ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

পকেটমারতে হজে যাওয়া, এ লজ্জা রাখি কোথায়?

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৫
পকেটমারতে হজে যাওয়া, এ লজ্জা রাখি কোথায়?

হাজিবেশে সৌদি গিয়ে হজযাত্রীদের পকেটমারবার মতো ঘৃণ্য কাজের খবরটি সংবাদমাধ্যমে এসেছে। লজ্জাজনক ও ঘৃণ্য এহেন কাজ আমাদের লজ্জাবনত করে।

অথচ এই চোররাও তো মক্কায় হাজিবেশে ইহরামের কাপড় পরিধান করে দৃশ্যমান হজের সব আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেবে! তাদের চোখের সামনে থাকবে পবিত্র কাবাঘর ও আরাফার ময়দান। মানুষ কতটা জঘন্য মনোবৃত্তির হলে এমন কাজ করতে পারে ভাবলেই গা শিউরে উঠে। এমনিতে পকেটমারা হারাম কাজ। কারণ এর দ্বারা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়। আর প্রতারণা স্পষ্ট হারাম।

এ অপরাধমূলক কাজে হাজিবেশে সৌদি আরব যাওয়ার প্রস্তুতিকালে পকেটমারদের ৩ সদস্য পুলিশের কাছে ধরা পড়েছে বলে পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান। তারা হজ মৌসুমে সৌদি আরব গিয়ে হাজিদের পকেটমারাসহ নানা অপরাধমূলক কাজ করে থাকে। তাদের হাজিবেশে সৌদি আরব পাঠাতে আবদুল গফুর নামে একজন ১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিল। চলতি হজ মৌসুমে তার আয়ের টার্গেট ছিল নাকি ১ কোটি টাকা!

পুলিশের তরফ থেকে আরও জানানো হয় যে, এ চক্রের মোট ৬ সদস্যকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে আবদুল গফুর বিনিয়োগ ও পরিকল্পনাকারী, টুটুল বিশ্বাস গ্যাংলিডার, কাজী সারোয়ার জামাল সেকেন্ড-ইন-কমান্ড ওরফে নেতাজী। উল্লেখ্য, টুটুল বিশ্বাস সৌদি আরবে একবার গ্রেফতার হয়ে দু’বছর জেলও খেটেছিল বলে জানা যায়। গোয়েন্দা পুলিশের মতে হাজিবেশে সৌদি আরব গিয়ে পকেটমারাসহ অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত আরও ৩ থেকে ৪টি গ্রুপ রয়েছে।

পকেটমার আমাদের দেশে অনেকটা স্বাভাবিক বিষয়। হাট-ঘাট-বাজার ছাপিয়ে আমাদের দেশে ঈদের নামাজ থেকে শুরু করে শোকাবহ পরিবেশে জানাযার নামাজের সময়ও মুসল্লিদের পকেটমার হয়। একশ্রেণির সুযোগসন্ধানী মুসল্লি সেজে মানুষের পকেট সাফ করে ফেলে। মসজিদ থেকে মুসল্লিদের জুতো-ব্যাগ মেরে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটিয়ে থাকে একশ্রেণির ছেঁচড়া চোর। শোনা যায়, তাদেরও নাকি বিভিন্ন গ্রুপ রয়েছে। কিন্তু হজ মৌসুমে সৌদি তথা পবিত্র মক্কা-মদিনা শরিফ গিয়ে হাজিদের পকেট কেটে তাদের সর্বনাশ করতে হাজিবেশেই কোনো মানুষ পরিকল্পনা করে সেখানে যায় তা আগে এভাবে শোনা যায়নি। শুধু যায়ই না, এজন্য মোটা অংকের অর্থ বিনিয়োগ ও পরিকল্পনাও করা হয় বলে গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেল। এজন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়। তবে এ কাজে নিয়োজিত আরও কোনো গ্রুপ আছে কি না, এদের সবাই ধরা পড়েছে কি না, তা অবশ্য স্পষ্ট করে গোয়েন্দা পুলিশ জানায়নি।

আমরা মনে করি, হজযাত্রীদের পকেট কাটবার মতো অপরাধ যারা করে, তারা কোনো সাধারণ অপরাধী নয়। এ অপকর্মের অর্থবিনিয়োগ ও পরিকল্পনাকারী সবাই সমান অপরাধী। এদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না করতে পারলে ভবিষ্যতে আমাদের হজকার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। শুধু তাই নয়, মুসলিমবিশ্বে জাতি হিসেবে আমাদের সুনাম ক্ষুণ্ন হবারও আশঙ্কা রয়েছে।

আর্থিক ও শারীরিকভাবে সক্ষম মুসলমানদের জন্য হজ একটি অবশ্য পালনীয় ঈমানের অঙ্গ। তাই সারাবিশ্ব থেকে লাখ লাখ মুসলমান মক্কা শরিফে সমবেত হন প্রতিবছর। পবিত্র কাবা তাওয়াফসহ সাফা-মারওয়া সায়ি, মিনায় অবস্থান ও কুরবানি, আরাফার ময়দানে হজের মূল অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে ৯ জিলহজ একসঙ্গে জোহর ও আসরের নামাজ আদায়, মুজদালিফায় অবস্থান, মিনার জামারাতে পাথর নিক্ষেপ ইত্যাদি হজের অত্যাবশ্যকীয় অনুষ্ঠান। আর এসব স্থানেই ভিড় ও হুড়োহুড়ি হয় বেশি। এই ভিড়ের মধ্যে হাজি সাহেবদের পকেট মেরে দেয়া দুর্বৃত্তদের কাজ। এসব স্থানে অনেক হজযাত্রীকে সর্বস্ব খুইয়ে ভীষণ বিপদে পড়ার কথা মাঝে-মধ্যেই শোনা যায়। এমনকি অনেকের পক্ষে প্রয়োজনীয় হজের আবশ্যকীয় আনুষ্ঠানিকতাও সম্পন্ন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে সর্বস্ব খুইয়ে। যদিও সৌদি সরকারের তরফ থেকে হাজিদের সার্বিক নিরাপত্তার ব্যাপারে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেয়া হয় প্রতিবছর। এরপরও কিছু দুর্ঘটনা ঘটে যায়। বিশেষত আমাদের বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলংকা থেকে অনেক বয়স্ক লোক হজ করতে যান। আর তাদেরই পকেটমারা যায় বেশি। সমস্যায়ও পড়তে দেখা যায় বেশি এ অঞ্চলের হাজিদের। তারপর তাদের কারো পকেট মারা গেলে তা অনেকটা হয়ে পড়ে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতোই। কাজেই হাজিদের পকেট মারবার কাজে নিয়োজিতদের চিহ্নিত ও পাকড়াও করে আমাদের গোয়েন্দা পুলিশ বড় একটা দায়িত্ব সম্পন্ন করেছে। এজন্য তাদের সাধুবাদ অবশ্যই দেয়া উচিত।

হজ সম্পন্নের কাজটি বেশ কঠিন ও শ্রমসাধ্য। হাজিদের এজন্য অনেক ধৈর্যধারণ করতে হয় প্রতিটি ক্ষেত্রে। তারা যাতে পকেটমারের কবলসহ অন্য কোনো সমস্যায় না পড়েন, সেদিকে খুব খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের হজ মিশনকেও এ ব্যাপারে আরও আন্তরিক ও সহযোগিতার মানসিকতা নিয়ে হাজিদের সেবা করতে হবে। সেই সঙ্গে অনুসন্ধান অব্যাহত রাখতে হবে আরও পকেটকাটা দলের কোনো সদস্য ফাঁক-ফোকর বের করে রয়ে গেছে কি না।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘন্টা, আগস্ট ২২, ২০১৫
এমএ/

** পবিত্র কাবা শরিফের মর্যাদা
** হজে যাওয়ার আগে বান্দার হক পূরণ করে যেতে হবে
** হজের সফরে মৃত্যুবরণকারীর মর্যাদা
** হারাম শরিফে নামাজ ও তাওয়াফের ফজিলত
** হজের সফরে খরচের প্রতিদান ব্যয় অনুপাতে প্রদান করা হবে
** হজযাত্রীদের জন্য যা জানা জরুরি
** মক্কা শরিফের দর্শনীয় কিছু স্থান
** কবুল হজের জন্য যে আমল বেশি বেশি করা দরকার
** হজ ফরজ হওয়ার শর্ত ও প্রকারসমূহ
** বদলি হজ আসলে কী?

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।