ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ আষাঢ় ১৪৩১, ১৮ জুন ২০২৪, ১০ জিলহজ ১৪৪৫

ইসলাম

ঘূর্ণিঝড়-প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ সম্পর্কে কোরআন-হাদিসে যা বলা হয়েছে 

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৩ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২৪
ঘূর্ণিঝড়-প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ সম্পর্কে কোরআন-হাদিসে যা বলা হয়েছে 

পৃথিবীতে প্রাকৃতিক নিয়মেই ঝড়, বৃষ্টি মহামারি এবং বিভিন্ন দুর্যোগ আসে। মহান রাব্বুল আলামিনই সব কিছুর মালিক।

তার নির্দেশেই এইসব কিছুই হয়ে থাকে।

মহামারি ও ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা মানুষকে সতর্ক করতে পবিত্র কোরআনুল কারিমের একাধিক আয়াত নাজিল করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ

অর্থ: ‘স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে’। (সূরা: রূম, আয়াত: ৪১)


আল্লাহ রাব্বুল আরামিন আরো বলেন, وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوفْ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الأَمَوَالِ وَالأنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ


অর্থ: ‘এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের’। (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৫৫)


প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, মহামারি দেখা দিলে প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) বিচলিত হতেন। তিনি আল্লাহর আজাব-গজবকে ভয় করতেন। তিনি সাহাবিদের এসব আজাব-গজব থেকে মুক্ত থাকতে দিক-নির্দেশনাসহ তাওবাহ-ইসতেগফারের পরামর্শ দিতেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মহামারি আসার কারণ বর্ণনায় হাদিসের ঘোষণা:


রাসূলুল্লাহ (সা.) এসব মহামারি, ঘূর্ণিঝড়সহ যাবতীয় বিপদ-আপদ কেন হয়, সে সম্পর্কে সাহাবাদের কাছে বর্ণনা করেছেন। এমন কিছু কাজ আছে যেসব কাজের কারণে আল্লাহ তাআলা মানুষের ওপর দুর্যোগ-মহামারি চাপিয়ে দেন। হাদিসে এসেছে- হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের দিকে এগিয়ে এসে বললেন, ‘হে মুহাজিরা! তোমরা ৫টি বিষয়ে পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। তবে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যেন তোমরা তার সম্মুখীন না হও। আর তাহলো-


(১) যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন মহামারি আকারে (নতুন-নতুন) প্লেগরোগের প্রাদুর্ভাব হয়, যা আগের লোকদের মধ্যে কখনও দেখা যায়নি।


(২) যখন কোনো জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে তখন তাদের ওপর নেমে আসে দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ-মুসিবত।


(৩) আর যখন কোনো জাতি জাকাত আদায় করে না, তখন আসমান থেকে বৃষ্টিবর্ষণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদি জমিনে চতুষ্পদ জন্তু ও নির্বাক প্রাণী না থাকতো তবে আর কখনও বৃষ্টিপাত হতো না।


(৪) যখন কোনো জাতি আল্লাহ ও তার রাসূলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তখন আল্লাহ তাদের ওপর বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করে দেন। আর তারা (শাসকবর্গ মানুষের) সহায় সম্পদ কেড়ে নেয়।


(৫) আর যখন তোমাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব মোতাবেক মীমাংসা করে না এবং আল্লাহর নাজিলকৃত বিধান গ্রহণ করে না, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ লাগিয়ে দেন। (ইবনে মাজাহ)।


উল্লেখিত পবিত্র কোরআনের আয়াত ও হাদিসের দিক-নির্দেশনা প্রমাণ করে যে, মানুষের গুনাহের কারণেই দুনিয়াতে বিভিন্ন রকম বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে। এ বিপর্যয় কখনো সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, জমিনে ঝড়-তুফান, অজানা মহামারি, রোগ-ব্যধি, অন্যায়ভাবে যুদ্ধ-বিগ্রহ তৈরি করে দেয়।


এ থেকে উত্তরণে একমাত্র উপায় হলো- দুনিয়ায় যাবতীয় অন্যায় কাজ ছেড়ে দিয়ে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার দিকে ফিরে আসা। বেশি বেশি তাওবাহ ইসতেগফার করা। মানুষের অধিকারের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া। তবেই মহান আল্লাহ এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ সব বিপদ-আপদ থেকে হেফাজত করবেন। তাই মহান আল্লাহর কাছে তার আজাব থেকে বাঁচতে প্রথমেই অন্যায়মূলক সব গোনাহের কাজ ছেড়ে দেওয়া আবশ্যক।

ইয়া আল্লাহ! আপনি আমাদের দেশসহ সারা বিশ্ববাসীকে দুনিয়ার সব বিপর্যয় থেকে হেফাজতে রাখুন ও হেদায়েত দান করুন। আমিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৩ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২৪
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।