ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আইন ও আদালত

দুদক কবে শক্তিশালী হবে?

মানবাধিকার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৪
দুদক কবে শক্তিশালী হবে?

একটি শক্তিশালী গণতন্ত্র ও জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের জন্য রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই। রাষ্ট্রে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী ও স্বাধীন ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।



রাষ্ট্রের এ সহায়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে মানবাধিকার কমিশন, আইন কমিশন, নির্বাচন কমিশন, দুদক, ন্যায়পাল ইত্যাদি।

আজকের উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলো এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করেছে। এর সুফল হিসেবেই তারা শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় ও গণতান্ত্রিক কাঠামো নির্মান করতে পেরেছে।

আমাদেরক মতো উন্নয়নশীল অর্থনীতি ও গণতান্ত্রিক একটি দেশে অন্য অনেক প্রতিষ্ঠানের চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের সক্রিয় ভূমিকা বেশি জরুরি।

কিন্তু আমাদের দেশে দুদক যথেষ্ট স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে না পারায় রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরে দুর্নীতি বেড়েই চলছে। কেবল তাই নয়, সেজন্য প্রয়োজন দুদককে পুরোপুরি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। কিন্তু আমাদের দেশে দুদক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত স্বাধীনভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে পারেনি। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সময়ে তার নানা ভূমিকার জন্য বিতর্কিত হয়েছে। বর্তমান দুদক আইন যথেষ্ঠ শক্তিশালী হলেও কমিশন তার সুফল পাচ্ছেনা। এক্ষেত্রে আইনের চেয়েও আইনের প্রয়োগ বেশি জরুরি।       

গত বছরে ১০ নভেম্বর নবম সংসদ ২০০৪ সালের দুদক আইন সংশোধন করে 

আমাদের দেশে আইনের ব্যবহার করা হয় সবলের হাতকে আরো শক্তিশালী করা ও দুর্বলকে শাসন করার জন্য। ব্রিটিশ আমলে প্রণীত প্রায় সব আইনেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইনের হাত থেকে অব্যাহতি প্রদানের জন্য একটি বিধান থাকতো।

যদিও পাশাপাশি ১৮৬০ সালে প্রণীত দণ্ডবিধিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোনো অপরাধ করলে তাদের শাস্তি প্রদানেরও ব্যবস্থা ছিল।

ভারত বর্ষে ব্রিটিশদের সবচেয়ে বড় অবদান ছিল আইন ও শিক্ষার প্রসার। ব্রিটিশরা তাদের রাজকর্মচারী ও সেবকদের আইনের উর্ধ্বে রাখার একটা চেষ্টা করতো তাদের নিজেদের স্বার্থেই। দেশে কার্যকর শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই তারা এ নীতি অনুসরণ করতো।  

কিন্তু ব্রিটিশ বিদায়ের অর্ধশতক পরেও রাজকর্মচারী এখনো আইনের উধের্ব থাকার চেষ্টায় লিপ্ত। কেবল দুদক আইনই নয়, ছোট বড় সব আইনেই এখনো সরকারি কর্মচারীরা বিশেষ অধিকার পেয়ে থাকেন।

দুদক আইনের ৩২ক ধারা যুক্ত করে সরকারি কর্মকর্তাদের যে দায়মুক্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছে তা দুদককে শক্তিহীন করারই নামান্তর।

দেশে একজন সাধারন নাগরিক কোনো অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে মামলা করতে সরকারের কোনো অনুমতি প্রয়োজন হয়না। কিন্তু রাষ্ট্রের কোনো কর্মচারী যদি অপরাধ করে তবে তার বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে পূর্বানুমতি নিতে হবে।

নৈতিকভাবেই এই আইনের কোনো ভিত্তি নেই। কারণ, আইন সবার জন্যই সমান। একই অপরাধ করলে একজনের জন্য মাফ আরেক জনের জন্য সাজা আইনের শাসনের পরিপন্থি।   

বিভিন্ন মহলে থেকে সমালোচনা থাকলেও আইনটি পাস করা হয়। অত:পর আইনটির সংশোধনীর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করা হয়।

হাইকোর্ট গত ৩০ জানুয়ারি দুদকের এই সংশোধনীটিকে অবৈধ, অসাংবিধানিক হিসেব ঘোষণা দেয়। বলা বাহুল্য, আইনটি কেবল সংবিধান বহির্ভূতই নয়, নাগরিক অধিকারেরও পরিপণ্থি।

সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ মতে, সব নাগরিকেই সমান অধিকার আছে। সবাই আইনের চোখে সমান। কিন্তু দুদক আইনের ওই বিধানটি সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক।

সংবিধানে আরো বলা আছে, সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক কোনো আইন যদি পাস করা হয়, তবে উক্ত আইনের যতটুকু অসাংবিধানিক ততটুকু বাতিল বলে গণ্য হবে। এটাই সংবিধানের বিধান।

কিন্তু আমাদের দেশে আইন প্রণয়ন করার সময় সংবিধান ও নাগরিক অধিকারে কথা বিবেচনা করা হয় না। বিবেচনা করা হয় রাজনৈতিক ও ক্ষুদ্র ব্যক্তি স্বার্থ।

সরকারি কর্মকর্তাদের কেবল অব্যাহতিই নয়, সেই সাথে দীর্ঘদিনের চলমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির কারণে রাজনৈতিক মামলা দায়ের ও একইভাবে মামলা প্রত্যাহারের যে সংস্কৃতি চালু আছে তা আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থি।

দল ক্ষমতায় আসলে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা দায়ের ও নিজেদের বিরুদ্ধে আগের সরকারের করা সব মামলা প্রত্যাহার দায় এড়ানোর সংস্কৃতিরই পরিচায়ক। বিচার বিভাগকে পাশ কাটিয়ে আইনের এ অপব্যবহার সামগ্রিকভাবে আইন ব্যবস্থার ওপর আঘাত হানছে।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।