতে পারেনা। এ গুরুতর অপরাধের মামলাগুলোর বিচার করে জেলা ফৌজদারি আদালত।

আইনের ১৭ ধারায় বলা আছে, যে সকল দালান বা কামরায় প্রচলিত আদালতের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় তাছাড়া যতদূর সম্ভব অন্য কোনো দালান বা কামরায়  প্রচলিত আদালতের মতো কাঠগড়া ও লালসালু ঘেরা আদালতকক্ষের পরিবর্তে একটি সাধারণ কক্ষে শিশু-আদালতের অধিবেশন বসবে।

২০১৩ সালের সংশোধিত শিশু আইনটি কার্যকর আইন। এটি শিশুদের অধিকার ও বিচারের ক্ষেত্রে একটি আর্ন্তজাতিক মানসম্পন্ন আইন। কিন্তু সক্ষমতার অভাবে এ আইনের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশু কিশোর তথা রাষ্ট্র।

তাই এ আইনের ১৬ ধারায় যে আদালত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ইতিবাচক মনোভাবের কথা বলা আছে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে তিনটি আদালত দিয়ে দেশের সব শিশু ও কিশোর অপরাধের বিচার করা ও তাদের সংশোধন করা যাবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।