ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

মডেল মসজিদে প্রয়োজন দুই হাজার কোটি টাকা, মিলছে না কাঙ্ক্ষিত বরাদ্দ

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২০
মডেল মসজিদে প্রয়োজন দুই হাজার কোটি টাকা, মিলছে না কাঙ্ক্ষিত বরাদ্দ মডেল মসজিদ।

ঢাকা: প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত টাকা। টাকার অভাবে প্রকল্পের অগ্রগতিও কমেছে।

চলতি অর্থবছরের মধ্যেই শতাধিক মডেল মসজিদ নির্মাণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এ লক্ষ্য পূরণে দরকার দুই হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে শতাধিক মসজিদের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার পাশাপাশি প্রকল্পের আওতায় প্রয়োজন প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর অতিবাহিত হলেও এখনও ১০ শতাংশ বরাদ্দ মেলেনি।
 
ইফা সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প ৮ হাজার ৭২২ কেটি টাকা ব্যয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়।

 ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নে অনুমোদিত হয়। সংশোধিত অনুমোদিত প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী মডেল মসজিদের জন্য ৪০ শতাংশ জায়গার প্রয়োজন। জেলা পর্যায়ে ৪ তলা ও উপজেলার জন্য ৩ তলা এবং উপকূলীয় এলাকায় ৪ তলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর করা হয়েছে। অথচ ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৭৮৭ কোটি ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ফলে টাকার অভাবে প্রকল্পের কাজের গতি মিলছে না। ফলে নির্ধারিত সময়ে হচ্ছে না প্রকল্পের কাজ। ফলে আবার প্রকল্পের সময় বাড়বে এবং নির্ধারিত ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। করোনার প্রভাবে মডেল মসজিদ চলতি বছরে কাঙ্ক্ষিত বরাদ্দ মেলেনি।
 
প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ৫৬০টি মডেল মসজিদের মধ্যে ৪১২টির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। তবে প্রকল্পের মোট ব্যয়ের তুলনায় আমরা কাঙ্ক্ষিত বরাদ্দ পাইনি। চলতি বছরে ১০০টি মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। এর জন্য ২ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হলেও আমরা কম বরাদ্দ পেয়েছি। সঠিক বরাদ্দ পেলে প্রকল্পের কাজে আরো গতি আসবে।
 
তিনি আরো বলেন, ৫২৯টির ডিজিটাল সার্ভে সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া মৃত্তিকা পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে ৫২৭টির। আমরা ৫১৫টির দরপত্র আহ্বান করেছি। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় বরাদ্দ পাচ্ছি না।
 
ইফা সূত্র জানায়, ৫টি মসজিদের চতুর্থ তলা ছাদ ঢালাই হয়েছে। ৩৩টির তৃতীয় তলার ছাদ ঢালাই হয়েছে। ২৮টি দ্বিতীয় তলা এবং ৩৪টির পঞ্চমতলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাই হয়েছে। ১৫৫টি মডেল মসজিদের পাইল ক্যাপ, ফুটিং ঢালাই চলছে। এছাড়া নীচ তলার কলাম ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে। ১৫৭টি মসজিদের লো আউট, টেস্ট পাইল ঢালাই ও লোড টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া বালু ভরাট কাজ চলছে। প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে বড় অংকের বরাদ্দ প্রয়োজন।
 
সারাদেশে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সে নারী ও পুরুষদের পৃথক ওজু ও নামাজ আদায়ের সুবিধা, লাইব্রেরি গবেষণা ও দীনি দাওয়া কার্যক্রম, পবিত্র কুরআন হেফজ, শিশু শিক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়াও অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন, মরদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজ্জ যাত্রীদের নিবন্ধন, প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ ইত্যাদি ব্যবস্থা রয়েছে। ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

দেশের সব জেলা, সিটি করপোরেশন ও উপজেলায় এসব মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে ৬৪টি জেলায় ও উপকূলীয় এলাকায় ১৬টি চারতলা বিশিষ্ট মসজিদ। অবশিষ্ট মসজিদগুলো হবে তিনতলা বিশিষ্ট। এসব মসজিদে প্রতিদিন চার লাখ ৪০ হাজার ৪৪০ জন পুরুষ ও ৩১ হাজার ৪০০ জন নারীর নামাজের ব্যবস্থা থাকবে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্র জানিয়েছে, প্রথমে এসব মসজিদ নির্মাণে মোট প্রস্তাবিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯ হাজার ৬২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৮ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা থাকবে সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ এর  অনুদান। তবে সৌদি অনুদান মেলেনি মডেল মসজিদ নির্মাণে। এসব মসজিদ সরকারি নিজস্ব অর্থায়ন বাস্তবায়ন হচ্ছে।

তিন ক্যাটাগরিতে মসজিদগুলো নির্মিত হচ্ছে। এ-ক্যাটাগরিতে ৭৯টি চারতলা বিশিষ্ট মডেল মজজিদ নির্মিত হচ্ছে। এগুলো নির্মাণ হবে ৬৪টি জেলা শহরে এবং চারটি সিটি করপোরেশন এলাকায়। এগুলোর আয়তন হবে দুই লাখ ৮১ হাজার ৫৮৪ বর্গমিটার। এক লাখ ৬৪ হাজার ৭৪২ বর্গমিটার আয়তনের বি-ক্যাটারির মসজিদ হবে ৪৭৬টি। আর ৬১ হাজার ২৫ বর্গমিটার আয়তনের সি ক্যাটাগরির মসজিদ হবে ১৬টি।

লাইব্রেরি সুবিধাও থাকবে মডেল মসজিদগুলোতে। প্রতিদিন ৩৪ হাজার পাঠক এক সঙ্গে কোরআন ও ইসলামিক বই পড়তে পারবেন। ইসলামিক বিষয়ে গবেষণার সুযোগ থাকবে ৬ হাজার ৮০০ জনের। ৫৬ হাজার মুসল্লি সব সময় দোয়া, মোনাজাতসহ তসবিহ পড়তে পারবেন।

মসজিদগুলো থেকে প্রতি বছর ১৪ হাজার হাফেজ তৈরির ব্যবস্থা থাকবে। আরো থাকবে ইসলামিক নানা বিষয়সহ প্রতিবছর ১ লাখ ৬৮ হাজার শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা। ২ হাজার ২৪০ জন দেশি-বিদেশি অতিথির আবাসন ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হবে প্রকল্পের আওতায়। পবিত্র হজ পালনের জন্য করা হবে ৫০ শতাংশ ডিজিটাল নিবন্ধনের ব্যবস্থা।

এসব মসজিদে আরো থাকবে ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, মৃতকে গোসল করানোর কক্ষ। উপকূলীয় এলাকার মসজিদগুলোতে নীচ তলা ফাঁকা থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০২০
এমআইএস/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad