ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব

মোঃ জাহিদ হোসেন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৪
শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব

ছাত্র অধিকারের বিরুদ্ধেই যখন ছাত্র রাজনীতির অবস্থান হয় তখন সেই ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন কি? আজ অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বরং যত দিন বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ না হবে তত দিন বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক ও নৈতিক অবক্ষয়ও বন্ধ হবে না।

ভাবছেন কি ভাবে? হাঁ, কারণ আমরা জানি ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য।



কিন্তু সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা দেখলাম আন্দোলনকারী তথা যারা হলো নিতান্ত সাধারণ শিক্ষার্থী তাঁদের ওপরই লাঠি, অস্ত্র ও বোমা নিয়ে ছাত্র রাজনীতির সেই ধারক ও বাহকরা হামলা করেছে।

সেই সঙ্গে তাদের সাথে পুলিশও আন্দোলনকারীদের উপর অমানবিক হামলা ও নির্যাতন চালায় যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে বেশ গুরুত্বের সাথে প্রকাশ পায়। বাদ যায়নি সাংবাদিকও। হামলায় মুখ ঢেকে নেতৃত্ব দেয় রাবির চার প্রোক্টরও। উল্টো আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে এই পর্যন্ত ৬টি মামলা করেছে প্রশাসন, পুলিশ ও ছাত্রলীগ। আসামী করা হয়েছে ১৫০ জনসহ অজ্ঞাতনামা ৫০ শিক্ষার্থীকে।

আজ যারা মামলার ফাঁদে পড়ল তাঁদের কি পরিণতি হবে? তাঁরা কি তাঁদের স্বাভাবিক ছাত্র জীবন চালাবে নাকি মামলার ফাঁদে পড়ে হতাশ কিংবা প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে বরং খারাপ পথেই পরিচালিত হবে। একজন সৎ ও রাজনৈতিক দল নিরপেক্ষ শিক্ষার্থী যখন মামলার ফাঁদে পড়ে ফেরারি হয় তখন তাঁর পরবর্তীতে সৎ জীবন পরিচালিত করা খুবই কষ্টকর হয়।

যাহোক আজব ব্যাপার হল রাবিতে যারা অস্ত্র হাতে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা করল তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা হল না বরং মামলা হল উল্টা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে। এই ক্ষেত্রে অপরাধীরা আছে বীর বেশে। কিন্তু নিজেদের দাবি আদায় করতে যাওয়া সেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা রয়েছেভীত ও পলাতক।

আমরা কি ৭১ এ এমনই দেশ চেয়েছিলাম? এই কি আমাদের সেই স্বাধীন দেশ যে দেশে অধিকারের কথা বলাও অন্যায়!        

ছাত্র রাজনীতিতে ১৯৯০ সালের পর থেকে আমরা সব সময় এমনই দেখে আসছি। এখন ছাত্র রাজনীতি জন্ম দেয় কিছু প্রশিক্ষিত ধর্ষক, কিছু প্রশিক্ষিত খুনি, কসাই ও বোমাবাজ। গ্রেজুয়েশন করার আগেই খুব অল্প বয়স থেকেই তারা এক একটা পাক্কা ক্যাডারে পরিণত হচ্ছে এবং উক্ত বিষয়গুলোর উপর চর্চা করার অল্প বয়স থেকেই রাজনৈতিক স্বীকৃতি পাচ্ছে।

এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে ছাত্র রাজনীতি করার অনুমতি দেওয়া মানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুরু থেকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করার বৈধতা দিয়ে দেওয়া। কারণ যে বা যারা ছাত্র বয়স থেকে খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও বোমাবাজি চর্চা করবে তারা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে কি উপহার দিতে পারবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এইসব দেখে আমরাও হতাশ!
 
আবার অন্য কোন বিশেষ ছাত্র রাজনৈতিক দল আন্দোলন ছিনতাই করেছে অজুহাত দিয়ে সেই আন্দোলনকে বিতর্কিত করা আর পুলিশ ও ছাত্রলীগের অস্ত্রসহ সেই হামলাকে জায়েজ করা কোন সুশীল মানুষের সাজে না বলে আমি মনে করি।
 
বিশ্ববিদ্যালয় হল শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করার স্থান 
মানছি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার খরচ অনেক কম। তাঁর বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয় চালাবার জন্য অনুদান এবং বাজেটও কম থাকে না। কিন্তু এখানে যারা পড়াশুনা করতে আসে তাঁদের অধিকাংশ প্রত্যন্ত গ্রাম ও দরিদ্র পরিবার থেকে আসে।

আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা যেখানে ২/৩ টাকা যাতায়ত ভাঁড়া বাঁচাতে প্রতিদিন মাইলের পর মাইল হেঁটে ক্লাস করতে যায়, যেখানে হোটেল ও ক্যান্টিনে ৫ থেকে ১০ টাকা বাঁচাতে দুপুরে কম খাই সেখানে বছর বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের নানা রকমের ফি আদায়ের নামে দ্বিগুণ টাকা ধার্য করা কতটা সহনীয় ব্যাপার!

রাবি প্রশাসন যে হারে ফি বর্ধিত করেছে তা আমাদের কাম্য নয়। এছাড়া এমন অনেক খাত রয়েছে যার সুযোগ সুবিধা শিক্ষার্থীরা পায় না কিন্তু ভর্তির সময় ঠিকই সেই সব খাত বাবদ প্রত্যেক শিক্ষার্থী থেকে টাকা নেওয়া হয়।

তাছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীকে পড়াশুনার পাশাপাশি তাঁদের পরিবারকেও সাপোর্ট দিতে হয়। অনেক বিজ্ঞ ব্যক্তি প্রশ্ন তুলতে পারেন ছাত্র জীবন হল শুধু পড়াশুনার সময়। পার্ট টাইম টিউশনি করার সময় না।

কিন্তু বাংলাদেশের মত একটি উন্নয়নশীল দেশে অনেক ছাত্র-ছাত্রী যদি নিজের পড়াশুনার খরচ চালানোর জন্য ও তাঁদের পরিবারকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য সামান্য কোন আয়ের থেকে নিজেকে বিরত রাখে তাহলে তাঁদের না খেয়ে মরতে হবে। এই অবস্থায় তাদের পক্ষে অতিরিক্ত অর্থ বহন করা সত্যিই কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
 
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে বিশ্ববিদ্যালয় হল এমন একটি স্থান যা শিক্ষার্থীদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে তাঁদের উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করবে তথা তাঁদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করবে। অন্য কোনো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নয় কিংবা শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে পাস কাটিয়ে অন্যদের স্বার্থ সংরক্ষণ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় নয় ।      
 
লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, রিসার্চ অর্গানাইজেশন ফর লিগ্যাল অ্যাওয়ারনেস অব বাংলাদেশ। ইমেইল: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৩ ঘন্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad