ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

স্থাপত্য-সংস্কৃতি

মুসলিম সভ্যতার নিদর্শন ক্লক টাওয়ার

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৯
মুসলিম সভ্যতার নিদর্শন ক্লক টাওয়ার মক্কা রয়েল ক্লক টাওয়ারের নান্দনিক দৃশ্য।

ওসমানি শাসকদের কীর্তি-ফিরিস্তি বেশ সমৃদ্ধ। বলকান অঞ্চল থেকে মধ্যপ্রাচ্য পর্যন্ত তারা বহু শিল্প-স্থাপত্য তৈরি করেছে। কয়েকজন ওসমানি শাসকের অনন্য স্থাপত্য-কীর্তির স্বাক্ষর হয়ে আছে তাদের নির্মিত ক্লক টাওয়ারগুলো। শহরের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য সেগুলো নির্মাণ করা হলেও তা বর্তমানে মুসলিম স্থাপত্যশৈলির নিদর্শন হয়ে ওঠেছে।

এছাড়াও ২০১১ সালে উদ্ভোধনকৃ পবিত্র কাবাঘরের পার্শ্বে নির্মিত মক্কা রয়েল ক্লক টাওয়ারের স্থাপত্য-সৌন্দর্যের খ্যাতি বিশ্বময়। এ টাওয়ারের শীর্ষে গড়ে তোলা হয়েছে ১৩০ ফুট আকারের রাজকীয় ঘড়ি।

৩০ কিলোমিটার দূর থেকেও অনায়াসে ঘড়িটি দেখে সময় নির্ণয় করা যায়।

জানা গেছে, মুসলিমস্থাপত্যের ‘ক্লক টাওয়ার’ নির্মাণের ধারা শুরু হয় ১৫৭৭ সালে। আনাতোলিয়া (তুরস্কের এশিয়ান অংশ) থেকে দামেস্ক পর্যন্ত ওসমানিরা মোট ৬৩টি ক্লক টাওয়ার স্থাপন করেছিল। তবে সুলতান আবদুল হামিদ দ্বিতীয় সিংহাসনে আরোহণের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে সর্বাধিক ক্লক টাওয়ার নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমানে অধিকাংশ ক্লক টাওয়ারগুলো পরিত্যক্ত। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিছু আবার ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে। কয়েকটি ক্লক টাওয়ারের সংক্ষিপ্ত আলোচনা।

মক্কা রয়েল ক্লক টাওয়ার
বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঘড়ি ‘মক্কা রয়েল ক্লক টাওয়ার’। সময় নির্ধারণী গ্রিনিচ মান ঘড়ি আগে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঘড়ি ছিল। ‘মক্কা রয়েল ক্লক টাওয়ার’ এর কারণে গ্রিনিচ মানের দিন গুরুত্ব অনেকটা কমে এসেছে।

পবিত্র কাবা শরিফের কিং আবদুল আজিজ বা উম্মে হানি গেটের সম্মুখে ৭টি বিশাল টাওয়ারের কমপ্লেক্সের মাঝে ‘মক্কা রয়েল ক্লক টাওয়ার’ তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ঘড়ি ‘মক্কা ঘড়ি’ এ টাওয়ারের ওপরই বসানো হয়েছে।

দিনের বেলায় মক্কা রয়েল ক্লক টাওয়ারের নান্দনিক দৃশ্য।

তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলের ঘড়িটি আয়তনের দিক দিয়ে এতদিন বিশ্বের বৃহত্তম ঘড়ি ছিল। যেটির ডায়াল ছিল ৩৬ মিটার। কিন্তু মক্কা ঘড়ির ডায়াল ৪৩ মিটার। লন্ডনের বিগবেনের চেয়ে মক্কা ঘড়ির ডায়াল ৬ গুণ বড়।

টাওয়ারটি মোট ৯৫ তলা। সাত তারকা হোটেলসহ বৃহৎ শপিং মল রয়েছে এই টাওয়ারে। টাওয়ারের উচ্চতা ৬০১ মিটার।

৩০০ কোটি মার্কিন ডলারে নির্মিত চতুর্মুখী ঘড়িটিতে ৯ কোটি ৮০ লাখ পিস গ্লাস মোজাইক স্থাপন করা হয়ছে। চারদিকে আরবিতে লেখা আছে ‘আল্লাহু আকবর’। ২১ হাজার রঙিন বিজলি বাতির আলোয় তা উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। রাতে ও দিনে ৩০ কিলোমিটার দূর থেকেও স্পষ্ট পড়া যায়। আল্লাহর নামের উপরের দিকে সোনা দিয়ে মোড়ানো ৭৫ ফুট ডায়ামিটারের একটি বাঁকা চাঁদ ৫৯০ মিটার উচ্চতায় স্থাপন করা হয়েছে।

রাতের বেলায় মক্কা রয়েল ক্লক টাওয়ারের নান্দনিক দৃশ্য।

বিভিন্ন উপলক্ষে এ চাঁদ থেকে ১৬টি উজ্জ্বল আলোক রশ্মি আকাশে বিচ্ছুরিত হয়। ১০ কিলোমিটার আকাশ জুড়ে আলো ছড়িয়ে পড়ে। সারারাত প্রায় ২০ লাখ LED বাতি আল্লাহর নাম সমুজ্জ্বল করে রাখে। ২০০৪ সালে এটির নির্মাণ কাজ আরম্ভ হয় এবং ২০১০ সালের ১১ আগস্ট পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দিনে মক্কা ঘড়ি তিন মাসের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। ২০১১ সালে এটি পূর্ণাঙ্গভাবে মুক্ত করা হয়।

ইস্তানবুলে ক্লক টাওয়ার
তুরস্কের প্রাচীন শহর ও পুরনো রাজধানী ইস্তানবুলে তিনটি ক্লক টাওয়ার রয়েছে। সবচেয়ে বিখ্যাত হলো ‘ইলদিজ ক্লক টাওয়ার’। ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে সুলতান আবদুল হামিদের নির্দেশে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে শেষ হয়। ২৭ ফুট উচ্চতার টাওয়ারটির একপাশে ভূমধ্য সাগর রয়েছে। টাওয়ারের চতুর্থ তলায় ঘড়িটি স্থাপন করা হয়েছে।

ইস্তাম্বুলের ডমবালেচে ক্লক টাওয়ার।
 
আলবেনিয়ায় ক্লক টাওয়ার
১৮২১ খ্রিস্টাব্দে আলবেনিয়ার রাজধানী তিরানায় তৎকালীন প্রশাসক একটি ক্লক টাওয়ার নির্মাণ করেন। ইতালির ভেনিস থেকে টাওয়ারটির নির্মাণসামগ্রী নিয়ে আসা হয়েছিল। প্রতি ঘণ্টায় এটিতে বেল বাজতো। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে পুরনো ঘড়িটি সরিয়ে জার্মান থেকে আমদানি করা একটি ঘড়ি স্থাপন করা হয়।

আলবেনিয়ার ক্লক টাওয়ার।

এছাড়াও আলবেনিয়ার বড় শহর জিরোকাস্ত্রায় আরেকটি ক্লক টাওয়ার রয়েছে। এ টাওয়ারের পাশেই আছে একটি দুর্গ। দুর্গসহ এ টাওয়ারটি ওসমানিরা তৈরি করেছে বলে ধারণা করা হয়।

বুলগেরিয়া ক্লক টাওয়ার
বুলগেরিয়ার বিখ্যাত শহর সুমেনেও ওসমানিদের নির্মিত ঐতিহাসিক ক্লক টাওয়ার রয়েছে। তুর্কি প্রশাসক মেহমুত দদুতুগলু নির্মিত টাওয়ারটির গায়ে মার্বেল খচিত বর্ণে লেখা আছে ‘এটি পৃথিবীর বিস্ময়কর একটি ক্লক টাওয়ার। এত কারুকাজ অন্য কোনো ক্লক টাওয়ারে নেই। ’ এছাড়াও বুলগেরিয়ার ডেলিওরমান অঞ্চলে একটি ক্লক টাওয়ার আছে।

বুলগেরিয়ার ক্লক টাওয়ার।

মেসিডোনিয়া ক্লক টাওয়ার
ইউপোপের ছোট্ট দেশ মেসিডোনিয়াও এক সময় অটোমান সাম্রাজ্যের অধীন ছিল। ফলে সেখানে ওসমানি সাম্রাজ্যের ঐতিহাসিক ক্লক টাওয়ার স্থাপিত হয়েছে। মেসিডোনিয়ার রাজধানী স্কোপজি এবং বিখ্যাত শহর গুস্তিভারে দুইটি ক্লক টাওয়ার রয়েছে। এছাড়াও বিটোলা শহরেও আছে একটি বিখ্যাত ক্লক টাওয়ার রয়েছে। টাওয়ারটির উচ্চতা ২২ মিটার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় টাওয়ারটি বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

মেসিডোনিয়ার ক্লক টাওয়ার

কসোভো ক্লক টাওয়ার
কসোভোর রাজধানী প্রিস্টিনায়ও ওসমানিদের নির্মিত ক্লক টাওয়ার রয়েছে। প্রিস্টিনার প্রাণকেন্দ্রে সুলতান ফাতিহ মুহাম্মদ মসজিদের কাছে এটি অবস্থিত। সম্রাট ইয়াসির পাশা ১৭৪৬ খ্রিস্টাব্দে টাওয়ারটি নির্মাণ করেন। ২০০১ সালে টাওয়ারটির ঘড়ির বেল চুরি হয়ে যায়।

কসোভোর ক্লক টাওয়ার

এছাড়াও প্রিস্টিনায় আরেকটি ক্লক টাওয়ার রয়েছে, যেটি ১৪৯৮ সালে শহরের তৎকালীন গভর্নর শামসুদ্দীন নির্মাণ করেছেন। স্থানীয়দের কাছে এটি প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর হিসেবে পরিচিত। ১৯৭৫ সালে সংস্কার হলেও ২০০৮ সালে এটি পুনর্নির্মাণ করা হয়।

বৈরুত ও ত্রিপোলি ক্লক টাওয়ার
লেবাননের রাজধানী বৈরুতেও একটি ক্লক টাওয়ার আছে। এছাড়াও লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতেও ক্লক টাওয়ার রয়েছে। ত্রিপোলির টাওয়ারটি সুলতান আবদুল হামিদ সিংহাসনে আরোহণের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ত্রিপোলিবাসীকে উপহার দেন।

বৈরুতের ক্লক টাওয়ার

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৯
এমএমইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।