ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

দুনিয়ার বিপর্যয় থেকে উত্তরণের পথ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৭
দুনিয়ার বিপর্যয় থেকে উত্তরণের পথ দুনিয়ার বিপর্যয় থেকে উত্তরণের পথ

আল্লাহতায়ালার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ। মানুষের জীবনাচার, সামাজিক নানাবিধ কার্যক্রম, পারস্পরিক লেনদেন, মেলামেশা, শরিয়তের বিধি-নিষেধ মান্যকরণ এবং নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের বাধ্যবাধকতার মধ্যদিয়ে বুঝে আসে- মানুষ অন্য সব প্রাণি ও জীব থেকে ভিন্ন ও স্বতন্ত্র।

সামাজিক জীব হিসেবে আল্লাহতায়ালার নির্দেশাবলী পালনের পাশাপাশি পারিবার ও সামাজের দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতার ঝুলি কাঁধে তুলে নিতে হয় মানুষকে। সুখে-দুঃখে একে অপরের পাশে দাঁড়াতে হয়।

অন্যের বিপদ-আপদে সহায়তার হাত বাড়াতে হয়। পরের সুখে খুশি এবং পরের দুঃখে কষ্ট অনুভব করতে হয়। একে অন্যের সঙ্গে মায়া-মমতা ও স্নেহ-ভালোবাসার চাদরে জড়াতে হয়। আর তখনই পরিবার, সমাজ ও দেশ পরিণত হয় শান্তির নীড়ে। সৃষ্টি হয় পারস্পরিক মাহাত্ম্যবোধ ও ভালোবাসা।
 
অন্যদিকে মানুষ যখন এ সব বিষয় থেকে উদাসীন হয়। প্রবৃত্তির লাগামহীন বাসনা পূরণে সম্পদ ও ক্ষমতার লড়াইয়ে জড়িয়ে অঢেল সম্পদের নেশায় ঘুষ, দুর্নীতির আশ্রয় নেয়। নিজের অবস্থান অটুট রাখতে অন্যায়-অবিচার, দাঙ্গা-হাঙ্গামা থেকে শুরু করে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে। অপরকে ঠকাতে এবং অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করতে কুণ্ঠিত হয় না। নানাবিধ অন্যায়ে লিপ্ত হওয়াসহ  অন্যায়- অনাচার এবং বিদআত ও কুসংস্কারে লিপ্ত হয়। ধর্মীয় আদর্শ ত্যাগ করে- ঠিক তখনই তাদের ওপর নেমে আসে মহা বিপর্যয়। অতীত ইতিহাস যার জ্বলন্ত সাক্ষী। এ বিপর্যয় হতে পারে প্রাকৃতিক ধ্বংসযজ্ঞ, মানবনিধন। আবার হতে পারে নৈতিক চারিত্র অবক্ষয়ের এক ভয়ালগ্রাসী থাবা। যা মানুষকে আল্লাহতায়ালার অসন্তুষ্টি, অবাধ্যতা ও নাফরমানির দিকে প্রবলভাবে ধাবিত করে।  

ফলে মানুষের প্রতি ক্রমাগত বিপদ-আপদ, নানাবিধ বিপর্যয় ও মসিবত আসতে থাকে একের পর এক। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের ওপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গোনাহ ক্ষমা করে দেন। ’ -সূরা আশ শুরা: ৩০

কোরআনে কারিমে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুণ বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। ’ -সূরা আর রূম: ৪১

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘বান্দা যখন আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করে এবং তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকে। তখন তিনি বান্দাকে বিপদ-আপদে নিপতিত করেন। ’ –সহিহ মুসলিম শরিফ

বর্তমান সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি, মানুষ আল্লাহর অবাধ্যতা ও নাফরমানির চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তো মানুষের আচরণ ইসলামপূর্ব জাহেলি যুগের বর্বরতাকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, ব্যভিচার, মারামারি, হানাহানি, মদ, জুয়া, পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ ও দ্বন্দ্ব-কলহের মতো মারাত্মক ও ভয়ঙ্কর গোনাহের কাজে লিপ্ত। মানবতাবিরোধী ও ইসলাম নিষিদ্ধ প্রচুর কাজ হচ্ছে সমাজে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।  

যে মুসলিমদের আদর্শের আলোচনা বিশ্বময় হতো, সেই মুসলমানরা ইসলামি তাহজিব-তামাদ্দুনকে ছেড়ে পশ্চিমা কৃষ্টি-কালচারকে আঁকড়ে ধরছে। আল্লাহতায়ালার আনুগত্য ও হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ অনুসরণ থেকে দূরে সরে এসেছে।  

আমল-আখলাক নেই, নেই আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরিশুদ্ধতা অর্জনের চেষ্টা। লৌকিকতা ও কপটতায় নিমজ্জিত। কোরআন-সুন্নাহর শিক্ষা বাদ দিয়ে জাগতিক উপায়-উপকরণকে উৎকর্ষ সাধনের একমাত্র মন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করেছে। ফলে সামগ্র বিশ্বের মুসলমানরা আজ নির্যাতিত-নিপীড়িত, বঞ্চিত ও অবহেলিত। কোথাও স্বস্তির সঙ্গে জীবনযাপন এবং প্রশান্তিতে বসবাস করতে পারছে না।  

মুসলিম জাতিকে এমন নাজুক পরিস্থিতি থেকে ওঠে আসতে হলে- ইমানকে নবায়ন ও শাণিত করতে হবে। নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সদা সচেষ্ট হতে হবে। আল্লাহর আনুগত্য করতে হবে। একনিষ্ঠচিত্তে তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। একজনের বিপদে অন্যজনকে এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে, মুসলমানরা পরস্পর ভাই ভাই। উম্মাহকে এই চেতনায় একীভূত করতে হবে। সর্বোপরি আল্লাহতায়ালার দরবারে দোয়া ও রোনাজারি করতে হবে এবং অবস্থা পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা মাধ্যমে নিজেদের ধর্মীয় স্বকীয়তা ফিরিয়ে আনতে হবে।  

এমন প্রচেষ্টা প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি সাড়া দেবো। ’ -সূরা আল মুমিনুন: ৬০

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।