ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ইচ্ছেঘুড়ি

যেভাবে এলো ইংরেজি ক্যালেন্ডার

আসিফ আজিজ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১২
যেভাবে এলো ইংরেজি ক্যালেন্ডার

iccবছর ঘুরে আবার আমাদের দ্বারপ্রান্তে নতুন বছর। ইচ্ছেঘুড়ির সব বন্ধুদের জানাই ইংরেজি নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

বন্ধুরা, তোমরা জানো বাংলাদেশে তিনটি বর্ষের প্রচলন রয়েছে। হিজরি, ইংরেজি ও বাংলা। প্রত্যেক বর্ষের আছে আবার বিস্তৃত ইতিহাস। সে ইতিহাস আবার একটু জটিল ও বিশাল। আমাদের সামনে এখন ইংরেজি বছর। আজ দিন পেরুলে কালকের সকাল হবে আমাদের সবার নতুন বছর। ইংরেজি ২০১৩ সাল।

নিশ্চয় তোমাদের জানতে ইচ্ছে করছে কীভাবে এলো আজকের এই ক্যালেন্ডার যা দেখে আমরা পালন করতে যাচ্ছি নতুন বছর। তাহলে চলো জেনে নেওয়া যাক ইংরেজি সাল কবে থেকে গণণা করা হয়, এর পেছনের ইতিহাস কী ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়।

আসলে আমরা যে ইংরেজি সাল বা খ্রিস্টাব্দ বলি সেটা হচ্ছে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। আমরা এখন যে ইংরেজি বর্ষ পালন করি তা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী। এর কিন্তু আবার আছে বিশাল ইতিহাস। আগে আমরা জেনে নেই সেটি।
icc
নতুন বছরের কথা জানাতে গিয়ে আমরা কিন্তু চলে যাচ্ছি পুরোনো আমলের ইতিহাসে। গ্রেগরিয়ান আসলে একটি সৌর বছর। এর বর্তমান কাঠামোতে পৌঁছাতে সময় লেগেছে কয়েকশ বছর। নানা পরিবর্তন পরিমার্জনের ফল আজাকের ক্যালেন্ডার।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, মানুষ যেদিন বর্ষ গণনা করতে শিখলো সেদিন চাঁদের হিসাবেই শুরু করে বর্ষ গণনা। সূর্যের হিসাবে বা সৌর গণনার হিসাব আসে অনেক পরে। সৌর এবং চন্দ্র গণনায় আবার পার্থক্য রয়েছে। সৌর গণনায় ঋতুর সঙ্গে সম্পর্ক থাকে, কিন্তু চান্দ্র গণনায় ঋতুর সঙ্গে সম্পর্ক থাকে না।

বর্ষপঞ্জিকা তৈরির বিষয়টি লক্ষ্য করা গিয়েছিল সুমেরীয় সভ্যতায়। মিশরীয় আবার জ্যোতির্বিজ্ঞান, হিসাব-নিকাশে ছিলো বেশ এগিয়ে। এই মিশরীয় সভ্যতাই পৃথিবীর প্রাচীনতম সৌর ক্যালেন্ডার আবিষ্কার করে বলে ধারণা করা হয়।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মিশরীয় সে ক্যালেন্ডার নিয়ে করেছেন বিস্তর গবেষণা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, খ্রিস্টপূর্ব ৪২৩৬ অব্দ থেকে ক্যালেন্ডার ব্যবহার শুরু করে।
icc
ইউরোপকে বলা হয় শিল্প-সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞানের স্বর্গ। সভ্যতার সব গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার কিন্তু তারাই করেছে। আর এদিক দিয়ে এগিয়ে ছিলো গ্রিক ও রোমনরা।

রোমানরা আবার তাদের প্রথম ক্যালেন্ডার লাভ করে গ্রিকদের কাছ থেকে। মজার বিষয় রোমানদের প্রাচীন ক্যালেন্ডারে মাস কিন্তু ১২টি ছিলো না। তাদের মাস ছিলো ১০টি। তাদের বছর ছিলো ৩০৪ দিনে। আরো মজার ব্যাপার শীতের দুই মাস তারা বর্ষ গণনার মধ্যেই আনতো না।

রোমানরা মার্চ মাস থেকে তাদের বর্ষ গণনা শুরু করতো। নববর্ষ উৎসব পালন করতো মার্চ মাসের ১ তারিখে।
বছর গণনায় ৬০ দিন বাদ যাওয়ায় তারা কিন্তু দিন, তারিখ বর্ণিত ক্যালেন্ডার ব্যবহারের কথা ভাবতো না।
রোমের একজন বিখ্যাত সম্রাট রমুলাস। তিনি ছিলেন রোমের প্রথম সম্রাট। তিনিই নাকি আনুমানিক ৭৩৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে রোমান ক্যালেন্ডার চালু করার চেষ্টা করেন।

কিন্তু পরবর্তীকালে ১০ মাসের সঙ্গে আরো দুটো মাস যোগ করেন রোমান সম্রাট নুমা। আর মাস দুটো  হচ্ছে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি। তিনিই জানুয়ারিকে বছরের প্রথম মাস হিসাবে যুক্ত করেন।
icc
জানুয়ারি মাস ২৯ দিনে এবং ফেব্রুয়ারি মাস ধার্য করা হয় ২৮ দিনে। আরো মজার ব্যাপার এই বারো মাসের বাইরে  তিনি মারসিডানাস নামে অতিরিক্ত একটি মাসেরও প্রবর্তন করেন। মাসটি গণনা করা হতো আবার ২২ দিনে। এ অতিরিক্ত মাসটি গণনা করা হতো এক বছর অন্তর ফেব্রুয়ারি মাসের ২৩ ও ২৪ তারিখের মাঝখানে।

নুমা চালু করা মাসের হিসাব পরিবর্তন করা হয় খ্রিস্টপূর্ব ৪৩২ অব্দে। আমরা এখন যে লিপইয়য়ার পালন করি চার বছর পর পর তার প্রবর্তকও কিন্তু এই রোমানরাই।

রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার রোমে চালু করেন নতুন ক্যলেন্ডার। তিনি মিশরীয় ক্যালেন্ডার নিয়ে আসেন রোমে।   জ্যোতির্বিদদের পরামর্শে খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ অব্দে সেই বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের মাঝখানে ৬৭ দিন এবং ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে ২৩ দিনসহ মোট ৯০ দিন যুক্ত করে সংস্কার করেন ক্যালেন্ডার। পরবর্তে এ ক্যালেন্ডার পরিচিত হয় জুলিয়ান ক্যালেন্ডার নামে।

জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে মার্চ, মে, কুইন্টিলিস ও অক্টোবর মাসের দিন সংখ্যা ৩১ এবং  জানুয়ারি ও সেক্সটিনিস মাসের সঙ্গে দুইদিন যুক্ত করে ৩১ দিন করা হয়। ফেব্রুয়ারি মাস গণনা হতে থাকে ২৮ দিনেই।
icc
আমরা যাকে এখন লিপইয়ার বলি সেই ফ্রেব্রুয়ারি মাসে প্রতি চার বছর অন্তর যুক্ত করা হয় একদিন। পরবর্তীতে জুলিয়াস সিজারের নামানুসারে প্রাচীন কুইন্টিলিস মাসের নাম বদলিয়ে রাখা হয় জুলাই।

আরেক বিখ্যাত রোমান সম্রাট ছিলেন অগাস্টাস। তার নামানুসারে সেক্সটিনিস মাসের নাম পাল্টিয়ে করা হয় অগাস্ট।

৩৬৫ দিনে সৌর বর্ষ গণনার কাজটা কিন্তু করতো মিশরীয়রা। কিন্তু জুলিয়াস সিজারের সংস্কারের ফলে তা এসে দাঁড়ায়  তিনশ সাড়ে পঁয়ষট্টি দিনে ।

আমরা যে খ্রিস্ট বছর বা খ্রিস্টাব্দ বলি, তার সূচনা হয় আরো পরে। খ্রিস্ট ধর্মের প্রবর্তক যীশুখ্রিস্টের জন্ম বছর থেকে গণনা করে ডাইওনিসিয়াম এক্সিগুয়াস নামক এক খ্রিস্টান পাদরি ৫৩২ অব্দ থেকে সূচনা করেন খ্রিস্টাব্দের।
 ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দের কথা। রোমের পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি জ্যোতির্বিদদের পরামর্শে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার সংশোধন করেন। তার নির্দেশে ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাস থেকে দেওয়া হয় ১০ দিন। এর ফলে ঐ বছরের ৫ তারিখকে করা হয় ১৫ তারিখ।
Julius
পরে পোপ গ্রেগরি ঘোষণা করেন, যেসব শতবর্ষীয় অব্দ ৪০০ দিয়ে বিভক্ত হবে সেসব শতবর্ষ লিপইয়ার হিসেবে গণ্য হবে। পোপ গ্রেগরি প্রববর্তিত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার মোটামুটি একটি নিখুঁত হিসাবে আমাদের পৌঁছে দেয়। বিশ্বব্যাপী এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়তে থাকে। আজ আমরা যে ক্যালেন্ডার দেখে ইংরেজি বর্ষ হিসাব করি, উদযাপন করি নববর্ষ, তা সেই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের ফসল।

এভাবেই আমরা পেলাম বছরের হিসাব; দিন, তারিখ সংবলিত ইংরেজি ক্যালেন্ডার।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১২
[email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।