ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

অপার মহিমার রমজান

১২ বছর বয়সী হাফেজদের পেছনে দশ হাজার মুসল্লির তারাবি

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৬ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৭
১২ বছর বয়সী হাফেজদের পেছনে দশ হাজার মুসল্লির তারাবি ১২ বছর বয়সী হাফেজদের পেছনে দশ হাজার মুসল্লির তারাবি

রাজশাহী: সংযম ও আত্মশুদ্ধির বারতা নিয়ে পবিত্র রমজান সমাগত। বিগত দিনের ভুল-ত্রুটি ও অন্যায়ের জন্য আল্লাহতায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনার মাস রমজান। 

আজ সূর্যাস্তের পর থেকেই ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়াবে সেহরি, ইফতার ও তারাবির আমল। তারাবি ছাড়া রমজানের অশেষ রহমতের পূর্ণতা হাসিলের কল্পনা করা ভুল।

সেক্ষেত্রে খতমে তারাবির মর্যাদা আরও বেশি। তাই আজ মসজিদে মসজিদে চলছে শেষ মুহূর্তের তারাবির প্রস্তুতি।

সকাল থেকে পাড়া-মহল্লার মসজিদের আঙিনা থেকে ভেসে আসছে পবিত্র কোরআনের শ্রুতিমধুর ধ্বনি। রাতে তারাবি তাই কোরআন পড়ে প্রথম দিনের প্রস্তুতিটা ঝালিয়ে নিচ্ছেন কোরআনের হাফেজরা।  

এমনই পবিত্র আবহে তারাবির খোঁজ নিতে গিয়ে রাজশাহী মহানগরীর আসাম কলোনী বায়তুল আমান জামে মসজিদে গিয়ে পাওয়া গেলো কিছুটা ভিন্ন ধরনের খবর।  

সেখানে এবার রমজানের খতমে তারাবি পড়াবেন ১২ বছরের কিশোর হাফেজ আবদুর রহমান রাকিব।

আর তাকে সহায়তা করবেন দশ বছরের আরেক কিশোর হাফেজ মোহাম্মদ ইমন আলী।  

তাদের পেছনে কাতারবন্দি হয়ে আজ থেকে আগামী ২৭ দিন খতমে তারাবির নামাজ আদায় করবেন এই এলাকার প্রায় দশ হাজার মুসল্লি।  

শুক্রবার (২৬ মে) স্থানীয় এলাকাবাসীর সম্মতি নিয়ে শলা-পরামর্শের মাধ্যমে মসজিদের কমিটি তাদের পেছনে তারাবির নামাজ আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।  

শনিবার (২৭ মে) দুপুরে মসজিদে গিয়ে তাই দেখা মেলে এই দুই কিশোর হাফেজের।  
আসাম কলোনী বায়তুল আমান জামে মসজিদ
হাফেজ আবদুর রহমান রাকিব জানান, তারা মসজিদ ঘেঁষে থাকা এই আসাম কলোনী হাফিজিয়া মাদরাসার ছাত্র। তার সহযোগী হিসেবে যাকে নির্বাচিত করা হয়েছে, তার নাম মোহাম্মদ ইমন আলী (১০)।  

হাফেজ আবদুর রহমানের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের পিটিআই এলাকায়। সেখানে থেকে পড়তে এসেছেন এই মাদরাসায়। এখান থেকেই তারা কোরআন শিক্ষার তালিম নিয়েছেন, করেছেন কোরআন হেফজও। তাই এত কম বয়সে এখানকার সবচেয়ে বড় মসজিদে তারাবির নামাজ পড়ানোর সুযোগ দেওয়ায় মহাখুশি তারা।  

হাফেজ ইমন আলী জানালেন, তার বাবা আক্কাস আলী বেঁচে নেই। রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিপুর থেকে তিনি এই মাদরাসায় পড়তে এসেছেন। এবার রমজানে তারাবির নামাজ পড়ানোর জন্য নির্বাচিত করায় নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে হচ্ছে তার।  

সকাল থেকে তাই তারাবির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন কখন সূর্য পশ্চিমে হেলবে। আর মাগরিব শেষে কখন আসবে এশা। আর কখন পড়াবেন তারাবির নামাজ।  

নামাজ পাড়ানোর দায়িত্ব এই প্রথম। তাই জীবনের প্রথম এমন সুযোগ পেয়ে ভেতরে কিছুটা ভয়ও কাজ করছে বলে জানান ইমন।
 
আসাম কলোনী বায়তুল আমান জামে মসজিদের পেশ ইমাম মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, শুক্রবার (২৬ মে) দেশের কোথাও ১৪৩৮ হিজরি সনের পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে চলতি শাবান মাস ৩০ দিনে পূর্ণ হবে।  

পবিত্র রমজান শুরু হবে রোববার (২৮ মে) থেকে। শনিবার (২৭ মে) রাতে তারাবির নামাজ আদায় হবে। তারাবির নামাজকে কেন্দ্র করে তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এবার ওই দু’জন খুদে হাফেজ তারাবি পড়াবেন। তিনিও হাফেজ এবং তাদের নেতৃত্বে থাকবেন, তাদের তেলাওয়াতে দৃষ্টি রাখবেন।  

মসজিদ কমিটির সভাপতি আবদুস সামাদ বলেন, ওই দু’জন বয়সে ছোট হলেও তারা কোরআনের হাফেজ। শুদ্ধ উচ্চারণ ও সুর করে কোরআন তেলওয়াতের জন্য এলাকাবাসী তাদের পেছনে নামাজ আদায়ে সম্মতি দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ নিয়েই চলতি রমজানে তারাবির নামাজ পড়ানোর জন্য মসজিদ কমিটি তাদের নিযুক্ত করেছেন বলে জানান সভাপতি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৭
এসএস/এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।