ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

আল্লাহর জন্য ভালোবাসার প্রতিদান

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪২ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২৩
আল্লাহর জন্য ভালোবাসার প্রতিদান

কোনো ধরনের স্বার্থ ছাড়া কাউকে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালোবাসা ইবাদতের শামিল। পরিপূর্ণ ইখলাস নিয়ে কারো উপকার করা, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তার কল্যাণকামী হওয়া, সুপথ দেখানো মুমিনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

মুমিন একে অপরকে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় ভালোবাসে। এতে ইহকাল-পরকাল উভয় জাহানের কল্যাণ পাওয়া যায়। নিম্নে কাউকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসার ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণগুলো তুলে ধরা হলো—

ইহকালীন কল্যাণ
এটি প্রকৃত ঈমানদার বানায় :
প্রকৃত মুমিনের অন্যতম গুণ হলো তারা আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবাসবে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কসম সেই সত্তার যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না মুমিন হও। আর তোমরা মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয় অবহিত করব না, যা করলে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তা হলো, তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও।
(আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৯৩)

পরস্পর ভ্রাতৃত্বের বন্ধন মজবুত হয় : আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবাসলে সেখানে কোনো পাওয়া না পাওয়ার হিসাব থাকে না। সেখানে থাকে শুধু আন্তরিকতা ও কল্যাণকামিতা, যা মানুষের বন্ধনকে মজবুত করে।

আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়া যায় : আল্লাহর জন্য অন্যকে ভালোবাসলে আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়া যায়। মুয়াত্তায়ে ইমাম মালেক নামক গ্রন্থে ইমাম মালেক (রহ.) থেকে এককভাবে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিস আছে, যার একাংশে তিনি বলেন, আবু ইদরিস খাওলানি (রহ.) থেকে বর্ণিত, আমি দামিশকের মসজিদে প্রবেশ করলাম।

সেখানে জনৈক যুবককে দেখলাম, তার দাঁতগুলো অতি উজ্জ্বল সাদা (মুক্তার মতো)। তার সঙ্গে অনেক মানুষ ছিল। যখনই কোনো ব্যাপারে মতবিরোধ হতো, উক্ত যুবকের কথাকেই সনদ (নির্ভরযোগ্য) বলে গণ্য করা হতো এবং তার কথার ওপরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতো। আমি (আবু ইদরিস) লোকের কাছে জিজ্ঞেস করলাম, এই যুবকটি কে? তারা বলল, ইনি হলেন মুআজ ইবনে জাবাল (রা.)। পরদিন প্রাতঃকালে আমি (মসজিদে) গিয়ে দেখি যে, তিনি (মুআজ ইবনে জাবাল) আমার আগেই সেখানে পৌঁছেছেন এবং নামাজ পড়ছেন।

আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম। তিনি নামাজ আদায় শেষ করলে আমি তার সম্মুখে গিয়ে পৌঁছলাম। অতঃপর তাকে সালাম করে বললাম, আল্লাহর কসম! আমি আপনাকে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালোবাসি। তিনি বলেন, আল্লাহরই জন্য? আমি বললাম, হ্যাঁ, আল্লাহরই জন্যই। তিনি (পুনরায়) বলেন, আল্লাহরই জন্য? আমি বললাম, হ্যাঁ, আল্লাহরই জন্য। অতঃপর তিনি আমার চাদরের এক কোনা ধরে (আমাকে) নিজের দিকে টানলেন এবং বলেন, আনন্দিত হও! আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে শুনেছি, তিনি বলছিলেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার ভালোবাসা সেই সমস্ত লোকের জন্য ওয়াজিব হয়েছে, যারা আমার (সন্তুষ্টির) জন্য পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসে, আমারই জন্য একত্রে বসে, আমারই জন্য একে অন্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং আমারই জন্য একে অন্যের জন্য খরচ করে। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদিস : ১৭২১)

ফেরেশতাদের দোয়া পাওয়া যায় : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, এক ব্যক্তি তার ভাইয়ের সাক্ষাতের জন্য অন্য এক গ্রামে গেল। আল্লাহ তাআলা তার জন্য পথিমধ্যে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করলেন। সে ব্যক্তি যখন ফেরেশতার কাছে পৌঁছল, তখন ফেরেশতা জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোথায় যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছ? সে বলল, আমি এ গ্রামে আমার এক ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য যেতে চাই। ফেরেশতা বলেন, তার কাছে কি তোমার কোনো অবদান আছে, যা তুমি আরো প্রবৃদ্ধি করতে চাও? সে বলল, না। আমি তো শুধু আল্লাহর জন্যই তাকে ভালোবাসি। ফেরেশতা বলেন, আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে (তাঁর দূত হয়ে) তোমার কাছে অবহিত করার জন্য এসেছি যে, আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসেন, যেমন তুমি তোমার ভাইকে তাঁরই সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ভালোবাসো। (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৪৩)

পরকালীন কল্যাণ
পরকালে একসঙ্গে থাকবে : হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে। আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, মানুষ যাকে ভালোবাসবে সে তারই সঙ্গী হবে। (বুখারি, হাদিস : ৬১৬৮) 

অতএব যারা আল্লাহওয়ালাদের আল্লাহর জন্য ভালোবাসবে, তারা পরকালে সেই নেককার বান্দাদের সঙ্গে জান্নাতে থাকবে।

কিয়ামতের দিন আরশের ছায়ায় আশ্রয় : রাসুল (সা.) বলেন, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ বলবেন, আমার মহত্ত্বের কারণে একে অপরের প্রতি
ভালোবাসা স্থাপনকারীরা কোথায়? আজ আমি তাদের আমার বিশেষ ছায়ায় আশ্রয় দেব। (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৪২)

আখিরাতে উচ্চ মর্যাদা লাভ : রাসুল (সা.) বলেন, মহাসম্মানিত পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেন, ‘আমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যারা পরস্পরকে ভালোবাসে, তাদের জন্য (পরকালে) থাকবে নূরের মিম্বার, যা দেখে নবী ও শহীদরা ঈর্ষা করবেন। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯০)

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।