ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

বেওয়ারিশ লাশ দাফনের বিধান

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১১ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৫
বেওয়ারিশ লাশ দাফনের বিধান

বেওয়ারিশ শব্দের অর্থ- অভিভাবকহীন, স্বত্বাধিকারশূণ্য ও দাবীদার নেই এমন। জন্মগতভাবে কোনো মানুষ ‘বেওয়ারিশ’ না হলেও ‘বেওয়ারিশ লাশ’ শব্দের সঙ্গে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত।

সহযোগী এক পত্রিকার প্রতিবেদনে জানা গেছে, প্রতিবছর শুধু রাজধানীতে ‘বেওয়ারিশ’ পরিচয়ে দাফন হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার মৃতদেহ।

রেওয়ারিশ লাশ দাফনে সংশ্লিষ্ট সংস্থা আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের সূত্রে হিসাবটি প্রকাশ করা হয়েছে। আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম অবশ্য দাফনকৃত প্রতিটি বেওয়ারিশ লাশের হিসাব সংরক্ষণ করে।

অনেক সময় বেওয়ারিশ লাশের ধর্ম পরিচয় পাওয়া যায় না। অথবা এমন কোনো দৃশ্যমান চিহ্নও পাওয়া যায় না, যা থেকে বুঝা যায় সে এই ধর্মের বা ওই ধর্মের। এমন বেওয়ারিশ লাশ দাফনের পদ্ধতি কী হতে পারে? যখন তাকে চেনার কোনো উপায় থাকে না যে সে মুসলমান, নাকি ভিন্ন ধর্মের?

উদ্ভুত এ সমস্যার ক্ষেত্রে আলেমরা বলেন, বেওয়ারিশ ওই লাশের মুসলিম হওযার বাহ্যিক কোনো নিদর্শন পাওয়া গেলে যেমন নাম পোশাক ইত্যাদি কিংবা শারীরিক নিদর্শন যেমন- খতনা ইত্যাদি থাকলে মুসলমানের লাশের মতো আচরণ করতে হবে। অর্থাৎ মুসলমানের লাশের মতই গোসল দিবে এরপর কাফন-জানাযা শেষে মুসলমানদের কবরস্থানেই দাফন করবে।

আর যদি মুসলিম হওয়ার বাহ্যিক বা শারীরিক কোনো নিদর্শনই পাওয়া না যায় তাহলে মুসলমানদের এলাকায় এ ধরনের লাশ পাওয়া গেলে তাকেও মুসলমান গণ্য করা হবে এবং মুসলমানের লাশের মতোই গোসল-জানাযা ও দাফন করবে।
 
আর যদি এ ধরনের নিদর্শনহীন লাশ অমুসলিমদের এলাকায় পাওয়া যায় তাহলে সেক্ষেত্রে তাকে গোসল দিয়ে কাফন পরাবে। তবে তার জানাযা পড়বে না। অতপর অমুসলিমদের কবরস্থানে তাকে দাফন করবে, কিংবা ওই এলাকার ধর্ম বিশ্বাস মতে লাশের সৎকার করবে। -সূত্র : আলবাহরুর রায়েক- ২/১৭৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া- ১/১৫৯

বস্তত মুসলমানদের মৃতদেহ কিংবা লাশ দাফনের পদ্ধতি বিশদভাবে ইসলামি শরিয়তে নির্দেশিত আছে। মরদেহকে যথাযথ নিয়মে গোসল দেওয়ার পর কাফন পরানো হয়। তারপর তা কবরে নিয়ে যাওয়া হয়। ২-৩ জন ব্যক্তি কবরে নেমে লাশ গ্রহণ করে এবং মাটিতে শুইয়ে দেয়। বাংলাদেশে লাশের মাথা উত্তরে এবং পা দক্ষিণে রেখে লাশ মাটিতে শোয়ানো হয়। মরহুমের মুখমণ্ডল পশ্চিমমুখী করে দেওয়া হয়, চোখ খোলা থাকলে তা চেপে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কাফনের কাপড় আটকে রাখার জন্য মাথার কাছে, পায়ের কাছে এবং পেট বরাবার লাগানো ফিতায় দেওয়া গেরোসমূহ খুলে দেওয়া হয়। কবরের মাটিতে লাশ নামানোর সময় উচ্চারণ করা হয়- ‘বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ। ’

এরপর বাঁশের টুকরা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। তার ওপর বাঁশের চাটাই বিছিয়ে লাশের গায়ে মাটি পড়ার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পর ধীরে ধীরে মাটি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। কবরে মাটি দেওয়ার সময় সমবেতভাবে যে দোয়া পাঠ করা করা হয়- ‘মিনহা খালাকনা কুম ওয়া ফিহা নুয়িদুকুম, ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তারাতান উখরা’- এর সারমর্ম হলো- ‘এই মাটি থেকে তোমার সৃষ্টি, এই মাটিতেই তোমার প্রত্যাবর্তন এবং এই মাটি থেকেই তোমার পুনরুত্থান। ’
সাধারণভাবে একজন মুসলমানের কবর দেওয়ার পদ্ধতি এই। প্রত্যেক মানুষই চায় তার স্বজনদের শেষ বিদায় জানাতে, আপনজনের কবরে মাটি দিতে। তার কবরের পাশে গিয়ে ক্ষণিকের জন্য হলেও বসে আর আত্মার মাগফিরাত কামনা করতে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ কিংবা বন্যার কারনে কোনো মৃতদেহ দাফন করতে না পারলে তা নদীতে বা সাগরে ভারী বস্তুর সঙ্গে বেঁধে ডুবিয়ে দেওয়ার বিধান রয়েছে।

বিভিন্ন সময়ে বেওয়ালিশ হিসেবে উদ্ধার হওয়া মৃতদেহগুলো যাদেরই হোক না কেন, তারা কারও বাবা-মা, কারও সন্তান, কারও ভাই-বোন বা স্বজন। বেওয়ারিশ পরিচয় হলেও মৃতদেহের কোনো অসম্মান ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলামি শরিয়তের নির্দেশনা হলো- স্বাভাবিকভাবে মৃত কিংবা নিহত কোনো ব্যক্তির মৃতদেহকে সম্মান দেখাতে হবে। নিহত ব্যক্তি মুসলিম, খ্রিস্টান বা অন্য কোনো ধর্মের হয়ে থাকলেও কিংবা নাস্তিক হলেও তার দেহের অসম্মান করা ইসলাম সম্মত নয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘন্টা, মে ১৩, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।