ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

আইন আছে, আইনের সুফল নেই

তাবারুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩১ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৪
আইন আছে, আইনের সুফল নেই ছবি: প্রতীকী

ঢাকা: আইনের বিধিমালা প্রণয়ণ না হওয়া, সরকারের সদিচ্ছার অভাব এবং আইনের প্রচার না হওয়ায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, নিরাপদ খাদ্য আইন, বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক আইনের সুফল পাচ্ছে না জনগণ।

প্রয়োজনের তাগিদে ওই সকল আইন তৈরি করা হলেও ব্যবহারের অভাবে আইনগুলো কার্যত ‘কাজির গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই’ এর মতো অবস্থায় আছে।



আইনবিদরা মনে করেন, কোনো আইন তৈরি হয়ে গেলে তা ব্যবহারের উপযোগী করতে হলে মানুষের কাছে সংশ্লিষ্ট আইনটি সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। একইসঙ্গে আইনের বিধিমালা প্রণয়নের প্রয়োজন পড়ে। তবে বিধিমালা প্রণয়ন ছাড়াও অনেক আইনের সুফল পাওয়া সম্ভব। এর জন্য সরকারকে আন্তরিক হতে হবে।

বাংলাদেশে ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন- ২০০৯’, ‘নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩’, ‘বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন- ১৯৯১’, ‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন-২০১৩’ নামে আইন আছে। কিন্তু এসব আইনের কোনো বিধিমাল প্রণয়ন করা হয়নি। এ সকল আইন সম্পর্কে প্রচারও করা হয়নি।

সূত্র জানায়, ১৩টি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে নিরাপদ খাদ্য আইনের বিধিমালা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে এ আইনের বিধিমালা প্রণয়নে আরো ২ থেকে ৩ বছর সময় লাগবে। যার ফলে এ আইন সম্পর্কে মানুষকে জানানো হচ্ছে না। এতে এখনই এ আইনের সুফলও পাওয়া যাচ্ছে না।

এছাড়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ও পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইনের বিধিমালা প্রণয়নেরও কাজ চলছে।

অন্যদিকে, কয়েকটি সম্পূর্ণ আইন থাকলেও প্রচারের অভাব ও সরকারের সদিচ্ছার অভাবের কারণে সেগুলোর প্রয়োগ হচ্ছে না। এসব আইনের মধ্যে রয়েছে- ‘বিশুদ্ধ খাদ্য আইন- ১৯৫৯’, ‘বাংলা ভাষা প্রচলন আইন-১৯৮৭’, ‘পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন-২০১০’, ‘মাতৃদুগ্ধ বিকল্প, ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি (পুনর্বাসন) আইন-২০১১’, ‘মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন-১৯৯৯’, ‘বাংলাদেশ পানি আইন-২০১৩’, ‘পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন-২০১০’, ‘ট্রেডমার্ক আইন-২০০৯’, ‘পলিথিন নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০০’, ‘কপিরাইট আইন-২০০০’, ‘নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন আইন-২০০২’, ‘গ্রাম আদালত আইন-২০০৬’, ‘নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন-২০১৩’, ‘পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২’, ‘ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন-২০১৩’, ‘মোটরযান নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ-১৯৮৩’।

এ সকল আইনের মধ্যে নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ ও বাংলা ভাষা প্রচলন আইন-১৯৮৭- এ দু’টি আইন বাস্তবায়নে সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবীর পৃথক আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন।

বাংলা ভাষা প্রচলন আইন বাস্তবায়নে রিট আবেদন করেছেন অ্যাডভোকেট ইউনূছ আলী আকন্দ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আইন থাকা সত্ত্বেও সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলন না থাকায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে ওই রিট আবেদনটি করা হয়। এর প্রেক্ষিতে দেশের সকল ব্যানার, সাইনবোর্ড, ফেস্টুন, গাড়ির নম্বর প্লেট ও সম্প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত সকল বিজ্ঞাপন বাংলায় প্রচার করতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এ আইন বাস্তবায়নে সরকার কয়েকবার আদালতের কাছ থেকে সময় বাড়িয়ে নিয়েছে বলেও জানান তিনি।

অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী সৈয়দ মহিদুল কবির নিরাপদ খাদ্য আইন-২০১৩ বাস্তবায়নে জনস্বার্থে একটি রিট দায়ের করেন। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে আইনটি বাস্তবায়নে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানতে চেয়ে গত ২৬ মে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

সাবেক বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীন বাংলানিউজকে বলেন, দেশে অনেক আইন রয়েছে। জনকল্যাণের বিবেচনা থেকেই এসব আইন তৈরি করা হয়েছে। সরকার যদি গণমুখী হয় তাহলে আইন প্রয়োগ করা সম্ভব। তা না হলে দেশের কোনো আইনেরই সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

বিধিমালা প্রণয়ন ছাড়া আইন প্রয়োগ করা যায় কি-না ও অনেক আইন কার্যকর না থাকার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে প্রবীণ আইনবিদ ব্যারিস্টার রফিক-উল হক বাংলানিউজকে বলেন, অনেক ক্ষেত্রে আইন তৈরি করার সময় উল্লেখ থাকে, বিধিমালা ছাড়াই সেই আইন প্রয়োগ করা সম্ভব। আবার অনেক আইন বিধিমালা ছাড়া যথাযথভাবে প্রয়োগ করা যায় না।

কিছু কিছু আইনের প্রয়োগ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, নিরাপদ খাদ্য আইন ও বাংলা ভাষা প্রচলন আইন বাস্তবায়নে সরকারের পদক্ষেপ জানতে চেয়ে ইতোমধ্যে হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।