ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

নিউজিল্যান্ডের সেই আন-নুর মসজিদের আদলে ‘মানব-মসজিদ’

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৯
নিউজিল্যান্ডের সেই আন-নুর মসজিদের আদলে ‘মানব-মসজিদ’ নিউজিল্যান্ডের সেই আন-নুর মসজিদের আদলে ‘মানব-মসজিদ’

ধবধবে সাদা ও সফেদ-চাঁদির মতো সবার পরিধেয়। মাথা-বদনে শ্বেত-শুভ্রের দ্যূতি। সাদা পায়জামা, পাঞ্জাবি আর টুপি পরিহিত কয়েক হাজার মুসল্লি। তারা মিলে তৈরি করলেন ‘মানব-মসজিদ’। নিউজিল্যান্ডের আল-নুর মসজিদের আদলে এমন মানব-মসজিদ বা মসজিদের ডিসপ্লে বানানো হয়েছে পাকিস্তানের জং শহরে।

শুক্রবার (১২ এপ্রিল) মুসলিম ইনস্টিটিউট নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এই ডিসপ্লের আয়োজন করে। হামলার ঘটনার পর সংহতি ও সহমর্মিতা প্রকাশে দারুণ ভূমিকা রাখায় নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি।

মানব-মসজিদ তৈরিতে অংশগ্রহণকারী নুর হাসান বলেন, ‘আমরা এই মডেলটি তৈরির জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। আমাদের জন্য এটা খুবই আনন্দদায়ক যে, আমরা সারা দিন ধরে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে প্রস্তুত ছিলাম। ’

নিউজিল্যান্ডের সেই আন-নুর মসজিদের আদলে ‘মানব-মসজিদ’

মানব-মসজিদের ভিডিওতে দেখা গেছে, মুসল্লিরা পাঞ্জাবী-পায়জামা ও টুপি পরে সবুজাভ মাঠে সমবেত হন। মাঠটিতে তারা চমৎকারভাবে ‘আল-নুর মসজিদ’র ডিসপ্লে তৈরি করেন। পাশেই আরেকটি আরেকটি ডিসপ্লেতে ‘ইসলাম ইজ পিস’ বা ‘ইসলাম হলো শান্তি’ এই কথাটি ফুটিয়ে তোলা হয়।

মাঠের পাশে নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিশাল পতাকা স্থাপনের মাধ্যমে ক্রাইস্টচার্চে নিহতদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা হয়।

আন-নুর মসজিদের আদলে তৈরি ‘মানব-মসজিদ’র দৃশ্য।  ছবি: সংগৃহীত।

মর্মন্তুদ ওই হামলায় নিহতদের মধ্যে ৯ পাকিস্তানি নাগরিক ছিলেন। নাঈম রশিদ নামের এক মুসল্লি বন্দুকধারী শ্বেতাঙ্গকে প্রতিরোধের চেষ্টা করে মারা যাওয়ায় তাকে মরনোত্তর সাহসিকতা পুরস্কার দেয়া হয়।

গত ১৫ মার্চ জুমার সময় নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুইটি মসজিদে এক অস্ট্রেলীয় খ্রিষ্টান-শ্বেতাঙ্গ জঙ্গি বর্বরোচিত হামলা চালায়। পৈশাচিক ওই ৫০ জন মুসল্লি প্রাণ হারান। হামলায় আক্রান্ত দুইটি মসজিদের একটি ছিল আল-নুর মসজিদ।

আরো পড়ুন: নিউজিল্যান্ডে মুসলিমরা যেমন আছে

ভয়াবহ ওই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় শোকে মুষড়ে পড়ে নিউজিল্যান্ড। হত-বিহ্বল হয়েছে গোটা পৃথিবী। শোকে মুহ্যমান হয়েছে মুসলিম বিশ্ব। আল্লাহর পবিত্র ঘর মসজিদে এমন নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড শুধু নিউজিল্যান্ডে নয়; পৃথিবীতেই নজিরবিহীন।

মর্মন্তুদ এই নৃশংসতার পর নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্নের দরদী ও বিমর্ষ চেহারা দেখেছে বিশ্ববাসী। একদিকে হতাহতদের শোকার্ত পরিবারকে তিনি বুকে টেনে নিয়েছেন। অন্যদিকে মুসলিমসহ অভিবাসীদের আশ্বাস ও অভয় দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমরা তোমাদের শোকের সঙ্গী হয়তো হতে পারবো না। কিন্তু কথা দিচ্ছি, আমরা একসঙ্গেই চলবো। ’

নিউজিল্যান্ডের সেই আন-নুর মসজিদ

নিহত মুসলিমদের প্রতি সংহতি জানাতে প্রথম থেকেই পোশাক-পরিচ্ছদে নিজেকে অনন্য প্রমাণ করেছেন জেসিন্ডা। নিজেদের সংস্কৃতির বাইরে গিয়ে হিজাব পরে তিনি মুসলিম কমিউনিটিতে হাজির হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) তিনি নিহতদের স্মরণে সংসদের বিশেষ অধিবেশনে আরবিতে ‘আসসালামু আলাইকুম (আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক)’ বলে তার বক্তব্য শুরু করেন।

আরো পড়ুন: নিউজিল্যান্ডে কোরআন তেলাওয়াতে সংসদ অধিবেশন শুরু

কেবল তা-ই নয়, আমন্ত্রিত মুসলিমদের জন্য সংসদে নামাজের ব্যবস্থাও করে দেন জেসিন্ডা। এরপর অন্য ধর্মের অনুসারীরা প্রার্থনা করেন। তারপর তিনি উঠে গিয়ে সংসদে আসা মুসলিমদের সমবেদনা জানান। মুসলিম নারীদের বুকে টেনে নেন তিনি।

আরো পড়ুন: নিউজিল্যান্ডের পত্রিকাগুলোর প্রথম পাতাজুড়ে ‘সালাম’

শুক্রবার (২২ মার্চ) ১টা ৩২ মিনিটে হামলার শিকার আল-নূর মসজিদের পাশে হেগলি পার্কে নীরবতার কর্মসূচিতে অংশ নেন জেসিন্ডা। মুসলিমদের প্রতি সংহতি জানিয়ে তিনিসহ শত শত কিউই নারী হিজাব পরে শোকানুষ্ঠানে হাজির হন। এতে প্রায় ২৫ হাজার নিউজিল্যান্ডের নাগরিক সমবেত হন। স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের দিকে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও রেডিওতে আজান প্রচার হয়। এরপরই দুই মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

আরো পড়ুন: নিউজিল্যান্ডের জাতীয় টেলিভিশন ও রেডিওতে জুমার আজান, খুতবা ও নামাজ সরাসরি সম্প্রচার

তার আগে শোকার্ত জনতাকে হাদিস শুনিয়ে প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা বলেন, ‘নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, পারস্পরিক ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির ক্ষেত্রে বিশ্বাসীরা (মুমিন) সবাই একটি দেহের মতো। দেহের একটি অঙ্গ অসুস্থ হলে, পুরো শরীর ব্যথা-যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়ে। ’ এরপর তিনি বলেন, ‘নিউজিল্যান্ডবাসী আপনাদের মতোই শোকাহত। আমরা ঐক্যবদ্ধ। ’

আরো পড়ুন: শোকানুষ্ঠানে হাদিস শোনালেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী

বর্ণবাদের বিরুদ্ধে নিউজিল্যান্ডবাসী ঐক্যবদ্ধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের হৃদয় হয়তো ভেঙেছে, কিন্তু আমরা ভেঙে পড়িনি। আমরা বেঁচে আছি একসঙ্গে। আমাদের বিভাজিত করার সুযোগ কাউকে আমরা দেবো না বলে, এ ব্যাপারে নিউজিল্যান্ডবাসী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ’

এর আগে দেশের অস্ত্র আইনে পরিবর্তন আনার ঘোষণা দিয়ে বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা জানান, হামলায় যে ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, সেরকমসহ সব সামরিক স্টাইলের আধা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র জনসাধারণের জন্য নিষিদ্ধ হবে নিউজিল্যান্ড

মুসলমানদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও দয়াদ্র দৃষ্টিভঙ্গির কারণে জাসিন্ডা বিশ্বব্যাপী প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবর দুবাইয়ের বুর্জ খলিফার বাইরের দেয়ালে তার হিজাব পরিহিত একটি ছবি প্রদর্শিত হয়েছে এবং তাকে তার অবস্থান ও আচরণের জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।

ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।