ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

ধার্মিকরাই বেশি উদার

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৮
ধার্মিকরাই বেশি উদার জীবনযাপনের ক্ষেত্রে ইসলাম বিলাসিতা ও অপচয় পরিহার করে ভারসাম্য নীতি ও মধ্যপন্থা অবলম্বন করার পথ নির্দেশনা দেয়

সলাম উদারতাকে অতিশয় গুরুত্ব প্রদান করেছে। কোরআনে কারিমে উদার ও ক্ষমাশীল হওয়ার হুকুম দিয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং তাতে ক্ষমা করে দেয়াটাই তাকওয়ার নিকটবর্তী। তোমরা নিজেদের মধ্যে সদাশয়তার কথা বিস্মৃত হয়ে যেয়ো না।’ –সূরা আল বাকারা: ২৩৭

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি উদার হয় সে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে, সে জান্নাত ও জনসাধারণের অতি সন্নিকটে থাকে এবং তার অবস্থান হয় জাহান্নামের অগ্নিকুণ্ড হতে বহু দূরে। আর কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহতায়ালা থেকে দূরে থাকে, জান্নাত ও জনগণ থেকেও দূরে থাকে, আর সে জাহান্নামের অগ্নিকুণ্ডের অতি নিকটে অবস্থান করে।

জীবনযাপনের ক্ষেত্রে ইসলাম বিলাসিতা ও অপচয় পরিহার করে ভারসাম্য নীতি ও মধ্যপন্থা অবলম্বন করার পথ নির্দেশনা দেয়। যে সব মানুষ ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপন করে এবং মধ্যপন্থী- কোরআনে তাদের প্রশংসা করা হয়েছে।  

ইসলামে উদারতার অর্থ হচ্ছে- ইসলাম অমুসলিমদের জন্য যেসব অধিকার নির্ধারণ করেছে, যে শ্রেণির অমুসলিমের জন্য যেসব অধিকার স্থির করেছে সেগুলো যথাযথভাবে আদায় করা। অমুসলিম হওয়ার কারণে তাদের প্রতি জুলুম না করা ও তাদের কোনো অধিকার খর্ব না করা। তারা যেন পূর্ণ নিরাপদে জীবনযাপন করতে পারে সে ব্যবস্থা করা। তাদের মধ্যে কেউ কোনো বিপদের সম্মুখীন হলে শুধু অমুসলিম হওয়ার কারণে তার সাহায্য-সহযোগিতা কিংবা দান-সদকা (নফল) থেকে বিরত না থাকা।  

কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো- অনেকেই ভাবেন, উদারতার অর্থ হলো- সব ধর্মকে সঠিক বলা ও যে কোনো ধর্মের অনুসরণকে বৈধ বলা। অনেকে আবার মনে করেন, উদারতা প্রমাণের জন্য মুসলিমদেরকে অমুসলিমদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন ও তাদের আচার-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে হবে।  

কোনো মুমিন-মুসলমান উদারতার নামে শৈথিল্যবাদী হতে পারে না। উদারতার মানে ঈমান-আকিদা বিসর্জন দেওয়া নয়।  

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, নাস্তিকরা ধার্মিকদের তুলনায় কম উদার। অর্থাৎ ধার্মিকরা উদার মন-মানসিকতাসম্পন্ন। গবেষণায় বলা হয়েছে, ধার্মিক মানুষ ভিন্ন মতের প্রতি বেশি সহনশীল।  

গবেষণা দলটি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও স্পেনের ৭৮৮ জনের সঙ্গে কথা বলে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে।

গবেষণায় বলা হয়, অবিশ্বাসী ধর্মহীনেরা নিজেদেরকে ধার্মিকদের তুলনায় বেশি উদার ও সহনশীল মনে করে থাকে। কিন্তু বাস্তবতা তার বিপরীত। তাদের তুলনায় ভিন্নমত ও ভিন্ন চিন্তার মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখানোর মাত্রা ধার্মিকদের মাঝে বেশি।  

বেলজিয়ামে ফরাসি ভাষাভাষীদের সবচে’ বড় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব লুভেইনের মনোবিজ্ঞান গবেষকদের ভাষ্যমতে, ধর্মীয় চিন্তাধারার মানুষেরা ভিন্নমত বুঝতে আগ্রহী হয় এবং তারা বিরোধী চিন্তাকে বোঝাপড়ার তাগিদ অনুভব করে।  

গবেষণাপত্রের সহ-লেখক ফিলিপ উজারেভিক বলেন, এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- গোঁড়া ও ধর্মান্ধতা শুধুমাত্র ধার্মিকদেরই ব্যাপার নয়- সেটার বাস্তব অবস্থাটা হাজির করা।  

তিনি বলেন, আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে সংকীর্ণমনা ও ধার্মিকদের মধ্যে সম্পর্কটা যেখানে থাকে সেটা বিশেষ কোনো একটা গোঁড়ামি থেকে উৎপন্ন হয়। আরও আজব ব্যাপার হচ্ছে, নিজের মতের ভিন্ন কিছুকে বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে নাস্তিকতায় বিশ্বাসীদের চেয়ে ধর্মে বিশ্বাসীদের আচরণ অনেক বেশি সহনশীল।  

‘নাস্তিকেরা কি আসলেই ধর্মান্ধতামুক্ত’ শীর্ষক ওই গবেষণাপত্রে ড. উযারেভিক বলেন, হাল সময়ে পশ্চিমা  কিছু দেশে ধর্মহীনতাকে খুব স্বাভাবিকভাবে নেওয়া হয়। তেমন ৪৪৫ জন নাস্তিক ও ধর্মহীন, ২৫৫ জন খ্রিস্টান এবং ৩৭ জন বৌদ্ধ-মুসলিম-ইহুদির মানসিকতায় মধ্যে তিন ধরনের গোঁড়ামি লক্ষ্য করা গেছে। দেখা গেছে, আত্মস্বীকৃত গোঁড়ামির ক্ষেত্রে অবিশ্বাসীদেরকে কম পাওয়া গেলেও অসহনশীলতার বিবেচনায় তারা সবার উর্ধ্বে।  

বস্তুত ইসলাম হলো- আল্লাহর বিশ্বাসের ক্ষেত্রে নিষ্ঠাবান ও কর্মের ক্ষেত্রে উদার। নবী করিম (সা.) উদ্বুদ্ধ করেছেন লেনদেনে উদারতা, উত্তম আচরণের স্বাক্ষর রাখা এবং কৃপণতা বর্জনে। এমনকি উদারতায় সুশোভিত ব্যক্তির জন্য তিনি রহমতের দোয়া করেছেন।  

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৮
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।