ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

জাপানেও বাড়ছে মসজিদ

তাজকিরা খাতুন, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৫
জাপানেও বাড়ছে মসজিদ সংগৃহীত

জাপানের রাজধানী টোকিও। এই টোকিওর উল্লেখযোগ্য একটি স্থাপনা হলো, ‘টোকিও জামে মসজিদ।

’ নির্মাণশৈলীর বিবেচনায় মসজিদটি একটি চমৎকার দর্শনীয় স্থান। তুর্কি নকশায় রাজধানীর টোকিওর ইয়োগি ইউহেরা অঞ্চলে ২০০০ সালে মসজিদটির বর্তমান কাঠামো নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ হয়। টোকিও জামে মসজিদটি জাপানের অন্যতম একটি বিশিষ্ট মসজিদ।

জাপানে মসজিদ নির্মাণের রয়েছে অনেক লম্বা ইতিহাস। ভারতীয় মুসলিম অভিবাসীরা ১৯৩১ সালে ‘নাগোয়া মসজিদ’ এবং ১৯৩৫ সালে ‘কোবে মসজিদ’ নির্মাণ করেন। রাশিয়ায় বিপ্লব সংঘটিত হলে সেখান থেকে তাতার মুসলিমরা পালিয়ে জাপানে আসে এবং পরে এখানে একটি বৃহত্তম জাতিগত গ্রুপ তৈরি করে। ১৯৩৮ সালে তারা টোকিওর মূল মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত করে। মসজিদটি নির্মাণে শুধু জাপান সরকারই সহায়তা করেনি, জাপানি অনেক কোম্পানিও আর্থিকভবে সাহায্য করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বিশ্বখ্যাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মিতসুবিশি।

মসজিদটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাপান এবং মুসলিম বিশ্বের বিশিষ্টজন ও কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন। জাপানে মুসলমানের সংখ্যা কত তার সরকারি কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে এ সংখ্যা ৭০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার বলে ধারণা করা হয়। মুসলমানদের ১০ শতাংশই জাপানি বংশোদ্ভূত। জাপানে লোকসংখ্যা প্রায় ১২ কোটি ৭০ লাখ। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার হিসেবে গত বিশ বছরে জাপানে অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

২০১১ সালে বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা ২০ লাখের বেশিতে দাঁড়িয়েছে। এসব বিদেশি শ্রমিকের মধ্যে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে আসা অনেক মুসলমানও রয়েছেন।

১৯৭০ সালের দিকে টোকিওতে মসজিদের সংখ্যা ছিল মাত্র দু’টি। এখন এখানে ২০০টি মসজিদ ও মুসাল্লা (অস্থায়ী নামাজঘর) আছে। জাপানে কবে ইসলামের আলো প্রবেশ করেছে সে ইতিহাস অনেকটাই অজানা।  

ধারণা করা হয়, অষ্টম শতাব্দীতেই জাপানে ইসলামের বাণী পৌঁছেছে। তবে মেইজি শাসনামলে (১৮৬৮-১৮৯০) জাপান যখন বিশ্বব্যাপী তাদের উপস্থিতির অংশ হিসেবে ওসমানীয় সাম্রাজ্য এবং মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে বাণিজ্য ও তথ্যবিনিময় মিশন শুরু করে, তখন থেকেই তারা ইসলাম ও মুসলমানদের সংস্পর্শে আসতে শুরু করে। কারণ, মুসলমানদের ইতিহাস যেটুকু পাওয়া যায়, তা এ সময় থেকেই।

১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে ওসাকাতেও একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শিল্পের উন্নতির জন্য তেল উৎপাদনকারী মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক আরও উন্নত গয়। ফলে জাপানে মুসলমানদের যাতায়াত বাড়তে থাকে। জাপানী অধিবাসীরাও মুসলিম দেশসমূহে আসে। সংস্কৃতির এমন আদান-প্রদানের ফলে জাপানে ইসলামের প্রসার দ্রুত হয়। এ সময় জাপানী মুসলমানরা কিছু সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। জাপানী ভাষায় পবিত্র কোরআনের কয়েকটি অনুবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত হয় ইসলামি তথ্য সমন্বিত বিভিন্ন গ্রন্থ।

১৯৬৬ খিস্টাব্দে জাপানে ইন্টারন্যাশানাল ইসলামিক সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়। ইসলামিক সেন্টার ‘আস সালাম’ নামে একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকাও বের করে। এছাড়া সেন্টারের পক্ষ থেকে জাপানী শিশুদের প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা ও হজ গমনে ইচ্ছুকদের হজে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। এই সেন্টারকে কেন্দ্র করেই জাপানে দাওয়াতে তাবলিগের কাজ চলছে বেশ জোরালোভাবে।

এখন অবশ্য তাবলিগ জামাতের লোকেরা টোকিওর শহরতলী এলাকা সাইতামা’র (saitama) একটি ভবন বিনে সেখানে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছেন। বর্তমানে সেটাই তাবলিগের মারকাজ জিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

জাপানের বর্তমান মুসলমান প্রজন্ম জাপানে ইসলামের প্রচার ও প্রসারের বেশ আন্তরিক। নানা প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে তারা কাজ করে যাচ্ছে আপন গতিতে। তাদের প্রত্যাশা অচিরেই জাপানে অন্যান্য দেশের মতো ইসলাম জনপ্রিয় ও প্রভাব বিস্তারকারী ধর্মে পরিণত হবে। বাড়বে মসজিদের সংখ্যা। যে মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসবে আজানের সুর।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘন্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।