ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

রানি এলিজাবেথকে সরিয়ে দিচ্ছে বারবাডোজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২১
রানি এলিজাবেথকে সরিয়ে দিচ্ছে বারবাডোজ

একসময়ের ব্রিটিশ উপনিবেশ বারবাডোজ আগামী সপ্তাহে রানি এলিজাবেথকে তাদের রাষ্ট্রপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দিতে যাচ্ছে। এর ফলে দেশটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রায় ৪০০ বছরের ঔপনিবেশিক সম্পর্কের অবসান হতে চলেছে।

বুধবার (২৪ নভেম্বর) বার্তা সংস্থা রয়টার্সসহ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

আগামী সপ্তাহেই হেড অব স্টেট পদ থেকে রানি এলিজাবেথের নাম বাদ দেওয়া হবে। সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশটির এই সিদ্ধান্ত ব্রিটিশ প্রভাব থাকা অন্য দেশগুলোকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

১৯৬৬ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে বারবাডোজ। দেশটিতে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, গভর্নর জেনারেলের মতো পদ রয়েছে। এরপরেও হেড অব স্টেট বা রাষ্ট্রপ্রধানের পদে ছিল ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথের নাম। স্বাধীনতা লাভের প্রায় ৫৫ বছর পর শাসন ব্যবস্থায় এই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বারবাডোজ। আগামী সপ্তাহে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রজাতন্ত্র হিসেবে আবির্ভূত হবে দেশটি।

১৯৭৭ সালের অক্টোবরে বারবাডোজে গার্ড অব অনার নিচ্ছেন রানি এলিজাবেথ।

লন্ডন কিংস কলেজের অধ্যাপক রিচার্ড ড্রাইটন বলেন, পৃথিবীর বুকে নতুন একটি ইতিহাস হতে চলেছে এটি। ব্রিটিশদের ঔপনিবেশিক শাসন যে কয়টি জায়গায় সবচেয়ে প্রবল ছিল তার মধ্যে অন্যতম বারবাডোজ। বলা চলে এই অঞ্চলটি দাস ব্যবসার অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। আফ্রিকা থেকে কৃষ্ণাঙ্গদের ধরে এনে ক্যারিবিয়ানসহ আশপাশের অঞ্চলগুলোয় তাদের সরবরাহ করা হতো। তাই বারবাডোজের মানুষের মধ্যে এ নিয়ে ক্ষোভটাও বেশি।

১৬২৫ সালে একটি মাত্র জাহাজ প্রবেশের মধ্যে দিয়ে বারবাডোজে শুরু হয় ব্রিটিশ শাসন। আফ্রিকা থেকে কৃষ্ণাঙ্গ দাস এনে আখ চাষ করানোই ছিল ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য। ২০০ বছরের মাথায় ছয় লাখ আফ্রিকান দাসের ঠাঁই হয় বারবাডোজে।

অধ্যাপক রিচার্ড ড্রাইটন মনে করছেন, এখনও যেসব স্বাধীন দেশে ব্রিটিশ রানির পদ রয়েছে সেসব দেশ বারবাডোজের পথ অনুসরণে আগ্রহী হতে পারে।

তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা কিংবা নিউজিল্যান্ড—এমন অনেক দেশ আছে যেখানে হেড অব স্টেটের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন ব্রিটিশ রানি। এসব দেশে অনেক দিন ধরেই ব্রিটিশ প্রভাবমুক্ত হওয়ার বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে।

গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে বারবাডোজের প্রধানমন্ত্রী মিয়া আমোর মোটলিকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন ব্রিটেনের চার্লস, প্রিন্স অব ওয়েলস।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক হিলারি বেকলস বলেন, রানির নাম ছেঁটে ফেলা বারবাডোজের পাশাপাশি ক্যারিবীয় অঞ্চল এবং উত্তর-ঔপনিবেশিক সব সমাজের জন্য ঐতিহাসিক ক্ষণ। এই দ্বীপের জনগণ কেবল স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রাম করেনি। সংগ্রাম করেছে নিজেদের ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদীদের অত্যাচার থেকে মুক্ত হতে।

বারবাডোজের আগে রাষ্ট্রপ্রধানের জায়গা থেকে রানি এলিজাবেথের নাম বাতিল করে ভারত মহাসাগরে অবস্থিত ক্ষুদ্র দ্বীপ দেশ মরিশাস। সেটিও প্রায় ৩০ বছর আগে। তবে এমন এক সময়ে ক্যারিবীয় দ্বীপ দেশটি তাদের মাথার ওপর থেকে রানিকে সরিয়ে দিতে যাচ্ছে, যখন ব্রিটিশ রাজপরিবারও এলিজাবেথের প্রায় ৭০ বছরের রাজত্ব শেষে প্রিন্স চার্লসের অভিষেকের দিন গুণছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, আগামী ২৯ নভেম্বর স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে ব্রিজটাউনের ন্যাশনাল হিরোজ স্কয়ারে এক অনুষ্ঠানে বারবাডোজের প্রজাতন্ত্রে পদার্পণের ঘোষণা আসবে। এরপর প্রেসিডেন্ট হয়ে এলিজাবেথের জায়গায় রাষ্ট্রপ্রধান পদে বসবেন সান্দ্রা ম্যাসন। তিনি এখন দেশটির গভর্নর জেনারেল পদে আছেন। অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ব্রিটিশ সিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকার প্রিন্স চার্লসের বারবাডোজে যাওয়ার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২১
এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।