ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

শিশুর মানসিক বিকাশে প্রিয় নবী (সা.)

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৫
শিশুর মানসিক বিকাশে প্রিয় নবী (সা.)

দেশের সার্বিক উন্নয়ন মূলত নির্ভর করে মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপর। মানবজাতির সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হচ্ছে শিশু।

আর শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়নের ভিত্তি তৈরি হয়। শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য জাতিসংঘ ‘শিশু অধিকার সনদ’-এর ২৭ নম্বর ধারায় প্রতিটি শিশুর শারীরিক, মানসিক, আত্মিক, নৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য তাদের পর্যাপ্ত মানসম্মত জীবনযাপনের অধিকার অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে।

মা-বাবা শিশুর শারীরিক সুস্থতা ও বৃদ্ধির দিকটা যতটা গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, তার মানসিক বিকাশের দিকটায় তত গুরুত্ব দেন না। কিন্তু শিশুর বিকাশের আছে দু’টি দিক- শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ। শারীরিক বৃদ্ধি বলতে শিশুর দৈহিক পরিবর্তন ও আকারের বৃদ্ধিকে বোঝায়। আর মানসিক বিকাশ হচ্ছে শিশুর বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যবহার, বুদ্ধিমত্তা, আচরণ, ভাষার প্রকাশ, বোধশক্তি, অনুভূতি, ভাবের আদান-প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে পরপর দক্ষতা বৃদ্ধি পাওয়া।

শিশুর আদর, স্নেহ, তার সঙ্গে কথা বলা, খেলা করা, গান-ছড়া-গল্প শোনানো, তার সঙ্গে ভালো আচরণ করা, আনন্দ দান ইত্যাদির মাধ্যমে শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটে। পক্ষান্তরে তাকে শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দেওয়া, ভয় দেখানো, ধমক দেওয়া বা তাকে অবহেলা করা হলে তার আবেগিক, সামাজিক ও মেধাগত দক্ষতার বিকাশ ব্যাহত হয়।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য তাদের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করেছেন, তা হাদিসে বর্ণিত আছে। শিশুর উত্তম ও যুগোপযোগী শিক্ষাদানের লক্ষ্যে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের সন্তানদের উত্তমরূপে জ্ঞানদান করো। কেননা তারা তোমাদের পরবর্তী যুগের জন্য সৃষ্ট। ’ –মুসলিমৎ

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) একবার হাসান ইবনে আলীকে চুম্বন করেন। ওই সময় তার কাছে আকরা ইবন হাবিস তামিমি (রা.) বসা ছিলেন। আকরা ইবনে হাবিস (রা.) বললেন, আমার ১০টি পুত্র আছে, আমি তাদের কাউকেই কোনোদিন চুম্বন করিনি। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তার দিকে তাকালেন, তারপর বললেন, যে দয়া করে না, তাকে দয়া করা হয় না। -বোখারি ও মুসলিম শরিফ

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) শিশুদের খুব ভালোবাসতেন। তাদের নিজের সন্তানের মতো আদর করতেন। নামাজে থাকা অবস্থায় কোনো শিশু কাঁদলে তিনি নামাজ সেরে শিশুর কাছে ছুটে যেতেন। তিনি চাইতেন, শিশুরা যেন না কাঁদে। তারা যেন কষ্ট না পায়। শিশুদের মনের চাহিদা মেটাতে তিনি ছিলেন অত্যন্ত যত্নশীল। শিশুদের শারীরিক নির্যাতন না করে তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষাদানের কথা বলতে গিয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা সন্তানদের স্নেহ করো, ভালো ব্যবহার করো তাদের সঙ্গে এবং ভালো ব্যবহার ও শিষ্টাচার শিক্ষা দাও। -তিরমিজি শরিফ

মেয়েকে অবহেলা করে ছেলেকে অধিক গুরুত্বদান ইসলামে নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারটি শিশু সন্তানকে আদর করার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সব সন্তানের প্রতি সমান ব্যবহারের একটি ঘটনা হাদিসে উল্লিখিত হয়েছে। হজরত আনাস ইবন মালেক (রা.) বর্ণনা করেছেন, এক সাহাবি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে বসে ছিলেন। তার শিশুপুত্র তার কাছে এলে ওই সাহাবি তাকে চুমু দিয়ে কোলে বসালেন। পরক্ষণেই তার একটি মেয়ে এলে তিনি মেয়েটিকে সামনে বসিয়ে দিলেন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) খুশি হলেন না এবং তাকে বললেন, ‘উভয়ের মাঝে সমান আচরণ করা কি তোমার উচিত ছিল না!’

কোনো শিশু দুষ্টুমি করলেও হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে কড়া শাসন না করে হাসিমুখে শোধরানোর কৌশল বের করতেন। এই ছিল হজরত রাসূলুল্লাহের (সা.) শিশুপ্রীতি, শিশুর প্রতি তার দৃষ্টি। অথচ হাল জমানায় শিশুশ্রমসহ শিশুদের দিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজ করাতে আমরা কুণ্ঠাবোধ করছি না। এটা ইসলামের শিক্ষা নয়, প্রিয় নবীর (সা.) আদর্শ নয়। ‍

শিশুরা দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের যদি সুন্দর করে গড়ে তোলা যায়, তাহলে ভবিষ্যৎ পৃথিবী হবে আরও সুন্দর। তাই সব শিশুই যেন সুখে থাকে, সেভাবেই আমাদের কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে। এটাই হোক আজকের শিশু দিবসের অঙ্গিকার।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৮ ঘন্টা, মার্চ ১৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।