ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ইচ্ছেঘুড়ি

ভূতের খপ্পরে শিরুকাকা | বিএম বরকতউল্লাহ্‌

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২২ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৬
ভূতের খপ্পরে শিরুকাকা | বিএম বরকতউল্লাহ্‌

গ্রামের সাহসী পুরুষ শিরুকাকা। পড়লেন ভূতের খপ্পরে।

মাঝেমধ্যেই খপ্পরে পড়েন তিনি। কিন্তু এবারেরটা আগের মতো নয়; খুব ভয়ংকর!
বাজার থেকে আসতে রাত হয়ে গেলো। মাথায় বাজারের ধামা। গাঁয়ের পথে উঠতেই তার পিছু নিয়েছে কয়েকটি পাজি ভূত। একটি ভূত চোখের পলকে ভয়ংকর চেহারা নিয়ে সামনে এসে শিরুকাকাকে বলে- 
কিঁরে শিঁরু, বাঁজার থেঁকে আঁইলি বুঁঝিঁ। মাঁছ-মাংসোঁ আঁনছস? চ্যাঁপাঁ-শুঁটকি আঁনছস? কঁই, দেঁ, আঁমার হাঁতে তুঁলে দেঁ, খাঁই- বলে লম্বা জিহ্বাটা বের করে চাটাচুটি করতে লাগলো।

শিরুকাকা কিছু না বলে ধেই ধেই করে হাঁটতে লাগলেন। সামনে এসে লম্বা শিং তুলে পথ আগলে দাঁড়ালো একটা অদ্ভুত পশু। বিশাল মুখ, সাদা মুলার মতো দাঁত, ছোট ছোট দু’টি চোখ পিট পিট করছে। মাথায় তিনটি শিং। তিন হাত লম্বা জিহ্বাটা বের করে বলে, কাঁহাঁতক সাঁহোঁস দেঁখালি রে শেঁরু। কিঁছুঁ নাঁ দিয়ে তুঁই যাঁস কঁই? এঁকটা গুঁতোঁ মেঁরে শিং তিঁনটি তোঁর পেঁটে ঢুকিয়েঁ ভুঁড়িটা বেরঁ করেঁ ফেঁলবঁ। ধাঁমাটা নাঁমা। দেঁহি কীঁ আনছঁস তুই, দেঁ, খাঁমু।

শিরুকাকা সাহস করে বললেন, রাস্তা ছাড় বলছি। বাড়িতে মেহমান আছে। গেলে পাক করবে। ফাজলামি করবি না কইলাম, সর।

ভূতটি দুষ্ট হাসি দিয়ে বললো, ’বাঁগে পেঁয়ে এঁমনিঁ এঁমনিঁ ছেঁড়ে দেঁব তোঁকে? একটু চিন্তা করে ভূতটা হঠাৎ বলল, আঁচছা, যাঁ ছেঁড়ে দিঁলাম তোঁকে। তুঁই যাঁহ্। সাঁবধাঁনে যাঁইস, বুঁঝলি? তোঁর লাঁগি বড় মায়াঁ লাঁগেঁ রে শেঁরু।

শিরুকাকা হনহন করে হাঁটতে লাগলেন কিন্তু একটু পরেই অনুভব করলেন মাথার ধামাটা ভীষণ ভারী হয়ে উঠছে। মটমট পটপট করছে। পেছনে কে যেন ধরে টানছে। ঘাড় ফিরিয়ে কিছুই দেখতে পেলেন না। শিরুকাকা তো ঘেমে-নেয়ে শেষ।

অনেক কষ্টে হাঁটা দিলেন শিরুকাকা। সামনে আর এগোতে পারছেন না। রাস্তার পাশের একটা গাছ থেকে আচমকা ধপাস করে কি একটা পড়লো শিরুকাকার সামনে। লাফিয়ে উঠলেন তিনি। চেয়ে দেখেন একটা ছিন্ন মাথা লুটোপুটি খাচ্ছে মাটিতে। ভয়ে স্থির হয়ে গেলেন। মাথাটা কাকার পায়ে পায়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে আর প্যানপ্যান করে কী সব বলছে, তার কিছুই বুঝতে পারলেন না। শিরুকাকা সাহস করে বললেন, রাস্তা ছাড়।  

ওম্মা, মাথাটি রাস্তা তো ছাড়লই না বরং ওটা পাক খেতে খেতে বড় হতে লাগলো এবং কাকার সামনে লম্বালম্বি হয়ে লাশের মতো শুয়ে পড়লো। আচানক কারবার! একি! এতো সাদা কাফনে মোড়ানো একটা লাশ। কাকা কাঁপা কণ্ঠে বললেন, এ কা-র লা-শ, এ-খা-নে এ-লো কো-ত্থেকে! 

শিরুকাকা ভয় পেলেও ভেঙে পড়লেন না। ডান বাঁও তাকিয়ে পালাবার কোনো সুযোগও পেলেন না। তিনি লাশ ডিঙিয়ে চলে আসবেন মনে করে যেই না একটি পা তুলে লাশটা ডিঙাতে গেলেন। অমনি লাশটা শিরুকাকাসহ পটপট শব্দ করে পটকা মাছের মতো ফুলতে শুরু করলো। কাকা অস্থির হয়ে ধামা-টামা ফেলে লাফিয়ে পেট গড়িয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন। এতক্ষণে লাশটা ফুলে প্রায় ২০ ফুট উঁচু হয়ে গেছে। লাশের জন্য সামনে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। খালি বিপদ আর বিপদ!

শিরুকাকা বুদ্ধি করে রাস্তার ডান পাশ দিয়ে পার হতে চাইলেন। পা বাড়াতেই লাশের এক মাথা ফড়ফড় করে লম্বা হতে লাগলো। ভয়ে শিরুকাকার মুখটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো। সামনে এগোবার আর কোনো পথ নেই। কী করবেন এখন! তিনি বুঝতে পারলেন, ভয়ংকর দুষ্ট ভূতের খপ্পরে পড়ে গেছেন তিনি। সহজে বাঁচা যাবে না।  

শিরুকাকা মনে মনে চিন্তা করছেন, কীভাবে বাঁচা যায় এ ভয়ংকর ভ‚তের হাত থেকে। তিনি কষ্ট চেপে রেখে হাসি দিয়ে লাশটাকে বললেন, লাশভাই, ও লাশ ভাই, ’ইতরামি বাদ দিয়ে আমার একটা কথা শোনো। ভূতটা বলল, কীঁ কঁথা কঁবিরেঁ শিঁরু, বঁল। কাকা বললো, আমার সঙ্গে যা কিছু আছে সবই তোকে দিয়ে দেরবা, এবার পথ ছাড়, বাড়ি যাই, আর ভালো লাগে না। ’ লাশটা বিছার মতো লাফিয়ে উঠে বললো, এঁতগুঁলো বাঁজাঁর সঁদাই এঁত সহঁজেই দিঁয়ে দিলিরেঁ শেঁরু!

লম্বা একটা হাসি দিয়ে লাশটা আনন্দে শিরুকাকার থ্যাবড়ো গালে একটা চুমু দিয়ে গালটা লম্বা করে চট করে ছেড়ে দিলো। চটাচট শব্দ হলো গালে। তারপর ভ‚তটা বললো, এঁবার সোঁজা বাঁড়ি চঁলে যাঁ রে শিরু। পেঁছনে তাঁকাবি নাঁ, ঝাঁমেলাঁয় পঁড়ে যাঁবি। ’ 

শিরুকাকা বুঝি আর পেছনে তাকায়! তিনি ভূতের চুমু খাওয়া ঢিলেঢালা গালটা হাতের তালু দিয়ে ঘষতে ঘষতে কোনোমতে বাড়ি গিয়ে উঠলেন। ওই রাতেই তার প্রচণ্ড জ্বর। বেশ করে ভুগলেন শিরুকাকা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৬
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।