ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

কলকাতার সল্টলেকে ঐহিক’র নিবিড় সাহিত্য-আড্ডা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২০
কলকাতার সল্টলেকে ঐহিক’র নিবিড় সাহিত্য-আড্ডা

শহরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা অতিথি নিবাসগুলোর সম্পর্কে মানুষ কতই না ভুল ধারণা পোষণ করে। অথচ বিলাসী হোটেল নয়, এই অতিথি নিবাসগুলোই আজ মধ্যবিত্তের সাধ আর সাধ্যের মেল বন্ধন ঘটাচ্ছে। 

সল্টলেকের করুণাময়ীর স্বস্তিনীড়, ডি এল ৮৪ তেমনই এক অতিথি নিবাস। কর্ণধার শিশির সামন্ত আর উত্তম মণ্ডলের আন্তরিক সহযোগিতায় তাদের অতিথি নিবাসের হলে ঐহিক পত্রিকা আয়োজন করেছিল এক নিবিড় সাহিত্য পাঠের অনুষ্ঠান।

বিকেল সন্ধ্যের দিকে গড়ানোর আগেই একে একে উপস্থিত হতে থাকেন বাংলা ভাষার যশস্বী কবিরা।  

কলকাতার সল্টলেকে ঐহিকে নিবিড় সাহিত্য-আড্ডা

সেই আড্ডায় এসেছিলেন- গৌতম বসু, একরাম আলি, সৈয়দ কওসর জামাল, সমরজিৎ সিংহ, সুব্রত সরকার, রাহুল পুরকায়স্থ, রাণা রায়চৌধুরী, গৌতম চৌধুরী, কালীকৃষ্ণ গুহ, বহতা অংশুমালী, শতাব্দী দাশ, অনিন্দ্য বর্মন, ফরিদ ছিফাতুল্লাহ ও বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের সম্পাদক কবি-অনুবাদক জুয়েল মাজহার এবং আবশ্যিকভাবেই ঐহিক বাংলাদেশের সম্পাদক, কবি মেঘ অদিতি ও ঐহিক সম্পাদক, কথাসাহিত্যিক তমাল রায়।  

অনাড়ম্বর নিমগ্ন এই পাঠ অনুষ্ঠানটি শুরু হয় কবি গৌতম বসুর কবিতা পাঠ দিয়ে। একে একে অগ্রজ ও অনুজদের কবিতা ও গল্প পাঠে সন্ধ্যে কখন রাতের দিকে গড়িয়ে গেছে, উপস্থিত সাহিত্যিকদের তা খেয়ালই হয়নি।  


কবি জুয়েল মাজহারের কবিতা পাঠ শুনছেন কবি কালীকৃষ্ণ গুহ ও অন্যরা

জুয়েল মাজহারের কবিতা পাঠ ছিল রীতিমত আকর্ষণীয়। ঢাকাইয়া কুট্টি ভাষায় লিখিত 'চান্নিপশর রাইতের লৌড়' কবিতাটি পাঠ শেষে উপস্থিত সকলেই পাঠোল্লাসে বিস্মিত হন। প্রতিটি কবিতা পাঠই সোশাল মিডিয়ায় লাইভ দেখানো হচ্ছিলো এবং অত্যাশ্চর্যের বিষয়, দর্শকরা সরাসরি প্রিয় কবি ও গল্পকারদের কাছে তাদের প্রিয় কবিতা ও গল্পপাঠের অনুরোধ জানাচ্ছিলেন সোশাল মিডিয়াতেই।

কবি জুয়েল মাজহার, কবি কালীকৃষ্ণ গুহ, কবি একরাম আলি ও অন্যরা

তিরিশে পা দেওয়া ঐহিক ইতিমধ্যেই দু বাংলাতে সাহিত্য সংস্কৃতি সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে এক উল্লেখযোগ্য নাম। সারা বছর ধরেই দুই বাংলা জুড়ে এমন ছোট বড় বিবিধ অনুষ্ঠান বই ও পত্রিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে তারা উদযাপন করবে তাদের ত্রিশতম বছর পূর্তি। একটি লিটল ম্যাগাজিনের ক্ষেত্রে যা এক মাইলস্টোন।

নিমগ্ন হয়ে কবিতা পাঠ শুনছেন কবি কালীকৃষ্ণ গুহ, কবি একরাম আলি, কবি গৌতম চৌধুরী ও অন্যরা

রাত নটায় এই নিবিড় পাঠ অনুষ্ঠানটির অন্তিম অধ্যায়ে অনেকেরই চোখে জল।  ষাটের উল্লেখযোগ্য কবি কালীকৃষ্ণ গুহ তখন বটবৃক্ষের ন্যায় স্নেহের আলিঙ্গনে বুকে টেনেছেন জুয়েল মাজহারকে। অনুজ রাহুল পুরকায়স্থ অসুবিধে বোধ করায় জল এগিয়ে দিচ্ছেন অগ্রজ কবি, গৌতম বসু তার চিকিৎসকের সাথে নির্ধারিত এপয়েন্টমেন্ট বাতিল করে রয়ে গেলেন শেষ অবধি। ১৫০ ট্রেন ক্যানসেলড, রাণা রায়চৌধুরী ফিরবেন শ্রীরামপুর, তবু ফেরার তাড়া নেই।  

যে কোনো সাহিত্য অনুষ্ঠানেই অগ্রজ কবিরা তার নিজ কবিতা পাঠ শেষে বিদায় নেন, অন্যের কবিতা না শুনেই! এই সাহিত্য সন্ধ্যা বিরল ব্যতিক্রম সে দিক থেকেও। শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত কেউ উঠে যাননি। এমন কি সভা শেষের পরও রয়ে গেলেন অনেকেই। আসলে প্রাণের সাথে প্রাণের মিলনের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলেই যেন এক পরিবার। মানুষী হৃদয়ে কোনো কাঁটাতারই চিরস্থায়ী নয়। সাহিত্য তা আরও একবার প্রমাণ করে দিলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২০
এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

শিল্প-সাহিত্য এর সর্বশেষ

welcome-ad