ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

আদালত ন্যায় বিচার ও আমাদের বিচার ব্যবস্থা

আইন ও মানবাধিকার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০১৪
আদালত ন্যায় বিচার ও আমাদের বিচার ব্যবস্থা

পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশের বিচার ব্যবস্থারই রয়েছে নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য। প্রতিটি দেশের বিচার ব্যবস্থা তার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক বিবর্তনের ফলে গড়ে ওঠা একটি আইনি ব্যবস্থা।



আমাদের দেশের বর্তমান আইন ও বিচার ব্যবস্থা যেমন কয়েক শতাব্দীর ঔপনিবেশিক শাসনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে তেমনি অন্যান্য দেশেও রয়েছে এরকম শাসনতান্ত্রিক ইতিহাস।

বৃটেনে যেমন বিচার বিভাগের বেশকিছু বৈশিষ্ট আছে যার জন্য এর সুনামও রয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো, সেখানকার বিচারপতিরা সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং ক্ষমতা নিরপেক্ষতার প্রতীক। ন্যায়চিার ছাড়া অন্যকিছু দ্বারাই সেখানকার বিচার ব্যবস্থা প্রভাবিত নয়।

১৭০১ সালের সেটেলমেন্ট আইন অনুযায়ী বিচারপতিরা রাজার মাধ্যমে নিযুক্ত হন এবং আজীবন অথবা যতদিন সদাচরণ করবেন ততদিন নিজ বহাল থাকবেন।

শাসন বিভাগের ইচ্চার ওপর তাদের পদে বহাল থাকা না থাকা নির্ভর করে না। এতে করে তারা কোনো রকম ভয়-ভীতি বা অনুগ্রহের বশবর্তী না হয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারেন।

ইংলান্ডের বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিশ্চিৎ হওয়ার পেছনে আরো কয়েকটি কারণ আছে। সেখানে বিচারপতিদের উচ্চ বেতন-ভাতা প্রদান করা হয় যাতে ব্যক্তিগত আর্থিক নির্ভরশীলতার জন্য ন্যায় বিচার কোনো ভাবেই ব্যহত না হয়। ন্যায়বিচারের একটি বড় অনুসঙ্গ হলো দ্রুততম সময়ে বিচারপ্রাপ্তি। যা আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় বাধা। একটি মামলা যদি দীর্ঘদিন চলতে থাকে তখন ন্যায়বিচার তার প্রাসঙ্গিকতা হারায়। ইংলান্ডের বিচারপদ্ধতি খুব সহজ নয় এবং এখনও সেখানে অনেক পুরাতন শিষ্ঠাচার ও  লৌকিকতা বিদ্যমান। তারপরও একটি মামলা অনেক দ্রুত নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। এর প্রধান কারণ বিচারপতিরা যথেষ্ঠই তাদের বিবেচনামূলক ক্ষমতা প্রয়োগ ও ধারণ করে থাকেন। কাজেই প্রগতিশীল আইন প্রয়োগ বিচার ব্যবস্থার একটি বড় নিয়ামক।

আমেরিকার মত ইংলান্ডে বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা নেই বললেই চলে। সেখানে পার্লামেন্ট ইচ্ছামতো যে কোনো আইন পাশ করতে পারে। কোনো আইন শাসনতান্ত্রিক নীতির ব্যতিক্রম কিনা তা নির্ধারনে বিচারালয়ের কোনো ক্ষমতা নেই। সংসদীয় সার্বভৌমত্ব সেখানে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু আমাদের দেশে সেটি নেই। যদিও ইতিবাচক রাজনৈতিক পরিবর্তন ছাড়া সংসদীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে তার ফল শুভ হবে না।  

ফ্রান্সের মতো গ্রেটবৃটেনের কোনো শাসনতান্ত্রিক বিচারালয় নেই। ফ্রান্সের দুই ধরনের বিচারালয় রয়েছে যথা সাধারণ বিচারালয় এবং শাসনতান্ত্রিক বিচারালয়।

ইংলান্ডে সকল মামলা সাধারণ আদালতেই গৃহীত হয়। সেখানে ফ্রান্সের মতো সরকারি কর্মচারীদের বিচারের জন্য কোনো বিশেষ আদালত নেই। ইংলান্ডের সকল নাগরিকদের সাধারণ বিচারালয়ে বিচার করা হয়। আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের আদালত থাকলেও তার বিশেষ সুফল বিচার প্রার্থীরা ভোগ করতে পারছেনা।  

ইংলান্ডের বিচার বিভাগ এবং বিচারপতিরা জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পৃথিবীর  বিভিন্ন দেশের শানসতন্ত্রে জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য  কতগুলো মৌলিক অধিকার লিপিবদ্ধ থাকে। কিন্তু ইংল্যান্ডে তা নেই।

কারণ ইংলান্ডের শাসনতন্ত্রে মৌলিক অধিকার লিপিবদ্ধ নেই। এ কাজটি বিচারপতিরা পালন করে থাকেন। বৃটেনের বিচার বিভাগ সে দেশের জনগণের স্বাধীনতার অভিভাক হিসেবে কাজ করে।

আইনজীবীদের দক্ষতা, সততা ও জ্ঞান ন্যায় বিচার প্রাপ্তির একটি বড় কারণ। কিন্তু আমাদের দেশে ক্রমেই এর ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এই ঘাটতি পূরণ না হলে আগামি দিনের ‘ন্যায়বিচার’ সুদূর পরাহত।

ইংলান্ডের বিচার ব্যবস্থায় জুরি’র ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। জটিলতর ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলার বিচার জুরির মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়।

বিচারকের নিরপেক্ষতা ছাড়া ন্যায়বিচার সম্ভব নয়। বলা হয়, বৃটেনের আদালত সবেচেয়ে নিরপেক্ষ বিচারিক প্রতিষ্ঠান। পাশাপামি  মামলা প্রমাণের ক্ষেত্রে সেখানে কোনো মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করা হয় না। বিচারপতিরা যথাযথ প্রমানের ওপর ভিত্তি করেই মামলার রায় প্রদান করেন। আইনজীবীরাও ভালভাবেই বিষয়টি অনুসরণ করে থাকেন। দীর্ঘ সূত্রিতা ন্যায় বিচারের পরপন্থি। ইংলান্ডের বিচারকরা দেশের আইনসভা ও শাসন বিভাগ থেকে মুক্ত হয়ে নির্ভয়ে ও স্বাধীনভাবে বিচার কাজ পরিচালনান করতে পারেন। বিচারকরা স্বাধীনভাবে কাজ না করতে পারলে রাষ্ট্রে ও সমাজে ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা সম্ভব না। তাই একটি দক্ষ ও ন্যায়ভিত্তিক ন্যায় প্রশাসন আজ সময়ের দাবি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।