ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আইন ও আদালত

চট্টগ্রামের সেই আবুর জামিন স্থগিত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২৩
চট্টগ্রামের সেই আবুর জামিন স্থগিত

ঢাকা: হুন্ডি, স্বর্ণ চোরাচালান, চোরাই ও অন্যান্য দ্রব্যের অবৈধ ব্যবসার সর্বমোট ২০৪ কোটি ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার ৮৮৭ টাকা জমা ও ২৪০ কোটি ৫ লাখ ১২ হাজার ১৬০ টাকা উত্তোলন করে মানিলন্ডারিং অর্থাৎ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরের মামলায় ফটিকছড়ির আবু আহমেদকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) চেম্বার জজ বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ৮ মে পর্যন্ত হাইকোর্টের জামিনাদেশ স্থগিত করেছেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।

চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি হাজিরার পর সোনা চোরাকারবারি হিসেবে চিহ্নিত চট্টগ্রামের আবু আহমেদ ওরফে আবুকে শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। পরে চট্টগ্রামের আদালতে হাজির করার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর তিনি হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। এরপর ৬ এপ্রিল তাকে জামিন দিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। এই জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে।

২০২০ সালের ১৮ মার্চ চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির জাপতনগর এলাকার ফয়েজ আহম্মদ ওরফে বালী সওদাগরের ছেলে আবু আহমেদ ওরফে আবুসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। মামলাটি করেন, সিআইডির উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. হারুন উর রশীদ।

মামলার এজাহারে বলা হয়, বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে আসামিরা সংঘবদ্ধ হুন্ডি (অর্থ পাচার), স্বর্ণ চোরাচালান, চোরাই ও অন্যান্য দ্রব্যের অবৈধ ব্যবসার সর্বমোট ২০৪ কোটি ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার ৮৮৭ টাকা জমা ও ২৪০ কোটি ৫ লাখ ১২ হাজার ১৬০ টাকা উত্তোলন করে মানিলন্ডারিং অর্থাৎ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে নামে-বেনামে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, চাঁদগাও, ফতেহনগর, রাউজান, ফটিকছড়িতে জমি ও বাড়ির মালিক হয়েছেন। দুবাইয়ে তার ২/৩টি দোকান রয়েছে। এছাড়াও আবুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় স্বর্ণ চোরাচালানের মামলা রয়েছে।

এ মামলায় গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আগাম জামিন চান আবু আহামেদ। হাইকোর্ট তাকে জামিন না দিয়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। নির্দেশের পর ২২ ফেব্রুয়ারি আবু আহমেদ আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। ওইদিন চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত মামলার নথি তলব করে ৫ মে আবেদনটি শুনানির জন্য রাখেন। কিন্তু চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত থেকে নথি না আসায় ওইদিন ১৩ জুলাই জামিন আবেদনের শুনানি রাখেন। ওই তারিখেও নথি না আসায় ৩১ আগস্ট নথি উপস্থাপন করতে বলে আদালত ৫ সেপ্টেম্বর জামিন আবেদনের শুনানির তারিখ দেন।

পরে নথি এলেও আবু আহমেদের সময় আবেদনের কারণে জামিন আবেদনের শুনানি আরও কয়েকবার পেছানো হয়। গত ১৩ নভেম্বর জামিন আবেদনের শুনানির দিন আবু আহমেদ ফের সময় আবেদন করলে তা নামঞ্জুর করে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

বিশেষ আদালতের আদেশে বলা হয়, গত নয় মাস যাবত জামিন শুনানি না করে আসামি সময়ের দরখাস্ত করে আসছেন। যা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও উচ্চ আদালতের আদেশ অবমাননার শামিল। এরপর আসামি আবু আহমেদ হাইকোর্টে হাজির হয়ে আগাম জামিন চান। গত ৫ ডিসেম্বর আগাম জামিনের আবেদনের শুনানি শেষে আদালত আদেশের জন্য ৬ ডিসেম্বর দিন ধার্য রাখেন।

কিন্তু গত ৬ ডিসেম্বর আসামি হাজির হননি। এ পর্যায়ে আবু আহমেদের আইনজীবী আগাম জামিনের আবেদনটি ‘নট প্রেসড’ (উত্থাপিত হয়নি বলে খারিজ) করতে চাইলে আইনজীবী ফারিয়া বিনতে আলমের প্রতি আদালত উষ্মা প্রকাশ করেন। আর নট প্রেস না করে আসামিকে গ্রেপ্তার ও তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন। এছাড়া তাকে অবিলম্বে যেকোনো মূল্যে গ্রেপ্তার করে যথাযথ আদালতে হাজির করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেন। পরদিন এ মামলার তদবিরকারককে তলব করেন হাইকোর্ট।

তলবে হাজিরের পর ১২ ডিসেম্বর তদবিরকারক নুর মোহাম্মদ নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তদবিরকারককে আসামিকে কোর্টে হাজির করার জন্য নির্দেশ দেন। আবু আহমেদ ওরফে আবুর বিরুদ্ধে হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করায় রুল জারি করেন আদালত। তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে চট্টগ্রাম পুলিশ সুপারকে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন। পরবর্তী আদেশের জন্য ৮ জানুয়ারি দিন রাখেন।

এরপর ৮ জানুয়ারি তদবিরকারক আবুকে হাজির করলে তাকে শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২২
ইএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।