ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ইচ্ছেঘুড়ি

কাক কেন কালো হয়?

দেবোত্তম কুমার দেবনাথ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১১
কাক কেন কালো হয়?

অনেক দিন আগের কথা। পৃথিবী এবং মানুষ মাত্রই সৃষ্টি হয়েছে।

সেসময় কাকগুলো ছিল দুধের মতো সাদা। তখন মানুষের কোন হাতি-ঘোড়া ছিল না বা কোন প্রকার লোহার অস্ত্রও ছিল না। তখন মানুষ গরু-মহিষ শিকার করে খেত।

সেই সময় কাক ছিল মহিষের বন্ধু। তারা মহিষের দুই শিং এর মাঝে বসে তাকে শিকারি আসার পূর্বেই সতর্ক করে দিত। কাক তাকে বলে দিত, ‘কা কা কা বন্ধু শোন, শিকারি আসছে। তারা এখন পাহাড়ের ওপর আছে। তোমাকে মারতে আসছে। ’ এই না শুনে মহিষ দিতো ভো-দৌঁড়। আর মানুষগুলোকে সারাদিন না খেয়ে থাকতে হতো।

এই নিয়ে মানুষজন সভা বসালো। তারা চিন্তু করলো এখন কি করা যায়? তখন কিছু কাক ছিল আকারে বর্তমান কাকের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বড়। তারা ছিল অন্য কাকের নেতা।

মানুষের মধ্যে একজন জ্ঞানী মানুষ পরামর্শ দিলেন, ‘আমাদের বড় সাদা কাক ধরতে হবে এবং তাকে একটি উচিত শিক্ষা দিতে হবে। অন্যথায় এটিকে না খাইয়ে রাখতে হবে। ’

একদিন একটি বড় মহিষের মাথা ও শিংযুক্ত চামড়া একজন সহসী মানুষের পিঠে রাখা হল। তারপর ওই জ্ঞানী মানুষ তাকে বলল, ‘শোন, নিঃশব্দে মহিষদের মধ্যে যাও। তারা মনে করবে তুমি তাদেরই একজন, এভাবে তুমি একটি বড় সাদা কাক ধরে আনেবে। ’

মহিষ সেঁজে মানুষটি ঘাস খাচ্ছে এমন ভাব করে হামাগুড়ি দিয়ে মহিষের দলে ঢুকে গেল। মহিষরা তাকে কোন ভাবেই চিনতে পারল না।

এমন সময় মানুষরা তাদের তীর-ধনুক নিয়ে শিকার করতে বের হলো। তাই দেখে কাক মহিষদের সতর্ক করার জন্য আগের মতোই সেখানে ওড়ে গেল এবং বলল, ‘কা কা কা বন্ধু শোন, শিকারিরা আসছে। তাদের তীরের নিশানার বাইরে চলে যাও। ’

এই কথা শুনে সকল মহিষ পালিয়ে গেল। শুধু ছদ্মবেশী মহিষটি আগের মতোই ঘাস খাওয়ার ভান করতে লাগলো।

তখন সাদা একটি কাক ওড়ে গিয়ে তার শিংয়ের মাঝে বসে তাকে বলল, ‘কা কা কা ভাই, তুমি কি কানে শোন না? শিকারিরা প্রায় কাছেই চলে এসেছে। শিগগিরই পালাও, নিজেকে রক্ষা করো। ’

তখন যুবকটি তার খোলস ছেড়ে বের হলো এবং কাকটির পা ধরে ফেলল। তারপর সে কাকটির পা পাথর দিয়ে চাপা দিয়ে দিল। কাক অনেক চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারলো না।

এরপর মানুষরা আবার সভা ডাকল। তারা বলল, ‘আমরা এই বড়, খারাপ কাকটিকে কি করব? এটি বার বার আমদের শিকার তাড়িয়ে দেয়। ’

একজন বলল, ‘আমি এটিকে পুড়িয়ে ফেলব। ’ তখন সবাই মিলে তাকে থামলো। তখন সেই শিকারির হাত থেকে একটি পাথর ছুটে গিয়ে আরেকটি পাথরে আঘাত লাগাতে সেখানে আগুন ধরে গেল। এমন সময় কাকটি ওড়ে যেতে সক্ষম হলো। কিন্তু আগুনের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় তার সারা শরীর পুড়ে কালো হয়ে গেল।

তারপর থেকেই বড় কাকগুলো আর সাদা থাকলো না। তাদের গায়ের রং কালো হয়ে গেল। সে সময় কাকটি কাঁদতে লাগল এবং চিন্তা করলো, ‘আমি আর কখনো এমন কাজ করবো না। আমি মহিষদের আর সতর্ক করবো না। শুধু আমি না কোন কাকই আর মহিষদের সাহায্য করবে না। ’

এই বলে কাকটি ওড়ে চলে গেল। কিন্তু সবচেয়ে মজার কথা হলো তার সাথে সাথে অন্য সব কাকগুলোও কালো হয়ে গেল।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।