শিক্ষায় এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। সরকার শিক্ষা প্রসারে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়ার ফলে এক্ষেত্রে অর্জিত হচ্ছে উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পাশের পর প্রশ্ন আসে উচ্চ শিক্ষার। উচ্চমাধ্যমিকে বিভিন্ন বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ অথবা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এ ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে উত্তীর্ণ হয়ে অনেকে পরবর্তী স্তরে শিক্ষার সুযোগ পায়। আর বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী বঞ্চিত হয় উচ্চ শিক্ষার সুযোগ থেকে।
সীমিত সংখ্যক মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকার জন্য সে প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তির চাপও থাকে বেশি। শিক্ষার্থির তুলনায় আসন সংখ্যা বহুগুন কম।
বাংলানিউজের খবরে প্রকাশ, কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির প্রথম বর্ষে ভর্তির জন্য প্রতি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছেন ৪৫.৭৫ জন শিক্ষার্থী। ৫টি ইউনিটের সর্বমোট ৬ হাজার ৫৮২টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ১ হাজার ১৩৮ জন।
বিজ্ঞান অনুষদের অধীন ‘ক’ ইউনিটের ১ হাজার ৬৪০ আসনের বিপরীতে আবেদন করেছেন ৮১ হাজার ৯৪৮ জন। এখানে আসন প্রতি লড়বেন ৫০ জন শিক্ষার্থী।
কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীন ‘খ’ ইউনিটে ২ হাজার ২২১ আসনের বিপরীতে আবেদন করেছেন ৪২ হাজার ৪১৭ জন। প্রতি আসনে লড়বে ২০ জন।
আর বাণিজ্য অনুষদ ও চারুকলা অনুষদে প্রতি আসনের বিপরীতে লড়বে যথাক্রমে ৫০ জন ও ১০৯ জন শিক্ষার্থী। কাজেই, বোঝাই যাচ্ছে, উচ্চ শিক্ষা কিভাবে ক্রমেই হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি এতো সংখ্যক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থাকার পরও উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী।
আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা আছে প্রায় ৪০টি আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা শতাধিক।
এছাড়া উচ্চ শিক্ষার ধরন বিবেচনায় এখানে পাঁচ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় আছে। সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়- যেমন ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়- যেমন সিলেট, নোয়াখালি, টাঙ্গাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়- যেমন -বুয়েট, ডুয়েট, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আছে তিনটি ও একটি আছে টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়।
ওই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টিতে যথেষ্ঠ ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
আইনের দৃষ্টিতে উচ্চশিক্ষা সুযোগ হলেও সাধারণ ও প্রাথমিক শিক্ষা একটি সার্বজনীন অধিকার। বিশ্বর সব রাষ্ট্রই তার নাগরিকদের জন্য বাধ্যতামূলক বিনা-বেতনে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করতে আইনত বাধ্য।
শুধু তাই নয়, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাতেও সবার জন্য সহজপ্রাপ্য করতে হবে। উচ্চশিক্ষা প্রদানের ভিত্তি হবে সমতা ও মেধা।
International Covenant on Economic, Social and Cultural Rights শিক্ষাকে একটি অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা সবার অধিকার। সেই সাথে দ্বিতীয় স্তরের শিক্ষার সুযোগও প্রদান করতে রাষ্ট্রকেই।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের অনুচ্ছেদ ২৬এ বলা হয়েছে, Everyone has the right to education. Education shall be free, at least in the elementary and fundamental stages. Elementary education shall be compulsory. Technical and professional education shall be made generally available and higher education shall be equally accessible to all on the basis of merit.
আন্তর্জাতিক আইন নাগরিকদের জন্য অবৈতনিক বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। কারণ, সঙ্গতভাবেই প্রত্যেক মানুষের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা মৌলিক প্রয়োজন।
এছাড়া কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষা সাধারণভাবে সবার জন্য প্রাপ্য করতে হবে। প্রয়োজনের ভিত্তিতে কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষা প্রদান করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
একটি দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির জন্য কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আরো বেশি।
কিন্তু উচ্চশিক্ষা কোনো রাষ্ট্রই তার সব নাগরিকের জন্য নিশ্চিত করতে পারেনা। কয়েকটি রাষ্ট্র উচ্চশিক্ষা সবার জন্য নিশ্চিত করতে পারলেও বেশির ভাগ রাষ্ট্রই সমতা ও মেধার ভিত্তিতেই উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করে।
তবে, উচ্চশিক্ষা রাষ্ট্রের জন্য মৌলিক দায়িত্ব না হলেও এটি প্রত্যেক রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব বটে। উচ্চশিক্ষা নাগরিকদের জন্য একটি সুযোগ। রাষ্ট্র তার যতো সংখ্যক নাগরিকদের এ সুযোগ প্রদান করতে পারবে ততোই তা রাষ্ট্রের জন্যই মঙ্গলজনক।
শিক্ষার উদ্দেশ্য কি তা আমরা সবাই জানি। বলা হচ্ছে, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। জাতি গঠনের মূল শক্তিই হলো শিক্ষা।
কেবল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদই নয়, International Covenant on Economic, Social and Cultural Rights-এর অনুচ্ছেদ ১৩ ও ১৪, ১৯৬০ সালের ইউনেসকো কনভেনশন, ১৯৮১ সালের নারীর প্রতি বৈষম্য বিরোধী কনভেনশন, ২০০৬ সালের কনভেনশনেও শিক্ষার অধিকার স্বীকৃত হয়েছে।
২০১০ সালে আমরা সর্বশেষ একটি শিক্ষা নীতি পেয়েছি। এ শিক্ষানীতিতে শিক্ষার মোট ৩০টি লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও তাগিদের কথা বলা হয়েছে।
এ নীতিতে উচ্চশিক্ষার ৯টি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থায় ও পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে সেই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব না। তাই যুগোপযুগি পাঠ্যক্রম প্রণয়ন এক্ষেত্রে জরুরি। বর্হি:বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে অবশ্যই আমাদের উচ্চশিক্ষার পাঠ্যক্রমের কিছু কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। একথা সত্যি, বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমই যথেষ্ট আধুনিক।
তাই, আধুনিক ও যুগোপযুগি শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব। উচ্চশিক্ষা সুযোগের গণ্ডি পেরিয়ে অধিকারের কাতারে শামিল হতে পারলেই আমরা পাবো আধুনিক মনন ও চেতনা সম্পন্ন একটি জাতি। সমৃদ্ধ জাতি গঠনের প্রয়াসে উচ্চশিক্ষার বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৪