ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

আত্মঘাতী জাহান্নামি

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় প্রধান, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪০ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৫
আত্মঘাতী জাহান্নামি ছবি: প্রতীকী

পবিত্র ধর্ম ইসলামে আত্মহত্যা নিষিদ্ধ। যিনি নিজেই নিজের প্রাণ বিনাশ করেন, তিনি আত্মঘাতক কিংবা আত্মঘাতী।

আত্মঘাতকদের কেউ কেউ বিভিন্ন উপায়ে এক বা একাধিক ব্যক্তিকে হত্যার জন্য নিজের জীবনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। কিংবা নিজেই এক ধরনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইতিহাসে বেশ কিছু নৃশংস আত্মঘাতী হামলার উদাহরণ রয়েছে। হাল সময়ে আত্মঘাতী হামলার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে আত্মঘাতী হামলা বেড়েছে।

সর্বশেষ সৌদি আরবে শিয়াদের একটি মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের সময় ওই মসজিদে হামলা হয়। সৌদি আরবের কাতিফ প্রদেশের একটি গ্রামে ইমাম আলী মসজিদে এ হামলার ঘটনা ঘটে। সৌদি আরবে কোনো শিয়া মসজিদে এটি প্রথম হামলার ঘটনা।

আত্মঘাতী হামলা ও আত্মহত্যা প্রসঙ্গে ইসলামের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। ইসলাম ধর্ম কোনো অবস্থাতেই এমন কাজ করার অনুমতি দেয়নি। ইসলামের দৃষ্টিতে যে কোনো অবস্থায় কোনো মানুষ আত্মহত্যা করলে তার পরিণাম হবে জাহান্নাম। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তার সঙ্গে জিহাদে অংশগ্রহণকারী এক আত্মঘাতী সাহাবীকেও জাহান্না‍মি বলে ঘোষণা করেছেন মর্মে বর্ণনা পাওয়া যায়।
 
আত্মঘাতী হামলা ও আত্মহত্যা প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা নিজেদের জীবনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না। মানুষের সঙ্গে সদাচরণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সদাচরণকারীদের ভালোবাসেন। ’ -সূরা বাকারা : ৯৫

উল্লেখিত আয়াতে কারিমায় আল্লাহতায়ালা আত্মহত্যাকে চিরতরে হারাম ঘোষণা করেছেন। এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (‍সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে এক ব্যক্তি আঘাতের ব্যাথা দুঃসহ বোধ করে আত্মহত্যা করে। দয়মায় আল্লাহতায়ালা তার সম্পর্কে বলেন, আমার বান্দা আমার নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই নিজের জীবনের ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করলাম। ’-সহিহ বোখারি : ১/১৮২

আরেক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লৌহাস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করে জাহান্নামে তাকে লৌহাস্ত্র দ্বারা সর্বক্ষণ শাস্তি দেওয়া হবে। ’ –সহিহ বোখারি : ১/১৮২‍

প্রখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে এক যুদ্ধে ছিলাম। তিনি ইসলামের দাবীদার এক ব্যাক্তিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, এ ব্যক্তি জাহান্নামী। অথচ যখন যুদ্ধ শুরু হল; তখন সে লোকটি ভীষণ বীর বিক্রমে যুদ্ধ করল এবং আহত হল। তখন বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! যে লোকটি সর্ম্পকে আপনি বলেছিলেন সে লোকটি জাহান্নামী আজ সে ভীষণ যুদ্ধ করেছে এবং মারা গেছে। হাদিস বর্ণনাকারী বলেন, এ কথার ওপর কারো কারো অন্তরে এ বিষয়ে সন্দেহ সৃষ্টি উপক্রম হয় এবং তারা এ সম্পর্কিত কথাবার্তায় রয়েছেন। এ সময় খবর এলো লোকটি মারা যায়নি বরং মারাত্বকভাবে আহত হয়েছে। যখন রাত হলো সে আঘাতের কষ্টে ধৈর্যধারণ করতে পারল না এবং আত্মহত্যা করল। তখন নবী (সা.)-এর নিকট এ সংবাদ পৌছান হল। তিনি বলে উঠলেন, আল্লাহু আকবার। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি অবশ্যই আল্লাহর বান্দা ও তার রাসূল। অতঃপর নবী (সা.) হজরত বেলাল (রা.) কে আদেশ করলেন, তখন তিনি লোকেদের মধ্য ঘোষণা দিলেন যে, মুসলিম ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। আর আল্লাহতায়ালা এই দ্বীনকে মন্দ লোকদের দ্বারাও সাহায্য করেন। ’ –সহিহ বোখারি : ১/৪৩০

উল্লিখিত কোরআনে কারিমের আয়াত ও হাদিসের আলোচনা দ্বারা আত্মহত্যা ও আত্মঘাতী হওয়ার বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হয়ে গেছে। ইসলাম এমন কাজ থেকে মানুষকে বিরত থাকতে আদেশ দিয়েছে। সেই সঙ্গে এ কাজের কঠিন শাস্তির কথাও ব্যাপক আকারে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, আত্মহত্যাকারী কিংবা আত্মঘাতী নিঃসন্দেহে জাহান্নামি।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪২ ঘন্টা, মে ২৩, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।