ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

ভিন্নধর্মীর সঙ্গে ওঠাবসা ইসলামে অনুমোদিত

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০১ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৯
ভিন্নধর্মীর সঙ্গে ওঠাবসা ইসলামে অনুমোদিত জার্মানির কোলেন মসজিদ পরিদর্শনে শত শত অমুসলিম। তাদের কাছে ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরা হয়। ছবি: সংগৃহীত

একটি দেশে বিভিন্ন ধর্মের লোক বসবাস করে। এটা পৃথিবীর নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। তাই তাদের মাঝে সহাবস্থান এং পারস্পরিক সম্পর্ক ও সৌজন্যতাবোধ রক্ষা করা আবশ্যিক কর্তব্য। মুসলিমরা সামাজিকভাবে ধর্ম-বর্ণ, জাত-গোত্র এবং শ্রেণী-স্তর নির্বিশেষে অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে কীভাবে জীবনাযাপন করবে এবং তাদের প্রতি কেমন আচরণ ও উচ্চারণ প্রদর্শন করবে সে নিয়ে ইসলাম অভূতপূর্ব নির্দেশনা ও আদর্শ উপস্থাপন করেছে।

ইসলামে পারস্পরিক সহিষ্ণুতা ও সহাবস্থানের শিক্ষা অনুপম বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ও কালোত্তীর্ণ। আপন মহিমা-মাধুর্যে ভাস্বর।

ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, সহানুভূতি ও সদ্ব্যবহার এবং মানবতাপূর্ণ উদারপ্রকৃতি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও পারস্পরিক সহিষ্ণুতার ক্ষেত্রে ইসলামের যে অপূর্বশিক্ষা রয়েছে, সে সম্পর্কে ধারাবাহিক আলোচনার চেষ্টা করা হবে।

ব্যক্তিগত, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক কর্ম-কারণে ভিন্ন ধর্মের লোকের সঙ্গে ওঠাবসা করা খুবই স্বাভাবিক। আর ইসলাম অমুসলিমদের সঙ্গে ওঠাবসায় নিষেধ করে না। তাদের সঙ্গে লেনদেন করতেও বাধা দেয় না। তাদের সঙ্গে কথাবার্তা এবং ওঠাবসা করা ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ ও অনুমোদিত।

কোনো অমুসলিম যদি মসজিদে যেতে চান, ইসলাম সে ক্ষেত্রে অনুমতি দিয়েছে। এমনকি তাদের মসজিদে বসারও সুযোগ রেখেছে।

একটি হাদিসে হজরত হাসান বলেন, যখন সাকিফ গোত্রের প্রতিনিধি রাসুল (সা.)-এর দরবারে হাজির হয়, তখন তারা মসজিদের শেষে গম্বুজের কাছে অবস্থান করে। যখন নামাজের সময় হলো, তখন দলের একজন লোক বলল, হে আল্লাহর রাসুল! নামাজের সময় হয়েছে। এরা একদল অমুসলিম, তারা মসজিদে রয়েছে। তখন রাসুল (সা.) বলেন, অমুসলিমদের কারণে জমিন অপবিত্র হয় না। ’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ৮৫৭৬)

অমুসলিমদের মসজিদে প্রবেশের অনুমতি
হানাফি মাজহাব মতে, অমুসলিমরা কোনো প্রয়োজন হলে মুসলমানদের অনুমতি নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে। ইমাম শাফেয়ি (রহ)-এর মতে, অমুসলিমরা মসজিদুল হারামে প্রবেশ করতে পারবে না, তবে অন্য যেকোনো মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে। ইমাম আহমদ (রহ.)-এর মতে, অমুসলিমরা হারাম শরিফে প্রবেশ করতে পারবে না, তবে অন্য যেকোনো মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে। ইমাম মালেক (রহ)-এর মতে, অমুসলিমরা মসজিদুল হারামসহ কোনো মসজিদেই প্রবেশ করা বৈধ নয়। কেননা কাবা শরিফ ও মসজিদুল হারামকে কেন্দ্র করেই অন্য সব মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

‘এই বছরের পর অমুসলিমরা যেন মসজিদুল হারামের কাছেও না আসে’-এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পরও মহানবী (সা.)-এর যুগে বহু অমুসলিম মসজিদে প্রবেশের ঐতিহাসিক বহু প্রমাণ পাওয়া যায়। তাই দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলা যায়, এখানে আক্ষরিক অর্থে তাদের মসজিদুল হারামে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়নি; বরং অমুসলিমদের জন্য হজ ও ওমরাহ পালন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আল্লামা রশিদ রেজা (রহ.) লিখেছেন, ‘ইসলামের ইতিহাস ও মহানবী (সা.)-এর জীবনচরিত সম্পর্কে বোদ্ধা মহল ভালোভাবেই জানে যে মুসলমানরা লেনদেন ও সামাজিকতার ক্ষেত্রে অমুসলিমদের সঙ্গে মিলেমিশেই থাকত। বিশেষত হুদাইবিয়ার সন্ধির পর বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে অমুসলিমদের কষ্ট দেওয়া, তাদের সঙ্গে যুদ্ধ নিষিদ্ধ করা হয়। সেই সময় তাদের প্রতিনিধিরা মহানবী (সা.)-এর কাছে আসত এবং মসজিদে নববিতে প্রবেশ করত। একইভাবে নাজরানের ইহুদি-খ্রিস্টানরাও এসেছে। তাদের সঙ্গে কখনো ‘অপবিত্র’ আচরণ করা হয়নি। তাদের দেহ মিলিত হওয়ার দরুন কোনো কিছু ধৌত করতেও বলা হয়নি। ’ (তাফসিরে মানার : ১/২৪২)

তাছাড়া মক্কা বিজয়ের পর সাকিফ গোত্রের প্রতিনিধিরা নবী করিম (সা.)-এর কাছে এলে তাদের মসজিদে নববীতে অবস্থান করতে দেওয়া হয়। অথচ তারা তখনো অমুসলিম ছিল। (মা’আরেফুল কোরআন)

ইসলাম বিভাগে আপনিও লিখতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।