ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

একসঙ্গে ১৭ হাজার মুসল্লি নামাজ পড়তে পারবেন ইবির মসজিদে

তারিকুল ইসলাম, ইবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২১
একসঙ্গে ১৭ হাজার মুসল্লি নামাজ পড়তে পারবেন ইবির মসজিদে স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন ইবির কেন্দ্রীয় মসজিদ। ছবি: বাংলানিউজ

ইবি: স্থাপত্যশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) নির্মাণাধীন কেন্দ্রীয় মসজিদ। বৃহৎ জায়গা জুড়ে স্থাপিত দৃষ্টিনন্দন মসজিদটির দিকে তাকালে চোখ জুড়িয়ে যায়।

নিমার্ণকাজ শেষ হলে মসজিদটিতে একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারবেন ১৭ হাজার মুসল্লি। দেশের প্রাতিষ্ঠানিকভিত্তিক মসজিদগুলোর মধ্যেই এটিই সর্ববৃহৎ। নির্মাণকাজ শেষ হলে এশিয়া মহাদেশের সৌন্দর্যতম মসজিদগুলোরও একটি হবে এটি।

ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দুই দশমিক ২৫ হেক্টর জায়গাজুড়ে নির্মাণকাজ চলছে মসজিদটির। চারতলা বিশিষ্ট বর্গাকৃতির মসজিদটি সিরামিক ও শ্বেতপাথরে নির্মিত। সূর্যের আলোয় দিনের বেলায় মসজিদটির গা থেকে যেন উজ্জ্বল আভা ছড়ায়। সুউচ্চ গম্বুজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে এর মহিমা জানান দিয়ে যাচ্ছে।

মসজিদের গ্রাউন্ড ফ্লোরের আয়তন ৫১ হাজার বর্গফুট। চারতলার মূল মসজিদে মোট সাত হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবে। এছাড়া মসজিদের সামনের পেডমেন্টে নামাজ পড়তে পারবে আরও ১০ হাজার মুসল্লি। মসজিদের সামনের অংশের উপরে রয়েছে ৯০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট বৃহৎ গম্বুজ। নিচতলা থেকেও ভেতর দিয়ে গম্বুজটির একদম উপরের অংশ দেখা যায়। বিশাল এ গম্বুজটি মসজিদের সৌন্দর্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া মসজিদের বাউন্ডারির চারপাশে চারটি মিনার স্থাপিত হবে। যার প্রতিটির উচ্চতা হবে ১৫০ ফুট।

মসজিদের তিনপাশ দিয়ে থাকবে প্রবেশ পথ। প্রতিটি প্রবেশপথে থাকবে একটি করে গম্বুজ। মসজিদ ভিত্তিক ক্যাম্পাস গড়ার জন্য প্রতিটি অনুষদীয় ভবন থেকে মসজিদে আসার জন্য রয়েছে প্রশস্ত পথ। মসজিদের নিচতলায় একটি লাইব্রেরি ও রিসার্স সেন্টারের প্রস্তাবনা রয়েছে। যেখানে দেশ ও বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ ও দুর্লভ বইগুলো স্থান পাবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ধর্মীয়সহ নানা বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে পারবেন এখানে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, অনন্য স্থাপত্যকর্ম মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৯৪ সালে। সরকারি অর্থায়নে কাজ শুরু হলেও পরে সহায়তা আসে বিদেশ থেকেও। তবে মসজিদের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা ভিন্ন খাতে ব্যয় করায় ও সঠিকভাবে কাজে না লাগানোয় অর্থ ফেরতও নেয় বিদেশি প্রতিষ্ঠান। ফলে দীর্ঘ ২৬ বছরে মাত্র ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

জানা যায়, প্রতিষ্ঠার ১০ বছর পর ২০০৪ সালে ৩৬ শতাংশ কাজ শেষ হলে তৎকালীন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মোশারেফ হোসাইন শাহজাহান উদ্বোধনের মাধ্যমে নামাজের জন্য উন্মুক্ত করে দেন মসজিদটি। এরপর দীর্ঘ ১৩ বছর নির্মাণ  কাজ থেমে থাকে। ফলে দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি হারাতে বসে তার শৈল্পিক সৌন্দর্য। পরে সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী সময় দুই দফায় নির্মাণ কাজ সম্প্রসারণ করা হয়। এতে ব্যয় হয় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা।

প্রকৌশল অফিস জানায়, মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ করতে এখনো ৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন। তবে বরাদ্দ না থাকায় নির্মাণ কাজ চলছে না। অর্থ পেলে এক বছরের মধ্যে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে। নকশা অনুযায়ী নির্মাণ শেষ হলে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা মসজিদগুলোর একটি হবে এই মসজিদ। সেই সঙ্গে পরিণত হবে ধর্মীয় দর্শনীয় স্থানে।

এদিকে, অনন্য সাধারণ স্থাপত্য মডেলের কেন্দ্রীয় মসজিদটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। অনেক আগে শিক্ষাজীবন শেষ করা প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসে মসজিদকে এখনও নির্মাণাধীন দেখার পর তাদের কণ্ঠে আক্ষেপ ঝরে পড়ে। পড়াশোনা শেষ করতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে থাকা অবস্থায় মসজিদটির পূর্ণাঙ্গ রূপ দেখে যাওয়া হচ্ছে না ভেবে আফসোস করতে দেখা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আল হাদীস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বর্তমানে বিভাগটির অধ্যাপক ড. আশরাফুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষাজীবন শেষ করে বর্তমানে শিক্ষকতায় পেশায় দীর্ঘদিন পার হলেও মসজিদটির নির্মাণ কাজ শেষ দেখার আক্ষেপ রয়েই গেলো। প্রতিটি প্রশাসনের কাছেই আমাদের প্রত্যাশা ছিল মসজিদটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা। তবে বর্তমান সরকারের আমলে মসজিদটির নির্মাণ কাজ আশানুরূপ এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহায়তা পেলে মসজিদটি খুব দ্রুত বাকি ৬০ শতাংশ কাজও সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-প্রধান প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান টুটুল বলেন, এই মসজিদটি সম্পূর্ণ নির্মিত হলে দেশের অন্যতম ধর্মীয় দর্শনীয় স্থাপনায় পরিণত হবে। মসজিদটির নির্মাণকাজ ৪০ শতাংশ শেষ হয়েছে, সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন হতে আরও ৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন। টাকার ব্যবস্থা হলে আগামী তিন বছরের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব। প্রয়োজনীয় টাকা প্রাপ্তির জন্য গত কয়েক বছর ধরে চেষ্টা করা হচ্ছে।

 

 

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।