ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে ‘বিশেষ বার্তা’ দিলেন মমতা

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৯ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৮
জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে ‘বিশেষ বার্তা’ দিলেন মমতা জনসমুদ্রের মঞ্চে দাঁড়িয়ে সবার অভিবাদন গ্রহণ করেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত

কলকাতা: দিনটি ছিল ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই। তৎকালীন জ্যোতি বসুর বাম সরকারের বিরুদ্ধে এক প্রকার যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন সেই সময়ের যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সেদিন রাইটার্স বিল্ডিং বা সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের গুলিতে ১৩ জন নিহত হন এবং ২শ’ জন আহত হন। তারপর থেকে দিনটিকে ‘শহীদ দিবস’ হিসেবে পালন করে মমতার তৃণমূল কংগ্রেস।

শনিবার (২১ জুলাই) সেই ‘শহীদ দিবস’ পালনে কলকাতার ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদের সামনে জনসমাবেশের আয়োজন করা হয়। কর্মসূচির আগে পরে বৃষ্টি নামলেও তা পরোয়া না করে ইতিহাস গড়েন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

লাখো নেতাকর্মীর জনসমাবেশ ভেঙে দেয় রাজ্যের রাজনৈতিক সব জমায়েতের অতীতের যতো রেকর্ড।

এই বিশাল জমায়েত সামাল দিতে রাস্তায় নেমেছিলেন কলকাতা পুলিশের আড়াই হাজার সদস্য। প্রতিবারের মতো এবারও রাজ্য গোয়েন্দা প্রধানের নেতৃত্বে সাদা পোশাকে গোয়েন্দাদের একটি দল জনতার ভিড়ের মধ্যে মিশেছিল এবং আপদকালীন পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সমাবেশে প্রস্তুত ছিল ২০টি অ্যাম্বুলেন্স। ছিলেন তৃণমূলের সাড়ে চার হাজার স্বেচ্ছাস্বেবকও। দু’দিন আগে থেকে গোটা কলকাতাকে ঢেকে ফেলা হয় নিরাপত্তার চাদরে।  

সমাবেশে আসা জনতা যেন নির্বিঘ্নে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখতে পারেন বা বক্তব্য শুনতে পারেন, সেজন্য রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ, লেনিন সরণি, বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, জওহরলাল নেহরু রোডের মতো একাধিক জায়গায় ছিল জায়ান্ট স্ক্রিনের ব্যবস্থা।

প্রতিবছর নেতা-কর্মী-সমর্থকদের জনসমুদ্র থেকে ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ করেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের বার্ষিক এই সমাবেশ দলের কর্মীদের কাছে নিছক কোনো কর্মসূচি নয়, তাদের ভাবাবেগ জড়িয়ে থাকে এই সমাবেশে।  

তবে শনিবারের এই সমাবেশ শুধু আর শহীদ দিবসের কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধ থাকলো না, রূপ নিলো রাজনৈতিক বিশেষ বার্তার উপলক্ষে। কয়েক মাস ধরে ভারতের আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে ফেডারেল ফ্রন্ট বা তৃতীয় শক্তি গড়ার ডাক দিচ্ছিলেন মমতা। আগামী বছরের গোড়ার দিকে ভারতে লোকসভা বা জাতীয় নির্বাচন। তৃতীয় শক্তি গড়ার ডাক দেওয়ার পর নির্বাচনের আগে এমন জনসমুদ্র নামিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেন কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক দলগুলোকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন।

এই চ্যালেঞ্জ ছুড়তে হবে ভেবেই প্রতিবারের মতো দু’দিন আগে থেকেই দূরবর্তী জেলাগুলো থেকে কলকাতায় বিড় জমান তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। কলকাতার মিলনমেলা, ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র ও কসবার গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামসহ মধ্য কলকাতার বিভিন্ন ধর্মশালা ও কমিউনিটি হল মিলিয়ে লাখোধিক মানুষের থাকা-খাওয়া ও রাত্রিবাসের বন্দোবস্ত করে কেন্দ্রীয় পর্যায়। অপেক্ষা শুধু ছিল ‘দিদি’র দিক-নির্দেশনার।  

জনসমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে ‘বাংলার নেত্রী’ সরাসরি তোপ দেগে দিলেন কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদীর বিজেপিকে, ‘হিন্দু ধর্ম কী, সেটা কি ওদের কাছ থেকে শিখতে হবে? আমি হিন্দু নই? এই জমায়েতে হিন্দু নেই? তরোয়াল, বন্দুক ধরে যারা হিন্দুত্ব শেখায় তাদের আমি মানি না। এই ধর্মীয় সন্ত্রাস ভাঙতে হবে। যাদের হাতে দাঙ্গার কলঙ্ক যায়নি তারা শেখাবে ধর্ম?’

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পশ্চিমবঙ্গেরই মেদিনীপুর জেলায় সভা করতে আসেন। সেখানে ব্যারিকেড ভেঙে হুড়োহুড়িতে পড়ে গিয়ে ৮০ জন আহত হন। সে প্রসঙ্গটি টেনে মমতা বলেন, ‘যারা মঞ্চ বাঁধতে পারে না, মঞ্চ ভেঙে ফেলে, তারা ভারত কী গড়বে?’

বিজেপিকে উগ্রশক্তি আখ্যা দিয়ে তৃণমূল প্রধান বলেন, ‘এরা হিটলার, মুসোলিনির চেয়েও উগ্র। মাকে কেউ আম্মা বলে, কেউ মাদার বলে, জলকে কেউ পানি বা ওয়াটার বলে, তাতে কিন্তু আসলটা আলাদা হয়ে যায় না। ’

ভারতের স্বাধীনতা দিবস ১৫ আগস্ট থেকে জেলায় জেলায় ‘মোদী হটাও ভারত বাঁচাও’ কর্মসূচি পালন করা হবে বলেও ঘোষণা দেন মমতা। তিনি জানান, ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে জমায়েত হবে। সেখানেই নব্য তৈরি ফেডারেল ফ্রন্টের ভারতের অন্য রাজ্যের নেতাদের দেখা যাবে।

উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মীদের বুঝতে বাকি রইলো না যে, বিজেপি এবং মোদী হটাও স্লোগানের পাশাপাশি তৃতীয় ফ্রন্টের নেতাদের একই মঞ্চে তোলার ঘোষণা দিয়ে মমতা প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারের দিকেই তার স্থির-লক্ষ্যটা স্পষ্ট করে দিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৩ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৮
ভিএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা এর সর্বশেষ